সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফল

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৪:৩৬ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

যদি থাকে কারিগরি দক্ষতা, শ্রম হয় না কখনো বৃথা, এমন কথক বাক্যের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। মহামারী করোনা শুরু হলে দেশের শিক্ষাকাল পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পড়ে যান চরম দুঃশ্চিন্তায়। সেই অতিমহামারীকালেও উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর হিসাবে খ্যাত সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষের একদিনও পড়াশোনার বাইরে থাকেনি। করোনাকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষা না করেই ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ঘরে বসেই কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা যায় সেই সিদ্ধান্ত নেয়। যেই কথা সেই কাজ। শুরু হয় অনলাইনে পাঠদান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাছাকাছি হয়ে যায়। নিজ প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা সাবজেক্ট অনুযায়ী যে কোন সময়ে শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পায়। এভাবেই পুরো করোনাকালে পাঠদান করেছেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। মানুষ গড়ার কারিগর তারা, তাই তাদের শ্রম হয় না বৃথা। যার অবাক করা ফল মিলছে উচ্চ শিক্ষার ভর্তি পরীক্ষায়।

গত ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ২৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৭৯ জন। পাশ করেছে শতভাগ। আর এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে ৪০ জন। প্রকৌশল শিক্ষার অভিভাবক বুয়েটে ১৫ জন, গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩২ জন, সরকারি ডেন্টালে ০৭ জন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সবমিলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১২৪ জন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষালাভের কৃতিত্ব অর্জন করেছে। অবশিষ্ট ১৫৬ জন দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেযেছে বলে জানা যায়।

তবে সকল কৃতিত্বের কর্মবীর হলেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক। করোনাকালে পাঠদানের বিষয়ে সার্বক্ষণিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

গোলাম আহমেদ ফারুক সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে অধ্যক্ষ পদে আসীন হন ২০১৯ সালে। তার কর্মদক্ষতার ছাপ তিনি যোগদানের বছরেই দেখিয়েছেন। এ বছর ২৭৮ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮৮ জন জিপিএ-৫ পায়। পাশের হার শতভাগ। পরের বছর ২০২০ সালে ২৮০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৭৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাশের হার ছিল শতভাগ। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে টপ ফাইভের শীর্ষে অবস্থান ধরে রাখছে। এমনকি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখাও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবছর গড়ে টপ থ্রি’র শীর্ষে থাকছে।

শিক্ষার্থীদের ক্যারিশম্যাটিক ফলাফল বিষয়ে জানতে কথা হয় অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুকের সঙ্গে। কর্মে বিশ্বাসী প্রচারবমিুখ এই গুণি মানুষটি আগামী নিউজকে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনার অপেক্ষা না করেই নিজ উদ্যোগে ভবিষ্যৎ জাতির প্রয়োজনে সমস্যা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেই। চিন্তার সঙ্গে মিল রেখে গৃহিত পদক্ষেপ বাস্তব রূপদানে কাজ শুরু করি। আর সমষ্টিগত কাজে সমষ্টির সমন্বয় সাধনেই সফলতা এনে দেয়। এককথায় অধ্যক্ষের নেতৃত্বকে প্রতিফলিত করতে সকল শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ভেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফল অর্জন করে এগিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে আনন্দের সঙ্গে তিনি বিষাদের সুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এসব সমস্যা হলো, ছাত্রীদের জন্য নতুন হোস্টেল নির্মাণ, ছাত্রদের জন্য ছাত্রাবাস সংস্কার, শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধিকরণ, পুরনো আসবাবপত্রের পরিবর্তন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ উঁচুকরণ, রাস্তা নির্মাণ করা জরুরী প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

তিনি আরো আক্ষেপ করে বলেন, বর্ষাকালে মাঠে হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক সময় শ্রেণিকক্ষের ভিতরে বর্ষার পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। তার মতে, শ্রেণিকক্ষ যত দ্রুত বৃদ্ধি করা যায়, ততই এ জনপদের মানুষের জন্য মঙ্গল। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ষাটজনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব হয় না। কক্ষ সংকট না থাকলে প্রতি বছর ডাবল অর্থাৎ ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা যেত। এতে করে দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানরা উপকৃত হতো।

অধ্যক্ষের দেয়া তথ্য মতে, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুরের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, রাণীশংকৈলের শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসে। ক্যাম্পাসের ভিতরে ভাল মানের ছাত্রবাস ও ছাত্রী নিবাস না থাকায় দূরের শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া করে থাকতে হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন। এজন্য বিরাজমান সমস্যা সমাধানে তিনি মানবতার মা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেক দৃষ্টি কামনা করেছেন।

আগামীনিউজ/নাসির