কি দেখলাম জগতে- প্রশ্ন মানবতার কাছে

ড. হাকিম অক্টোবর ৩১, ২০১৯, ০২:৩২ পিএম

একমুঠো ভাতের জন্য, সন্তানদের দুধের পয়সার জন্য ইজ্জত বিক্রি করছে তার মা। মাথা গোঁজার ঠঁইয়ের জন্য আশ্রয় নিচ্ছে কোন বাড়ি, অফিস বা রাস্তায়। রাতের অন্ধকারে ইজ্জত নিচ্ছে আশ্রয়দাতা। প্রতিবাদ করতে পারছে না তারা। বস্তিতে ভিজছে ভাসমান মানুষগুলো, রাজপথের ধারে বেঁধেছে ওরা বাসা। ওদের যুবতী মেয়েরা ফটপাতের ধারে লুটিয়ে দিচ্ছে ইজ্জত। তারই পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে সভ্যতার লোকদের আশীর্বাদপুষ্ট নামি-দামি গাড়িগুলো। কখনও ফ্লাগ সুসজ্জিত পাহারা ঘিরে চলে যায় পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে। ওরা শুধু চেয়ে দেখে আর হাততালি দেয়। হাত নেড়ে চলে যায় ওদের ভাগ্যবিধাতা। ওরা কি নাম জানে, কে গেল এ লোকটি। হ্যাঁ, ইনিও সেই লোক, যাকে ভোট দিয়েছিল দিনের রোজগার বন্ধকরে। বাচ্চার দুধের পয়সা যোগার বাদ দিয়ে। ঘরে  যুবতী মেয়ের বিয়ের কথা না ভেবে।

আমি জন্নেছি পৃথিবীর ক্ষুদ্র একটি দেশে, দুর্বল ভাষা নিয়ে, কতজন বুঝবে আমার কথা? আমি যদি চিৎকার দিই কতজন শুনবে। আমি ডশ সাইক্লোনের মত ঘুরব দিগ্বিদিক। না, সম্ভব নয়, আমি সাইক্লোনের মত ঘরতে পারব না, টর্নেডোর মত ধ্বংস করতে পারব না, আগ্নেয়গিরির মত অগ্লৎপাত ঘটাতে পারব না, আধুনিক যুগের এটম বোমার মত শক্তিশালীও আমি নই। ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তাকে, যে সামান্য বিদ্যা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলাম এই মানব সমাজে, তা না হলে সমাজের কারও কাছে উপদ্রবও হতে হতো?

পৃথিবী নামক গ্রহটাতে হিংস্র জীব-জানোয়ার, পশু-পাখি, সাপ-বিচ্ছুর সাতে মানুষের কোন যুদ্ধ নেই। লড়াই যা হচ্ছে তা মানুষের সাথে মানুষের। এ লড়াই স্বার্থেও লড়াই। অথচ মানুষ মানুষের ভাই, এক গোত্রের, একই আকাশের নিচে তার বাস। মানুষের গড়া মতবাদ নিয়েই যত বিদ্রোহের সূচনা। মানব চরিত্রের বড় গুণ বা দোষ যা-ই বলুন না কেন, তা হলো স্বাধীনতা। একজনের উপর আর একজনের খবরদারি মানুষ সেটা মেনে নিতে পারে না। তাই পৃথিবী থেকে আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে সমাজতন্ত্র।

কৌশলগত উপনিবেশ এক ভয়াল থাবা। কিন্তু উপনিবেশ থেকে মানবসমাজ পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হতে পারছে না। দিনে দিনে এই সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করছে। মানব সমাজ গভীর ঘুমে নিমগ্ন, কেউ নক করছে না দরজায়। যদিও সে অনেক দূর থেকে ডাকছে যা কিনা দেয়াল ভেদ করে ঘুমন্ত মানুষের কানে যাচ্ছে না। যেহেতু ঘুম ভাঙার কোন ডাক ওদের কানে যাচ্ছে না, তাই জাগার প্রশ্ন অবান্তর। ওই ঘুমন্ত মানুষের দল বুঝতে পারছে না যে, ওরা ঘুমাচ্ছে। এভাবে ঘুমাতে ঘুমাতে শেষ হয়ে যায় পৃথিবীতে অবস্থানের সময়-সীমা। আসে তখন মহা ঘুমের ডাক, সে ডাকে সারা না দিয়ে কোন উপায় নেই। তাই পৃথিবীর মায়-মমতা ত্যাগ করে চিরঘুমের রাজ্যে যাত্রা করে একদিন। বিদায় নেবার আগে তার সচেতন মন একবারও বলল না- হে মানব সমাজ, তুমি যে ঘুমাচ্চো শুধু ঘুমের জন্যই পৃথিবীতে আস নাই। অচেতন মন তার প্রাধান্য বজায় রেখে ঘুমায়ে রাখল মানব জাতিকে, তার পর একদিন সম্মানে হোক আর অসম্মানে হোক, বিদায় করে দিল পৃথিবীর মায়াকানন থেকে। বিদায়ের দৃশ্যপট চিরসত্য। সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করা যায়, কিন্তু মৃত্যুতো অবধারিত। মানুষ এই চির সত্য জেনেও একে অপরকে, এক ভাষাভাষী অন্য ভাষাভাষীকে, এক ধর্মের অনুসারী অন্য ধর্মের অনুসারীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে, যা ক্ষণস্তায়ী। এই আধিপত্য হতে পারে ভু-খন্ড, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, ভাষার বা কৌশলের এ যেন বনের বাঘের নিজের রাজ্য বিস্তারের।