দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রাণ পেল ডেমু ট্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ০৮:৪৯ পিএম

চট্টগ্রামঃ দীর্ঘ আড়াই বছর অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকার পর অবশেষে দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রাণ পেল ডেমু ট্রেন। ফলে শিগগিরই এই ট্রেন ফিরছে চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রুটে। এতে উপকৃত হবে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ পেশাজীবী শ্রেণির বহু মানুষ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) বোরহান উদ্দিন এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, চীনা প্রযুক্তিতে তৈরি এই ডেমু ট্রেন ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিকল হয়ে পড়ে। ডেমু ট্রেনগুলো সচল করতে উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু এগুলো সারাতে চীনা প্রতিষ্ঠান ক্রয়মূল্যের কাছাকাছি অর্থ দাবি করে। খরচের কথা বিবেচনায় উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে এগুলো মেরামত করা হয়নি। পরে বাংলাদেশ রেলওয়ের দেশীয় প্রকৌশলীরা এই ট্রেন সচল করতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, চীনা প্রযুক্তি বাদ দিয়ে রেলওয়ের নিজস্ব কারখানায় দেশীয় প্রযুক্তি সংযোজনে এ ট্রেন সচল হয়। অনেকটা বলা যায়, বাংলা ট্রাক যে রকম চালায় ব্যাপারটা ওই রকমই করা হয়েছে। তাতে অনেক কম টাকা খরচ করে এগুলো চালু করা সম্ভব হয়েছে।

ডেমু ট্রেন সচল করার কাজে নিয়োজিত পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, মডিউল পাল্টে ডেমু ট্রেনে বসানো হয়েছে ইনভার্টার। বাদ দেওয়া হয়েছে কোটি টাকার চীনা ব্যাটারি। লাগানো হয়েছে সুলভ মূল্যের ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারির সাহায্যেই দিব্যি স্বাভাবিক গতিতে ছুটে চলছে ডেমু ট্রেন। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন মালামাল দিয়ে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে এই ডেমু ট্রেনগুলো মোডিফাই করা হয়েছে, তাতে এগুলো নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করা যাবে।

রেলওয়ের তথ্য মতে, প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকা খরচে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ রেলে যুক্ত হয় ২০ সেট ডেমু ট্রেন। চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রুটে চলাচলের জন্য মূলত এই ডেমু ট্রেন ক্রয় করা হয়। চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড থেকে এই ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয়। ট্রেনগুলোর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০ বছর। সে হিসাবে ২০১৩ সালে তৈরি করা এসব ডেমু ট্রেন চলার কথা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই ট্রেনগুলো ২০২০ সালের দিকে অচল হতে শুরু করে।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিদিন ভোরবেলা কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম সিটির দিকে ছুটে যেত এসব ডেমু ট্রেন। চিনকি আস্তানায় পৌঁছাত সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, বড়তাকিয়া স্টেশনে পৌঁছাত ৭টা ২০ মিনিটে। সাড়ে ৮টা নাগাদ পৌঁছাত চট্টগ্রাম শহরে। আবার বিকাল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে বড়তাকিয়া পৌঁছাত সন্ধ্যা ৬টায়। চিনকি আস্তানা পৌঁছাত ৭টা ১৫ মিনিটে। এতে মিরসরাই অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের অফিসপাড়ার লোকজন যাতায়াতে অনেক উপকৃত হতো। তবে ৭ বছর ধরে নিয়মিত চলাচলের পর ডেমু ট্রেনগুলো অচল হয়ে পড়ে।

ডেমু ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াতকারী চিনকি আস্তানা স্টেশনের যাত্রী শরফুদ্দিন আজাদ বলেন, ‘আমি একটি সরকারি অফিসে চাকরি করি। বাড়িতে মা-বাবা পরিবার সবাই আছে। এই ট্রেনে নিরাপদে যাতায়াত করায় চাকরি ও পরিবারকে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রাখতে পেরেছি। ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একদিকে বাড়তি খরচ, অপরদিকে পরিবার অফিসের জন্য বাড়তি সময় রাখতে গিয়ে জীবনযাত্রা অনেকটা বিপর্যস্ত এখন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্টেশন থেকে একসময় অনেক মানুষ ডেমু ট্রেনে যাতায়াত করত। কিন্তু ট্রেনগুলো অচল হয়ে পড়ায় মিরসরাই-সীতাকুণ্ডের ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীসহ নানা পেশাজীবী মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। তবে রেলওয়ের নিজস্ব কারখানায় দেশীয় প্রকৌশলীদের সাফল্যে ডেমু ট্রেন শিগগিরই ফিরছে বলে আশা করছি। এতে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।’

রেলওয়ের সীতাকুণ্ড থেকে ফেনী আঞ্চলিক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিটন চাকমা বলেন, ‘এই ট্রেনটি চালু হলে কুমিল্লা থেকে মিরসরাই উপজেলার চিনকি আস্তানা, বড়তাকিয়া ও সীতাকুণ্ড উপজেলার কয়েকটি স্টেশন নতুন উদ্যমে প্রাণ ফিরে পাবে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও আসবে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে।’

এসএস