দেশিয় গবেষকদের করোনা ধ্বংসের পদ্ধতি উদ্ভাবন

নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ৯, ২০২০, ০৭:০০ পিএম

 

প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ সর্দি-জ্বর আর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য বের করা বেশ কঠিন। তাই এ ধরনের লক্ষণ এলে শুরু থেকেই পদ্ধতিটি অনুসরণের কথাও বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এবং হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল গবেষক। এ দলে আরও আছেন পিএইচডি শিক্ষার্থী ডা. মো. আসির উদ্দিন, ডা. মো. মুখলেছুর রহমান ও ডা. মো. এনামুল হক।

কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদ্ধতিটির উদ্ভাবক দলের তথ্য বলছে, ঘরে বসেই গরম পানিতে ইথানলের ভাপ নিলে এবং মৃদু গরম পানিতে ইথানল মিশিয়ে কুলকুচি করে মিলতে পারে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তি।

ড. মো. আলিমুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ভাইরাসে যে লিপিড জাতীয় পদার্থ থাকে, সেটা যদি কোনোভাবে ধ্বংস করে দেওয়া যায়, তাহলে কিন্তু ভাইরাসের আর কোনো অস্থিত্ব থাকে না। আমরা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করে দেখেছি, ৬০ বা ৭০ শতাংশ ইথানলে যদি আমরা ট্রিটমেন্ট করি, তাহলে ভাইরাসটা সংম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।

তিনি বলেন, করোনা গোত্রের একটা ভাইরাস নিয়ে কাজ করেছি। এবং সব ধরনের আরএনএ ইনভেলেপড ভাইরাস এবং ডিএনএ ভাইরাসের মেমোরিনে যে ইনভেলেপড থাকে, তাদের গঠনও একই ধরনের। অতএব এসবের সবগুলোকে একইভাবে ইথানল ধ্বংস করবে বলে আমাদের বা আমার ধারণা, বিশ্বাস ।

কীভাবে ইথানলের ভাপ এবং কুলকুচি করতে হবে তা-ও জানিয়েছেন করোনা গ্রুপের ভাইরাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসা এই অধ্যাপক। তিনি এভাবেই ব্যখ্যা করেছেন, প্রথমে একটি কাপে ৬০ মিলি ফুটন্ত গরম পানি ঢালুন। এরপর এতে অ্যাসিটোন ফ্রি খাঁটি ঘন ৪০ মিলি ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল ৯৯.৯%) ঢেলে ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত নাক দিয়ে ওই বাষ্প টানতে থাকুন।

ইথানল বাষ্প টানার ঠিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ২৫ মিলি মৃদু গরম পানিতে ২৫ মিলি ৬০ শতাংশ ইথানল মিশিয়ে ৩০ সেকেন্ড কুলকুচি/গড়গড়া করুন পরপর দুইবার। এরপর স্বভাবিক পানি দিয়ে হালকা কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতি দিনে তিন থেকে চারবার অনুসরণ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিবার চার-পাঁচ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে গড়গড়া করে মুখ ধুয়ে নেওয়ার কথাও বলেছেন এ ভাইরাস বিশেষজ্ঞ।

এছাড়া যদি শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে, সেক্ষেত্রে দিনে তিনবার প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম চার থেকে পাঁচদিন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে প্রতি আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তিন থেকে চারদিনের জন্য আদা ও দারুচিনি মিশ্রিত মৃদু গরম পানি পান করার পরামর্শও দিয়েছেন ড. আলিমুল ইসলাম।

তবে যারা অ্যাজমা/ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, তারা নেবুলাইজার (সুলপ্রেক্স) এবং অন্যান্য চলমান চিকিৎসার সঙ্গে সাব-ক্লিনিক্যাল ফ্লু/করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে আর ইথানলে কোনো এলার্জি না থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই বাষ্প ইনহেলেশন বা কুলকুচি করতে পারেন বলেছেন অধ্যাপক আলিমুল।

ইথানল বাষ্পের ইনহেলেশন এবং কুলকুচি কীভাবে আরএনএ ইনভেলেপড ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে, তা-ও বলেছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ইথানল একাই যথেষ্ট আরএনএ ইনভেলেপড ভাইরাসগুলোর লিপিড পদার্থ সহজেই ধ্বংস করতে। এছাড়া প্রদাহজনিত কারণে গলাব্যথার ক্ষেত্রে ওই এলাকার কোষগুলো থেকেও সাময়িকভাবে জলীয় পদার্থ শোষণ করবে ইথানল। ফলে প্রদাহ কমে যাবে এবং ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে। সেক্ষেত্রে রোগী ভীষণ আরাম বোধ করবেন। যদি দু-একদিন কুলকুচি করলেই ব্যথা চলে যায়, তাহলে আর কুলকুচি করার প্রয়োজন নেই । তবে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে দুইদিনে ব্যথা না কমলে আরও দুয়েকদিন করা ভালো।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে তরতর করে কাঁপছে সবাই! গোটা বিশ্ব স্তব্ধ করে ফেলেছে। চীনকে মৃত্যুপুরী বানিয়েছে। এখন ইউরোপ-আমেরিকারও বেশ কয়েকটি দেশ মৃত্যুপুরী। বাংলাদেশেও বাড়ছে সংক্রমণ। এরইমধ্যে বাংলাদেশের গবেষক দল এমন আশা জাগানিয়া পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।

অথচ, এখনও এর নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক বের করা সম্ভব হয়নি। গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে অনেকে দাবি করেছেন, এই ভাইরাস রোধে খুবই কার্যকর অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। পরীক্ষা চলছে। আবার অনেকে বলছেন, সংক্রামক রোগ ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় কাজে দিচ্ছে।

আগামী নিউজ/ তাওসিফ