থানায় গৃহবধূকে যৌন হয়রানি, এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা

জহির খান, বরিশার জেলা প্রতিনিধি জুন ১, ২০২১, ০৮:১০ পিএম

বরিশালঃ জেলার কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পুলিশি সেবা দেয়ার নামে থানার মধ্যে এক গৃহবধূকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। 

প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ নিয়ে ওই নারীর  দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরী (জিডি) তদন্তের নামে তাকে থানায় ডেকে আনে এসআই আসাদুল। পরে স্বাক্ষর গ্রহণের অযুহাতে এসআই আসাদুল বাদীর (ওই নারী) শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন এবং ঘাড়ে চুমু দেন।  

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ঘটিত এমন ঘটনায় গত সোমবার (২৪ মে) বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন যৌন হয়রানির শিকার ওই গৃহবধূ। মামলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধেও অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে বিষয়টি এক সপ্তাহ পর সোমবার (৩১ মে) জানাজানি হলো। 

মামলার বাদীর অভিযোগ, পুলিশের চাপের মুখে বিষয়টি এতোদিন কাউকে জানাতে পারেননি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা রোড এলাকার বাসিন্দা ওই গৃহবধূ তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যা তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলাম বাদীকে থানায় হাজির হতে বলেন। পরে গত ১৬ অক্টোবর ওই গৃহবধূ (বাদী) থানায় গেলে এসআই আসাদুল নানা অজুহাতে তার কক্ষে বাদীকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে স্বাক্ষর গ্রহণের অযুহাতে এসআই আসাদুল বাদীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন এবং ঘাড়ে চুমু দেন। এর প্রতিবাদ জানালে মামলার আসামি এসআই আসাদুল বাদীকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন এবং বিবাহ করার আশ্বাস দেন। এ সময় বাদীর স্বামী এসে পড়লে এসআই আসাদুল ওই নারীকে ছেড়ে দেন। 

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ঘটনার পরপরই বাদী ওই গৃহবধূ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি মৌখিকভাবে জানালে বিচার করবেন বলে আশ্বস্ত করে ওসি তখন ভুক্তভোগীকে জানিয়েছিলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে একজন নারী এএসআই তদন্ত করবেন। কিন্তু গৃহবধূ ওই এএসআইয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে জানতে পারেন তিনি কিছুই জানেন না। মূলত অসত্য অযুহাতে কালক্ষেপণ করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে থানায় লিখিত এজাহার দিতে চাইলে তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। মামলায় থানার সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যালোচনা করলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে বলেও বাদী উল্লেখ করেছেন। 

এদিকে মামলার বিষয়ে অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত করতে যাওয়ায় মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম পিপিএম জানান, মামলার বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে আমরাও খতিয়ে দেখছি। বাদীর আইনজীবী আসাদুজ্জামান হাওলাদার জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বরিশাল জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবির জানান, এখন পর্যন্ত এমন কোনো মামলার দায়িত্ব পিবিআইতে আসেনি। মামলার দায়িত্ব পেলে যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে।