রাবিতে পাঁচ কোটি টাকায় শিবির নিয়োগ, বিদায়ী ভিসির শাস্তি দাবি

আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি মে ৯, ২০২১, ০২:১৯ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

রাজশাহীঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বণিজ্যে ছাত্রলীগ নয় বরং ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪১ জনকে চাকরি দিতে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকার লেনদেনে সদ্য বিদায়ী উপচার্য (ভিসি) অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান এ নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এসব ঘটনায় ভিসির কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ক্ষমতাসীন ও বাম দলের নেতাকর্মীরা। তবে মানবিক কারনে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। আর সঠিক তদন্ত করে পক্ষপাতহীন প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত বুধবার ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে রেজিস্টার আব্দুস সালাামকে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। রেজিস্টার এমন অনিয়মের সঙ্গে আপোস না করায় তার বাবাসয় গাড়ি পাঠিয়ে জোরপূর্বক তুলে আসার অপচেষ্টা চালান ভিসি। তবে তার আগেই নিজ বাসা ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন রেজিস্টার আব্দুস সালাম। ফলে তার স্বাক্ষর হয় নি নিয়োগপত্রে। সবশেষ উপাচার্যের নির্বাহী আদেশে সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেন এবং নিয়োগ সম্পন্ন হয়।

এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম আগামী নিউজকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধ এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব কিছু প্রস্তুত করা হয় আগে থেকেই। অবৈধ নিয়োগ কার্যক্রম ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত হতে চাইনি। তাই উপাচার্য ডাকলেও সেখানে উপস্থিত হইনি। বরং নিজ বাসা থেকে বের হয়ে অজ্ঞাত জায়গায় চলে যাই। কারণ বাসায় থাকলে তুলে এনে স্বাক্ষর করানো হতো।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫ মে রাতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু ‘ত্যাগী নেতাকর্মী’ নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হলেও সিংহভাগই নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার। অধ্যাপক সোবহানের নিজের জেলা নাটোর ও তার মেয়ে-জামাতার জেলা বগুড়ার লোকজন বেশি চাকরি পেয়েছেন। নিয়োগ তালিকায় রয়েছেন রাজশাহীর চার সাংবাদিকও। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিপন্থি কিছু শিক্ষকের সন্তান ও আত্মীয়স্বজন পেয়েছেন চাকরি। এমনকি ভিসির পারিবারিক নাপিত, মালি ও কাঠমিস্ত্রিকেও চাকরি দেয়া হয়েছে। লেনদেন হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়োগ তালিকার ১৪ নম্বরে থাকা শামসুল আলম দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য আব্দুস সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের চুল কাটতেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুয়ার্ড শাখায় নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি দেয়া হয়েছে। তালিকায় ১৩ নম্বরে থাকা আব্দুস সামাদ রাজন পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তার বাড়ি কাজলার ধরমপুর এলাকায়। তিনি উপাচার্যের ব্যক্তিগত ফার্নিচার বানিয়ে দিতেন। তাকে প্রকৌশল দপ্তর শাখায় কাঠমিস্ত্রি পদে চাকরি দিয়েছেন উপাচার্য।

বাদ পড়েননি উপাচার্যের স্বজনরাও। ভিসির বাসভবনে মালির কাজ করতেন সাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী মিনু খাতুন ওই বাসভবনে গৃহপরিচারিকা ছিলেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে আয়া পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগের তালিকায় তার ক্রমিক নম্বর ১১। এছাড়া কাজলা এলাকার ফজলুল হক নামে এক ব্যক্তি নিয়মিত উপাচার্যকে মাংস সরবরাহ করতেন। তার মেয়েরও চাকরি হয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৪১ জনের নিয়োগ হতে লেনদেন হয়েছে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। যেটির মোটা অঙ্ক গেছে আব্দুস সোবহানের পকেটে। এ নিয়োগের আরো তিন হোতা পেয়েছেন টাকার ভাগ। তারা হলেন, সংস্থাপন (কর্মকর্তা) শাখার প্রধান ইউসুফ আলী, পরিষদ শাখার কর্মকর্তা মামুন অর রশীদ ও রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল ইসলাম।

