চলমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মারজিয়া আক্তার, রাবি প্রতিনিধি মে ৭, ২০২১, ০৩:২৬ পিএম
ছবি : আগামী নিউজ

রাবিঃ করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ বন্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একদিকে যেমন দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মহামারির প্রকটতা না কমায় ক্যাম্পাস খুললে করোনা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই বর্তমানে এই থমকে থাকা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কি ভাবছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা,এই নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছেন আগামী নিউজ কে।

আটকে থাকা পরীক্ষা সম্পন্ন করা উচিত
বিবেক মোর, আইবিএ
বৈশ্বিক করোনা মহামারি যেন সবচেয়ে বেশি থামিয়ে রেখেছে শিক্ষাব্যবস্থাকে। ২০২০ সালে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে প্রায় সকল শ্রেণীর প্রমোশন দেয়া হয়েছে। এইচএসসিতে দেয়া হয়েছে অটোপাশ। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ক্লাস পরীক্ষা চালু রেখেছে এবং পরের সেমিস্টার গুলোতে প্রমোশনও দিচ্ছে। কিন্তু শুধু যেন থমকে আছে পাবলিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন। অনলাইনে ক্লাস অব্যহত থাকলেও, নেওয়া হচ্ছে না পরীক্ষা। ফলে অনেক ডিপার্টমেন্ট, ইন্সটিটিউটে আটকে আছে একাধিক সেমিস্টারের পরীক্ষা। ভাবনা ছিল ২০২১ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো আগের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসা সম্ভব হবে, কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত। তাই আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা এখন সকল শিক্ষার্থীদের দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া উচিত
তাজ মোহাম্মদ তানিম, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগ
বর্তমান সময় আমাদের সকলের খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। সকল কার্যক্রম হয়তো পুরোপুরি ভাবে থেমে নেই। প্রায় সবকিছু সচল থাকলেও শুধু অচল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে এই প্রথমবার সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় সব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ছেদ পড়েছে। এরই মাঝে বিশ্বের অনেক দেশেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রেখেছে অনলাইনে। তবে অনলাইন ক্লাস এবং সরাসরি রুমে ক্লাস দুইটার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে একটা বিষয়কে সবসময় ভালোভাবে বোঝানো ও সম্ভব হয় না। ফলে অনলাইন ক্লাস ফলপ্রসু নয়। এছাড়াও এমন অবস্থার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে সেশনজট। অনেক শিক্ষার্থী মাস্টার্স বা অনার্স শেষ বর্ষের কাছাকাছি এসে আটকে রয়েছে। আমাদের দেশের চাকরির বয়সের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিসিএস বা অন্যান্য সরকারী চাকুরীর জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী চাকরির বয়স প্রায় শেষ হয়ে সরকারি চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে খুলে দেওয়া উচিত।

ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক পরীক্ষা চালু করা দরকার
তাইমুম আলী আহাদ, আইন বিভাগ
করোনা মহামরির কারণে দীর্ঘদিন যাবত আটকে আছে শিক্ষাব্যস্থা। প্রথমে নানা বাধা বিপত্তির মাঝেই অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও বর্তমানে তা হচ্ছে না বললেই চলে। যদিও অনলাইন ক্লাস চালু রাখার ঘোষণা রয়েছে। এদিকে ক্লাসের অভাবে দিনে দিনে পড়াশুনার বেহাল দশার সৃষ্টি হচ্ছে। সকল পরীক্ষা সমূহ আটকে আছে। এরই মাঝে একবার থেমে থাকা পরীক্ষাসমূহ শুরু হলেও তা আবার স্থগিত হয়ে যায়। আর কতোদিন এই অবস্থা বিরাজ করবে সেটাও অনিশ্চিত। তাই এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা চালু করা দরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অতি শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

অনলাইন পরীক্ষা শুরু করা উচিত
খায়রুন নাহার পিংকি, পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগ
জীবন থেকে এক বছর চলে গেলেও সামনে এগিয়ে যায়নি একাডেমিক ইয়ার। যেন এ সময়টা শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থাকেই বাধাগ্রস্থ করেছে। মহামারি শুরুর একটা সময় মনে হতো, অনলাইন ক্লাস নিলে মন্দ হয় না। কিন্তু তাতেও যে ছাত্রছাত্রীরা খুব একটা উপকৃত হয়েছে তেমনটাও না। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা থাকে গ্রামে। যেখানে নেই পর্যাপ্ত নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা। অনেকের নেই প্রয়োজনীয় ডিভাইস। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি ক্লাস বা পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেয়া যায়, তবে সেটি সেশনজট কিছুটা হলেও কমাতে পারতো। এতে করে অনলাইন ক্লাস থেকেও মুক্তি পেত শিক্ষার্থীরা। এরকম কিছু সম্ভব না হলে শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক এবং প্রয়োজনীয় ডিভাইস নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাস পরীক্ষা শুরু করা উচিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এখন সময়ের দাবি
মেহেদী হাসান জিহাদ, চারুকলা অনুষদ
চেনা শহর, চেনা প্রকৃতি সবকিছুই অচেনা হয়ে ধরা দিয়েছে। এক অচেনা, অদেখা শক্তি পৃথিবীটাকে উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে। সমগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করে নিয়েছে। সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা করোনাভাইরাসের থাবায় জর্জরিত। এমতাবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার গতি হারিয়ে ফেলছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে না যেতে পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর না খোলায় শিক্ষার্থীরা অন্যান্য পথ বেছে নিচ্ছে। কেউ কেউ পড়াশোনা বাদ দিয়ে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। অনলাইনে পাঠদান কর্মসূচী চালু থাকলেও তা ততটা গ্রহনযোগ্য ও কার্যকর হয়নি। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা দিশেহারা ও বিপদগ্রস্ত। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া এখন সময়ের দাবি। নতুবা এভাবে চলতে থাকলে এর মাশুল সকলকে গুনতে হবে।

আগামীনিউজ/নাসির