মৃত্যুর স্বাদ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দক্ষিণ আফ্রিকায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৪:১৫ পিএম

ঘর ভর্তি অনেকগুলো কফিন। প্রত্যেকটিতে একটি করে লাশ। তবে সেগুলো মুর্দা নয়, সবগুলোই জিন্দা লাশ! অর্থাৎ জীবিত মানুষগুলোকেই কফিনে শুইয়ে রেখে মৃতের অভিনয় করানো হচ্ছে।

অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন জীবিত মানুষকে কেন কফিনে শোয়ানে হয়েছে? অবাক হলেও এটাই সত্যি। দৃশ্যটি একটি শেষকৃত্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার। ‘ডাইং ফর বেটার লাইফ’ বা ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মরণ নামক একটি কর্মসূচির আওতায় এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনা করছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী সিউলের হাওন হিলিং সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠান।

কর্মশালার মূলত উদ্দেশ্য জীবিত মানুষকে মৃত্যুর অনুভূতি প্রদান। যেন মানুষ একটি শুদ্ধ জীবন-যাপন করতে পারে। প্রোগ্রামটি দক্ষিণ কোরিয়ায় দারুণ সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে পঁচিশ হাজার মানুষ এতে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন।

চো জাই হি নামে পঁচাত্তর বছর বয়সী এই ভদ্রলোক এমনটাই মনে করেন,আপনি যখন একবার শেষকৃত্য অনুভব করতে পারবেন তখন জীবনে নতুন ধারা শুরু হবে। তবে প্রোগ্রামে অংশ নেয়া সকলেই চো-এর মতো বৃদ্ধ নয়। ছেলে বুড়ো সবাই আসছেন। ১০ মিনিটের এই প্রোগ্রামে তারা অংশ নিয়ে জীবন সম্পর্কে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা নিতে দারুণ আগ্রহী!

কর্মশালায় অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক তরুণ বলেন, আমি যখন কফিনে শুয়েছিলাম তখন আমার মধ্যে জীবন সম্পর্কে নতুন এক বোধের উপলব্ধি হয়েছে। আগে আমি অনেক উচ্চাভিলাষী ছিলাম। তবে বর্তমানে আমি আর আগের মতো নেই।

আসান মেডিকেল সেন্টারের প্যাথলজি বিভাগের পরিচালক ইউ ইয়ুন সিল বলেন, তরুণ বয়সেই মৃত্যু সম্পর্কে সকলের উপলব্ধি আসা উচিত। এতে জীবন অনেক শুদ্ধভাবে চালনা করা সম্ভব। এছাড়া তার মতে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে তাতে প্রত্যেকেরই মৃত্যুর পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। 

তবে এত মানুষের অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের পরও এই ধরনের কর্মশালার আদৌ যৌক্তিকতা আছে কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে। এ প্রসঙ্গে হাওন হিলিং সেন্টারের পরিচালক জিওং ইয়ন মুন বলেন, আমাদের কর্মশালা পরিচালনার উদ্দেশ্য জীবিত মানুষকে শেষকৃত্যের স্বাদ দেয়া। যেন মানুষ তার জীবনকে একটি উপহার হিসেবে নেয়। যেন তারা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে একটি শুদ্ধ জীবন যাপন করতে পারে।

তাছাড়া আমরা ওই সকল মানুষকে কর্মশালার জন্য বেছে নেই যারা জীবনে কোন না কোন সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন। আমরা তাদের বোঝাতে চাই, জীবনে যে ধরনের পরিস্থিতিই আসুক না কেন- তাকে উপভোগ করতে জানতে হবে। জীবন শেষ করে দিও না। কারণ বর্তমানই সুখ। 

আগামী নিউজ/আরএম