বেগমপাড়ার সাহেবদের পরিচয় জানতে রুল

নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৫, ২০২০, ১২:২৯ পিএম

ঢাকাঃ বেগমপাড়ার সাহেবদের পরিচয় কী? কানাডায় অর্থ পাচার করে অনেকে বড়িঘর করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই৷

বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তারাই সংখ্যায় বেশি, রাজনীতিবিদেরা কম৷ জানা কথা হলেও সরকারের একজন দায়িত্বশীলের মুখে একথা শুনে নড়েচড়ে বসেছেন অনেকেই৷’’

এই প্রেক্ষাপটে কয়েকটি সংস্থার কাছে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা  চেয়েছে হাইকোর্ট৷ এখন প্রশ্ন হলো, হাইকোর্ট কি সেই তালিকা পাবেন? সেই তালিকা কী প্রকাশ হবে?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ১৮ নভেম্বর ঢাকায় সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘কানাডার টরেন্টোতে টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছে এরকম ২৮টি ঘটনা তার জানা আছে৷ তবে এর মধ্যে রাজনীতিবিদ মাত্র চারজন৷ বাকিরা সরকারি কর্মকর্তা৷'' 

গত রোববার বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা জানতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন৷ চার সপ্তাহের মধ্যে ওই তালিকা দিতে বলা হয়েছে৷ ১৭ ডিসেম্বর রুলের শুনানি হবে৷ তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে৷

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ অর্থ পাচারকারীদের দেশের শত্রু বলে অভিহিত করেন৷

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘তালিকা শব্দটি ঠিক নয়৷ আদালত মূলত অর্থ পাচারের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন৷ আমি এরইমধ্যে মধ্যে দুদকে চিঠি দিয়ে এবিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়েছি৷ তথ্য পেলে আমি তা আদালতকে জানাব৷ আর আদালত তা প্রকাশ করলে সবাই তা জানতে পারবেন৷ আমরা তো প্রকাশ করতে পারি না৷''  

সংখ্যায় বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার এক হাজার কোটি ডলার
শুধুমাত্র ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এই পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি’ (জিএফআই)৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটি প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার সমান৷

খুরশীদ আলম জানান, মানিলন্ডারিং-এর তথ্য তদন্ত পর্যায়ে প্রকাশ করা যায় না৷ আর্ন্তাতিক আইনে বাধা আছে৷ অনেক দেশে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ তারা তথ্য পাঠাচ্ছেন৷

বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংগঠন এগমন্ট গ্রুপ-এর সদস্য৷ এটি বিভিন্ন দেশের ১৬৬টি ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সংগঠন৷ তাদের নীতিই হলো তদন্ত পর্যায়ে তথ্য প্রকাশ না করা৷ তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত পর্যায়ে তথ্য প্রকাশের দায়ে নাইজেরিয়াকে গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ আমরা সেই ঝুঁকি নিতে পারি না৷ এপর্যন্ত মানি লন্ডারিং-এর ১৮টি মামলা হয়েছে৷ আরো বেশ কিছুর অনুসন্ধান চলছে৷ বিদেশ থেকে কিছু টাকা ফেরত এসেছে৷ আর কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে৷''

অবশ্য ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানান, অর্থ পাচারকারীদের তালিকা পাওয়ার পর আদালত তা অবশ্যই প্রকাশ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেবেন৷ আদালত এব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস৷ আদালত বলেছেন, ‘‘যারা অর্থ পাচার করে তারা দেশের শত্রু৷ তারা দেশের সাথে বেইমানি করছে৷ এই দেশে পড়ালেখা করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে৷''

দুদক সূত্র জানায়, তারা এপর্যন্ত বাংলাদেশের ৬০ ব্যক্তির অর্থ পাচারের তথ্য চেয়ে ১৮টি দেশে চিঠি দিয়েছে৷ তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের এর নাম রয়েছে৷ তার মধ্যে ৩০ জনের ব্যাপারে চিঠির জবাব পাওয়া গেছে৷ মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স আইন ২০১২ অনুযায়ী এই সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে৷

গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, যেসব ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে সেসব দেশেই থাকছেন, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফেরত আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক৷

‘‘যারা অর্থ পাচার করে তারা দেশের শত্রু’’
 
তবে এই সময়ে বিদেশ থেকে  পাচারের টাকা ফেরত আনায় দুদকের সাফল্য বলতে তেমন কিছু নাই৷ তাদের উদ্যোগের মধ্যে এখন এগিয়ে আছে মোরশেদ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের হংকংয়ে পাচার করা ৩২১ কোটি টাকা ফেরত আনার চেষ্টা৷ এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনার জন্য হংকংয়ের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক৷

বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নয় কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে৷ গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তার ভাই হাফিজ ইব্রাহিমের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷ আর হলমার্কের কাছ থেকে ১৩ কোটি টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদক৷ তবে তা আইনি প্রক্রিয়ার কারণে আটকে আছে৷

সর্বশেষ পিকে হালদার দেশে না ফেরায় তার  কানাডায় পাচার করা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা উদ্ধারও অনিশ্চিত৷ তবে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে দুইটি মামলা করেছে দুদক৷

আগামীনিউজ/প্রভাত