শিশুদের ব্রনকিওলাইটিস, কারণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহিম মাসুম বিল্লাহ ডিসেম্বর ১৬, ২০২১, ০১:৫৬ পিএম
ছবিঃ আগামীনিউজ

ঢাকাঃ মানুষের শ্বাসনালি শুরু হয় ট্রাকিয়া থেকে, ট্রাকিয়া একটা নালিকা, এই নালিকা দিয়ে বাতাস ফুসুফুসের অ্যালভিওলাইতে যায়। আমরা যদি শ্বাসনালীর এনাটমি একটু চিন্তা করি, তাহলে প্রথমে পাবো ল্যারিংক্স (Larynx)। এটা একটা বড় পাইপের মতো, তারপর ট্রাকিয়া। এরপর প্রাইমারি ব্রংকাস। এটাও একটা বড় নালিকা।

তারপর শুরু হয় সেকেন্ডারি ব্রংকাস, তারপরে টারশিয়ারি ব্রনকাস, এগুলো হচ্ছে পাইপের মত, টারশিয়ারি ব্রংকাস এর পরে চিকন চিকন নালিকা বের হয়, যা ব্রংকিওল নামে পরিচত, ব্রংকিওলের সাথে  থাকে স্পঞ্জের মত অ্যালভিওলাই, যেখানে গ্যাস তথা অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের এক্সচেঞ্জ হয়। এই ব্রংকিওলে যদি কোনো কারণে প্রদাহ হয়, তাহলে তাকে ব্রনকিওলাইটিস (Bronchiolitis) বলে। এটাকে মূলত Lower Respiratory Tract হিসাবে গণ্য হয়।

ব্রনকিওলাইটিস কী দিয়ে হয়ঃ
এইটা সাধারণত ভাইরাল ইনফেকশন। Respiratory syncytial virus নামক এক প্রকার ভাইরাস নাক দিয়ে প্রবেশ করে ট্রাকিয়া হয়ে ব্রণকিওলে গিয়ে ব্রনকিওলাইটিস করে থাকে।

কারা বেশি আক্রান্ত হয়ঃ
২ মাস থেকে ২ বছরের বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হয়।

উপসর্গঃ
একটা কথা মনে রাখা চাই, যেকোনো রেসপাইরেটরি ভাইরাস ইনফেকশন হলে সাধারণত ৩টা উপসর্গ থাকে। যেমন-
১. হালকা জ্বর
২. নাক দিয়ে পানি পড়া
৩. কাশি হওয়া

ব্রনকিওলাইটিস-এ প্রথম ৪-৫ দিন উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হতে পারে। তবে ৬ষ্ট দিন থেকে জ্বর থাকবে না। বাচ্চার গলা দিয়ে বাঁশির মতো আওয়াজ আসবে যাকে Wheez বলে। নাকের পানি কমে গিয়ে হালকা কাশি থাকবে, তবে বাচ্চার দুধ পান, প্রস্রাব-পায়খানা সব ঠিক থাকবে।

নিউমোনিয়ার সাথে কীভাবে পার্থক্য করবেনঃ
নিউমোনিয়াতে বাচ্চার-
১. কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট থাকে।
২. দেখতে টক্সিক বা খুব দুর্বল দেখা যায়।
৩. খাওয়া দাওয়া করতে পারে না।
৪. ইরিটেট থাকে।

ব্রংকিওলাইটিস-এ কমন ৩টি উপসর্গ থাকেঃ
১. হাসি কাশি বাঁশি অর্থাৎ বাচ্চা play full থাকবে।
২. হালকা কাশি থাকে।
৩. আর Wheez থাকে।

কাদের বেশি হতে পারেঃ
১. যে সমস্ত বাচ্চা সময়ের আগে জন্ম নেয় বা premature baby
২. যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম 
৩. যেসব বাচ্চাকে মায়ের দুধ পান করানো হয় না
৪. যেসব বাচ্চা নোংরা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে।

চিকিৎসাঃ
যেহেতু এটা ভাইরাস ইনফেকশন, তাই এটার উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিলেই বাচ্চা ভালো হয়ে যায়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, একটা অ্যান্টি হিস্টামিন, আর কাশির জন্য একটা Bronchodialator দিতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়ঃ
১. যাদের জ্বর, সর্দি-কাশি আছে, তাদের কাছ থেকে বাচ্চাকে যথাসম্ভব দূরে রাখা।
২. ফ্লোর এবং বাসস্থান পরিস্কার পরিচ্চন্ন

৩. সর্দি-কাশি হলে নির্দিষ্ট টিস্যু ব্যবহার করা এবং তা নির্দেষ্ট স্থানে ফেলা।
৪. প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করা।
৫. বাচ্চাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানো। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

[ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহিম মাসুম বিল্লাহ, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ফরাজী হাসপাতাল]