জালিয়াতি করে অধ্যক্ষকে অপসারণ

জেলা প্রতিনিধি অক্টোবর ২৮, ২০২০, ০৫:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরঃ জেলার সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের ‘প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়ে বিতর্ক’, বিএনপি আমলে এক অধ্যক্ষকে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে অপসারণ, বর্তমান অধ্যক্ষকে আরেক জালিয়াতি এবং নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে অব্যাহতি পত্র প্রেরণ ইত্যাদি নিয়ে চলছে সভাপতি ও সদস্যদের দ্বন্দ্ব। কোনভাবেই এই কলেজটির জালিয়াতি কমছেই না। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কোন ধরণের তোয়াক্কা না করা, সভাপতি নিজেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন নিয়ে চলছে এখন টানাপোড়ন। কলেজ বন্ধ অবস্থায় সভাপতির সাংঘর্ষিক নিয়মে ক্ষুব্ধ পরিচালনা পর্ষদের অনেক সদস্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজটির সার্বিক বিষয়ে লাগাম টেনে না ধরলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠবে। যাদের শ্রম ও ঘামে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ, তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী উচ্চ শিক্ষার একটি ধাপ বন্ধ হয়ে যাবে। সম্প্রতি সময়ে অনুসন্ধান, কলেজ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি সময়ে কলেজের ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীসহ আরো বিশিষ্টজনদের বিরুদ্ধে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির বিষয় অভিযোগ আনা হয়।

এতে গ্রেফতার হন ৩ শিক্ষক। মামলাটি চলমান। ওই মামলার বাদী হয়েছেন একই কমপ্লেক্সের মধ্যে থাকা ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত হান্নান মিজি। তদন্ত করলে হান্নান মিজির এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোন যোগ্যতাই রাখেন না। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দীর্ঘদিন সর্ষের মধ্যে ভূত থাকার কারণে অপরাধীদের চেহারা ফুটে উঠেনি। তবে কোন ভাল লোক পরিচালনায় আসলেও তাদেরকে থাকতে দেয়া হয় না এসব প্রতিষ্ঠানে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র আছে, যারা কখনো এই প্রতিষ্ঠানের ভাল চায়নি। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সব ধরণের কাজ ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির সাথে তালমিলিয়ে চলছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দন্ত চিকিৎসক সেলিম তালুকদার বলেন, আমাদের চোখের সামনেই ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এলাকার বহু মানুষের শ্রম ঘামে এই অবস্থায় এসেছে। কমিটির বর্তমান লোকজন অনেক সত্য লুকিয়ে রেখেছে। যারা এই কলেজ উদ্বোধন করেছেন অর্থাৎ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, তৎকালীন সময়ের পানি সম্পদ মন্ত্রী মরহুম আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম তাদের উদ্বোধনের উন্মোচনের ফলকটিও সরিয়ে রেখেছেন তারা। এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে কোনভাবে ধ্বংস না হয়, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, কলেজে চলমান যে সব প্রসঙ্গ নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আমি সর্বশেষ চলতি মাসের ৮ অক্টোবর মিটিং-এ জোর প্রতিবাদ করেছি। সভাপতি সুজিত রায় নন্দী নিজেই সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একজন অধ্যক্ষকে ছুটিতে রেখে কিভাবে আবার অব্যাহতি দেয়া হয়। অব্যাহতি পত্রের ফটোকপিও তিনি আমাদেরকে দেখাতে পারেননি। আমি বলেছি আইন কি বলছে তা দেখার জন্য। প্রায় একই ধরণের কথা বলেছেন আরেক সদস্য জহিরুল ইসলাম তালুকদার।

তিনি বলেন, সভাপতি সাংঘর্ষিক নিয়মে বর্তমান অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেখিয়েছেন। তিনি প্রভাবশালী ব্যাক্তি, আমরা রেজুলেশনে স্বাক্ষর দিয়েছি, কিন্তু অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হাসান খান যদি কোন অপরাধ করে থাকে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন ছিলো। তিনি ছুটি শেষে যোগদান করতেন। তারপর তাকে অব্যাহতি এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেয়া যেত। কলেজ কমিটির আরেক সদস্য আমিনুল হক বিএসসি বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ ছুটিতে ছিলেন। অব্যাহতি পত্রও দিয়েছেন। যদিও আমরা অব্যাহতি পত্র দেখিনি। তবে সকলের সিদ্ধান্তই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কলেজের নতুন পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন হয়।

এই কমিটির নতুন অভিভাবক সদস্য আ. রাজ্জাক মিজি বলেন, কমিটি গঠন হওয়ার পর কোন দাওয়াত পাইনি। অক্টোবর মাসের ৬ তারিখে কলেজের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ আমাকে ফোন দিয়ে বললেন মিটিং হবে আপনাকে জানাব। এরপর ৮ তারিখ সকালে আবার ফোন দিলে আমি মিটিং এ যাই। কিন্তু মিটিং এ যে সব আলোচনা হয়েছে, সেগুলো তারা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। যা ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষার মিটিং।

কলেজ পরিচালনায় দীর্ঘদিনে থাকা নির্বাচিত কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর মিজি জানান, এই কলেজের অনেক কাজের আমি প্রত্যক্ষদর্শী। তবে এমন সিদ্ধান্ত কোন দিন দেখিনি। একজন অধ্যক্ষকে দুই মাসের ছুটিতে রেখে অব্যাহতি দেয়া, কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

সভাপতি সুজিত রায় নন্দী নিজেই সব সিদ্ধান্ত একা নিয়েছেন। আমি প্রতিবাদ করে বলেছি আমরা যেন আপনার এ ধরণের সিদ্ধান্ত কোন বিপদে না পড়ি। তিনি বলেছেন, কিছুই হবেনা আমি মন্ত্রী ও এমপিদের সাথে কথা বলেছি। উনার কথায় রাজ্জাক মিজি ছাড়া বাকী সকল সদস্য স্বাক্ষর দিয়েছে। যদি কোন অনিয়ম হয়, তাহলেই সকলেই আইনের আওতায় আসবে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হাসান খান বলেন, ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি ২৩ আগষ্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলাম। আমি কোন অব্যাহতি পত্র দেইনি। যদি দিয়ে থাকি তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার অব্যাহতি পত্র সাংবাদিকদেরকে দেখাতে পারেন। ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সুজিত রায় নন্দী এই বিষয়ে বলেন, যেসব বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়েছে, এগুলো সঠিক নয়। আমি কোন ধরণের জালিয়াতি করি নাই। আমার কাছে সকল কাগজপত্র আছে।

আগামীনিউজ/এএইচ