রাবিতে এমন নিয়োগ এবারই প্রথম নয়। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ৫৪৪ জনকে একটি অফিস আদেশে নিয়োগ দিয়েছিলেন তৎকালীন উপাচার্য ড. ফাইসুল ইসলাম ফারুকী। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই ছিলেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও শিবিরের ক্যাডার। এমনকি সেই নিয়োগ তালিকায় উঠেছিল মৃত ব্যক্তির নামও। এ নিয়ে একাধিক মামলা হয় আদালতে। তবে শেষ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্তরা শুধু দিনভিত্তিক মজুরিতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে ২৪৪ জন এখনো নিয়মিত বা স্থায়ী হতে পারেননি। মাঝেমাঝেই তারা রাবির প্রশাসন ভবনের সামনে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অবস্থান করেন। মিছিল মিটিং করেন। অভিযোগ ছিল, ওই সময় চাকরিপ্রাপ্তরা ৫-৭ লাখ টাকা দিয়েছিলেন স্থানীয় নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে। এবারো ১৪১ নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সার বড় লেনদেনের আলোচনায় সরব রাজশাহীর বিভিন্ন মহল। দাবি উঠেছে, স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং এমন কর্মকান্ডের জন্য বিদায়ী ভিসিকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির মুখোমুখী করার।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজশাহী মহানগর ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিদায়ী ভিসি জঘন্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতাবিরোধীদের চাকরি দিয়েছেন। সেটিও করেছেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। অবশ্যই তার কঠোর শান্তি হওয়া উচিত। আশা করি, সরকার তার শাস্তি নিশ্চিত করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করবে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলেছেন, অধ্যাপক আবদুস সোবহান কাউকে তোয়াক্কা করেননি। নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে এমন নিয়োগ দিয়েছেন, যা কোনোভাবেই বৈধ নয়।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন আগামী নিউজকে বলেন, ‘উপাচার্য কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করা মানুষ। তিনি লিগ্যাল, মোরাল, কনটেক্সচুয়াল কোনো ইস্যুকে বিবেচনা করেননি। এইভাবে কখনো নিয়োগ হয় নাকি? একেবারে একটা দল ধরে বা সম্প্রদায় ধরে! এটা তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়। নিয়োগ যাকেই দিক, পরীক্ষা ও যোগ্যতাসহ একটা ডিসেন্ট উপায়ে দিতে হবে।’

রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু আগামী নিউজকে বলেন, ‘ঠিক বিদায়ের প্রাক্কালে ভিসি সোবহান যেভাবে ঢালাও নিয়োগ দিয়েছেন তা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর আগে সাবেক ভিসি ফারুকী ৫৪৪ জনকে গণনিয়োগ দিয়ে চরম বিতর্কিত হয়েছিলেন। প্রফেসর সোবহান ঠিক বিদায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে রেজিস্টারকে বাইপাস করে এসব করেছেন। এর উদ্দেশ্য সৎ বলার কোনো অবকাশ নেই।’ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘উপাচার্য এবার সব রকমের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চূড়ান্ত অন্যায় কাজটি করলেন। বিএনপির সময়ের ৫৪৪ জন নিয়োগের যন্ত্রণা শেষ না হতেই আবার এই কাজ করলেন। কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে তিনি একটা মাফিয়া চক্রের নেতার মতো কাজ করেছেন। তিনি আর্থিক কারণেই এমন কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন চাকরি না দিয়ে ছাত্রলীগকে জিম্মি করে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন তিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য এবং প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ আগামী নিউজকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভাগীয় প্লানিং কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ দরকার হয়। তবে তাদেরকে নিয়োগে বিভাগগুলোর প্লানিং কমিটির কোনো সুপারিশ নেয়া হয়নি। তাই এ নিয়োগ অবৈধভাবে ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে।’ গত মঙ্গলবার উত্তেজনার মধ্যে শিক্ষকদের গুলি করতে চাওয়া আকাশ নামের স্থানীয় সেই যুবকও তুলেছেন প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হওয়া তালিকায় রয়েছে নব্য ছাত্রলীগ। আসলে তারা বিএনপি ও জামাতের ঘরের সন্তান। যদি আমার কথা ভুল হয়, তাহলে স্যান্ডেল দিয়ে মারেন। আমি মাথা পেতে নেব।’

