করোনা একসময় মৌসুমি রোগে পরিণত হবে: জাতিসংঘ

নিজস্ব প্রতিনিধি এপ্রিল ৬, ২০২১, ০৮:২২ পিএম

ঢাকাঃ করোনার জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি যদি দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বে টিকে থাকতে সক্ষম হয়, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে একসময় একটি মৌসুমি রোগে পরিণত হবে এটি। আজ মঙলবার এই তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়া-কমার সম্পর্ক আছে কি না খতিয়ে দেখতে ১৬ সদস্যের একটি গবেষণা দল গঠন করেছিল জাতিসংঘ। সম্প্রতি গবেষকদের সেই দল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মঙলবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, ‘এই ভাইরাসটি ঘিরে এখনও বেশ কিছু রহস্য রয়ে গেছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো আবহাওয়াগত পরিস্থিতি বা বাতাসের গুণাগুন এই ভাইরাসের সংক্রমণে কতখানি প্রভাব ফেলে।’

‘বিষয়টি অনুসন্ধানে জাতিসংঘের গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে শরৎ থেকে শীতকাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলোর তুলনায় শীতপ্রধান অঞ্চলে এই ভাইরাসের বংশবিস্তারের হার বেশি।’

‘গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জাতিসংঘ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে, যদি এই ভাইরাসটি দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বে টিকে থাকে, ভবিষ্যতে একটি সাধারণ মৌসুমি রোগে পরিণত হবে করোনা।’

তবে এই তথ্য অনুসরণ করে বিভিন্ন দেশের জনগণ যেন করোনা বিধিনিষেধ মেনে চলতে ঢিলেঢালা মনোভাব না দেখায়, সে বিষয়েও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

এ সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের (করোনাভাইরাস) সংক্রমণ ও বংশ-বিস্তার সম্পর্কে বিশদভাবে জানাই ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। এ কারণে বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এই তত্ত্ব অনুসরণ করে করোনা বিধিনিষেধ শিথিল না করার আহ্বান জানাচ্ছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি সংক্রমণের বিস্তার রোধে বিভিন্ন দেশের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, জনগণকে সেগুলো মেনে চলার আহ্বানও জানানো হচ্ছে।’   

গবেষক দলের সহকারী প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স’ বিভাগের অধ্যাপক বেন জেইথশিকও এক বার্তায় বলেছেন, ‘এই তত্ত্ব বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য হবে না। তাই কোনো দেশের সরকার যদি এই তত্ত্ব মেনে করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করে— সেটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।’

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশও এই তত্ত্বের বিরোধিতা করে বলেছেন, গত বছর যখন থেকে মহামারি শুরু হলো, দেখা গেছে শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেও করোনা সংক্রমণ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। চলতি বছর এবং সামনের কয়েক বছরও যে এমন হবে না— জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তার অকাট্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাদের বক্তব্য, ‘এমনটা হতেই পারে, আবহাওয়া ও বাতাসের গুণাগুন সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বংশবিস্তারে প্রভাব ফেলে, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ঋতু বা মৌসুম সরাসরি এই ভাইরাসের সংক্রমণে প্রভাব ফেলে, তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।’

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে মহামারির রূপ নেয়। এ পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মারা গেছেন ২৭ লাখ মানুষ।

আগামীনিউজ/প্রভাত