পুলিশকন্যা রুম্পার লাশ পড়ে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০৬:৪০ পিএম

ঢাকা : আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদ থেকেই পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃতদেহ নিচে পড়ে। ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্তে প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য নিশ্চিত হয়। রিমান্ডে থাকা রুম্পার প্রেমিক আবদুর রহমান সৈকতের কাছ থেকে এসব তথ্য ক্রসচেক করছে পুলিশ।

এছাড়াও ১১ তলা আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে পাওয়া জুতার চাপ সিআইডির ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জুতার ছাপের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং লাশের মেডিকেল প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। কেননা রিপোর্ট দুটি পাওয়ার পরই রুম্পার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সৈকতের সঙ্গে রুম্পার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে সেই সম্পর্কের ইতি টানতে চাইলে সৈকত ও রুম্পার মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এতো কিছুর পরও রুম্পা বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি। ঘটনার দিন সৈকত তার সহযোগীদের নিয়ে রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর সেই বাসার ছাদে নিয়ে যান। একপর্যায়ে তাকে ওই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বলে মনে করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সিদ্দেশ্বরীর রাস্তা থেকে রুম্পার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শনিবার সৈকতকে আটকের পর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রুম্পার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির রমনার জোন টিমের পরিদর্শক শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস। গোয়েন্দা পুলিশ সৈকতের সহযোগী যারা ছিল তাদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে ডিবি পুলিশ আদালতকে জানান, রুম্পা ও সৈকতের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দিন দিন তাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। ৪ ডিসেম্বর বিকেলে তারা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেখা করেন। তখন কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেন সৈকত। রুম্পা বারবার অনুরোধ করলেও সৈকত সম্পর্ক রাখতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দু’জনের মনোমালিন্য ও বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এর জের ধরে ওই দিন রাত পৌনে ১১টায় সৈকত তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে রুম্পাকে ৬৪/৪ সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িটির ছাদে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে রুম্পাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রুম্পার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বিজয়নগরে দাফন করা হয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বুধবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/৪ নম্বর বাড়ির প্রধান গেটের সামনে রুম্পার লাশ পড়েছিল। আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই সময় ওপর থেকে বিকট শব্দে কিছু একটা পড়েছিল। পরে বেরিয়ে দেখেন রাস্তায় পড়ে আছে এক তরুণীর লাশ। রুম্পার লাশ যেখানে পড়েছিল ওই রাস্তার এক পাশে চারতলা এবং অপর পাশে পাঁচতলা একটি ভবন রয়েছে। ওই রাস্তার মাথায় রয়েছে একটি ১১ তলা ভবনের (আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স) পেছন দিক। কিছু সমীকরণ মেলায় ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ১১ তলা ভবনের ছাদ থেকেই পড়েছেন।

গত বুধবার রাত পৌনে ১১টায় সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। যে জায়গায় এ ঘটনা ঘটে তার আশপাশে বেশকিছু ছেলে ও মেয়েদের হোস্টেল রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন হবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। তবে রুম্পা পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগে। কিন্তু তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড থেকে।

আগামীনিউজ/এমআরএস/এএম