নিয়োগ তালিকায় দেখা যায়, অ্যাডহকের মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগে ছাত্রলীগের কথা বলা হলেও ১৪১ জনের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেকসহ আশপাশের বিভিন্ন শাখা ছাত্রলীগের ৪৩ জনের বেশি নেতাকর্মীর নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা চাকরি চাকরি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, আতিকুর রহমান সুমন, সাবেক ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর মোঃ সালেহ, বর্তমান সহ-সভাপতি মাহফুজ আলামিন, সুরঞ্জিত প্রসাদ দীপ্ত, ফারুক হোসেন,ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা, ফিরোজ ও ডিল রয়েছেন।

এদের দেয়া হয়েছে তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারীর পদ। উচ্চ পদ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের চাকরিপ্রাপ্ত নেতারা। অনেকে ছিড়ে ফেলেছেন নিয়োগপত্র। এছাড়া দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্রলীগ নেতাদের অধিকাংশকে তৃতীয় শ্রেণির পদে চাকরি দিয়ে তাদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা কেউ কেউ আবার চাকরিতে যোগদানও করেন নি।

রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাদিকুল ইসলাম স্বপন আগামী নিউজকে বলেন, আমি ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছি। তারপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। তবুও আমাকে নিম্নমান সহকারীর একটি তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে চাকরিতে যোগদান করতে চাই না। এতে শুধু আমাকে নয়, ছাত্রলীগ ও অনেক সিনিয়র নেতাকে অপমান করা হয়েছে।

রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান এহসান আগামী নিউজকে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের কিছু জনকে চাকরি দিয়ে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যদি অন্যগুলো ব্যবসা হয়, তাহলে কি বলবো? ছাত্রলীগের অধিকাংশ নাকি নিম্নমাণ সহকারী! জুনিয়ররা বড় পোষ্টে সিনিয়ররা নিম্নমান! সাংবাদিকরাও ছাত্রলীগ কোটায়, বাহিরের মেয়েরাও ছাত্রলীগ কোটায়! এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম জানান, তাদের ত্যাগী নেতাকর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে। এমনটা অপ্রত্যাশিত। অবশ্যই ত্যাগীদের প্রদান্য দিয়ে নিয়োগ দেয়া উচিত ছিল। এ ঘটনার জন্য বিধি অনুযায়ী সাবেক ভিসি আব্দুস সোবহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার (৮ মে) সকালে রাজশাহীতে আসে। তদন্ত দলের প্রধান ইউজিসির সদস্য ও রুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ছাড়াও এ দলে রয়েছেন ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এদিন দুপুরে রাবির রুটিনকালীন ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার কার্যালয়ে যায় তদন্ত দল। সেখানে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওই দলের সদস্যরা। এসময় সেখানে অন্য কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় নি। বিভিন্ন তথ্য নেয়ার পর তারা বেরিয়ে আসেন। এরপর একে একে নিয়োগের কুশীলব সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম, পরিষদ শাখার কর্মকর্তা মামুন অর রশীদ, সংস্থাপন শাখার প্রধান ইউসুফ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রত্যেকের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পরে গাড়ি পাঠিয়ে সাবেক ভিসি অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানকে ক্যাম্পাসে আনা হয় এবং তাকে প্রশাসন ভবনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তদন্ত টিমের সদস্যরা তার কাছ থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চান।

ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাইরে আসেন সাবেক ভিসি। এ সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখী হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান। তিনি বলেন, ‘আমি তদন্ত টিমের কাছে বলেছি, এ নিয়োগ যৌক্তিক। নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হতো। এছাড়া চাকরিপ্রত্যাশীদের চাপও ছিল। যদিও ‘মানবিক’ কারনে বিশেষ ক্ষমতাবলে এদেরকে নিয়োগ দিয়েছি, কারো কোনো চাপে নয়।’

তবে ১৪১ জনের মধ্যে মাত্র ৪৫ জন ছাত্রলীগ নেতা নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ সত্য নয়। ছাত্রলীগ নেতা ছাড়াও আওয়ামী পরিবারের সন্তান, ক্ষমতাসীন দলের অনেক কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’ পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত টিমের প্রধান ইউজিসির সদস্য ও রুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, কারো প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ নয়, সঠিক তদন্ত করে পক্ষপাতহীন প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে।

এদিকে, রাবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের রেশ কাটকে না কাটতেই শীঘ্রই রুয়েটেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি নিয়োগ হতে চলেছে বলে একটি সূত্রে জানিয়েছে। এবার রুয়েটে জনবল নিয়োগ রাবিকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সূত্রটি।