করোনায় ফুসফুসের ব্যায়াম

নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১০, ২০২০, ১২:৫২ পিএম

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। আবার যাদের ফুসফুস দুর্বল বা সমস্যা রয়েছে করোনায় তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বেশ কয়েকবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘ঘরে থেকেও যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা শনাক্ত হয়েছেন, তারা বিশেষভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে নজর দেবেন।

ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে যতক্ষণ সম্ভব ধরে রাখা। এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হবে। এর ফলে ফুসফুসের কোষগুলোর ব্যায়াম হয়, ফলে সেটির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে না।

এ জন্য চিকিৎসকরা বলছেন, পিঠ সোজা করে আরাম করে বসতে হবে। এরপর প্রথমে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে ফুসফুসের সব বাতাস বের করে দিতে হবে। এরপর আবার গভীর শ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব ফুসফুসে বাতাস ভরে নিতে হবে। যতক্ষণ সম্ভব হয়, শ্বাস আটকে রাখুন। এরপর আবার একসঙ্গে সব বাতাস বের করে দিন। এভাবে দিনে অন্তত দুইবার এইরকম ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘লম্বা শ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ১০ সেকেন্ড বোঝার জন্য এক হাজার এক, এক হাজার দুই, এক হাজার তিন- এভাবে দশ পর্যন্ত গোনা যেতে পারে। প্রথম দিনে হয়তো এতটা করা যাবে না। কিন্তু আস্তে আস্তে এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড করে বাড়াতে হবে।’

ইনসেনটিভ স্প্যারোমেট্রি এক্সারসাইজ

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা খানম বলেন, ‘হাসপাতালের রোগীদের পাশাপাশি আউটডোরের রোগীদের জন্যও এই ব্যায়ামের সুপারিশ করা হয়। এখানে ছোট্ট একটা ডিভাইসের মধ্যে তিনটা বল থাকে। শ্বাস দিয়ে রোগীদের সেই বলগুলো ডিভাইসের ভেতরে তুলতে হয়। প্রথম দিন হয়তো একটা, পরের দিন আরেকটা, এভাবে আস্তে আস্তে বল তোলার ক্ষমতা বাড়ে। তিনটা বল তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে আবার ছেড়ে দিতে হয়। এভাবে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে।’

উপুড় হয়ে ঘুমানো

ডা. রওশন আরা খানম বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে অনেক সময় অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হয়। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই এটা হয়। এ জন্য উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে বা পাশ ফিরে শুয়ে থাকলে শরীরের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। এভাবে শুয়ে থাকার সময় মাথার নিচে কোনো বালিশ ব্যবহার না করাই ভালো। তবে বুক বেশি ভার ভার মনে হলে বা শ্বাস নিতে বেশি কষ্ট হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’

শ্বাস নেওয়ার সময় হাত তোলা

ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমরা অনেক সময় রোগীদের পরামর্শ দিই যে, যখন শ্বাস নেব, তখন হাত ওপরে তুলতে হবে। আবার যখন শ্বাস ছেড়ে দেবে, তখন হাত নিচে নামিয়ে আনা হবে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের অঙ্গের একটি ব্যায়াম হবে। আবার লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের পাঁজরের নিচে হাত রেখে অনুভব করতে হবে যে, বুকটা বেলুনের মতো ফুলে উঠছে। এরপর সেটা আবার চাপ দিয়ে বাতাস বের করে দিতে হবে। এভাবে দিনে অন্তত কয়েকবার করতে হবে।’

নাক বন্ধ করে শ্বাস নেওয়া

এ ব্যায়ামটি করতে হাত দিয়ে প্রথমে নাকের বাম পাশ বন্ধ করে ডান পাশ দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন। ৫/১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন। এরপর শ্বাস ছেড়ে দিন। এরপর নাকের ডান পাশ চেপে ধরে একই ভাবে শ্বাস নিন। একইভাবে ৫/১০ সেকেন্ড ধরে রেখে শ্বাস ছেড়ে দিন। এভাবে প্রতিদিন কয়েকবার করে অভ্যাস করুন।

বাষ্প নেওয়া

ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বলেন, ‘অনেক সময় আমরা রোগীদের বাষ্প নেওয়ার পরামর্শ দিই। বাসায় থেকে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারা গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। সেটাও ফুসফুসের জন্য ভালো।’

এদিকে, ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশন ফুসফুস ভালো রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে, গভীর শ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা দূর করে অধিক বায়ু সঞ্চালনে সাহায্য করতে পারে। এ ব্যায়াম করতে ৫-১০ বার গভীর শ্বাস নিতে হবে। তারপর কয়েকবার জোরে কাশি দিয়ে রিপিট করতে হবে। এতে ফুসফুস আরও শক্তিশালী হবে।

ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়াতে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলে হাঁটা শুরু করে শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরবর্তীতে হাঁটার গতি আরও বাড়াতে হবে। এসব ব্যায়াম স্বল্পমেয়াদি কোনো ব্যায়াম নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যায়ামের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে এসব ব্যায়াম করা যাবে না

যদিও ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকরা ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা কাশি থাকে, তখন এই ধরনের ব্যায়াম না করাই ভালো।

যাদের হৃদরোগ বা ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, তারা ব্যায়ামের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ব্যায়াম করার সময় অসুস্থ বোধ হলে বা শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। কষ্ট বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

 

আগামীনিউজ/এএস