ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, জামাত শুরু সকাল ৯টায়

জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ জুন ২৮, ২০২৩, ০২:২৮ পিএম

কিশোরগঞ্জঃ ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদুল আজহার বড় জামাত। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এটি হবে ঈদুল আজহার ১৯৬তম জামাত। সকাল ৯টায় শুরু হবে ঈদের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদউদ্দিন মাসউদ।

ঈদের জামাতকে ঘিরে প্রতিবছরেই এলাকায় অন্য আরেক উৎসবের আমেজ ধরা দেয়। মাঠে আয়োজনের শেষমূহুর্তের তোড়জোড় চলছে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি, জেলা পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষ জামাতকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করছে। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরইমধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় লোকজনও জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার আয়োজন দেখে খুশি।

স্থানীয় মুসল্লি জুবায়ের বলেন, আমরা অনেক খুশি যে এবারো ঈদের জামাত হচ্ছে। ছোট বেলা থেকে নামাজ পড়ছি। এখানে নামাজ পড়লে আলাদা শান্তি লাগে। ৪০ বছর ধরে এই মাঠে নামাজ পড়ছে এমন দাবি করে আরেক মুসল্লি মুরতজ আলী বলেন, বাবার হাতে ধরে ছোট বেলা থেকে এখানে এসে নামাজ পড়ি, এটি আমাদের ঐতিহ্য। শোলাকিয়া ইদগাহ মসজিদের খতিব বলেন, এখানে দেশ বিদেশ থেকে মুসল্লিরা আসে নামাজ আদায় করতে। সবার মনের একটা প্রত্যাশা বেশি মানুষের সাথে জামাত আদায় করলে সওয়াব বেশি হয়।

মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ প্রায় শেষের পথে। সংস্কার করা হয়েছে মুসুল্লিদের ওজুখানা এবং টয়লেট। করা হয়েছে নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে জামাতের সব আয়োজন। জামাতের সময় মাঠ ও আশপাশে মোতায়েন থাকবে দুই প্লাটুন বিজিবি, হাজার খানিক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি মাঠে সাদাপোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এছাড়াও পুরো ঈদগাহ মাঠ থাকছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা ওয়াচ টাওয়ারগুলো ব্যবহার করবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ২০১৬ সালের জঙ্গী হামলাকে মাথায় রেখেই এবারের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা তৈরি করা হয়েছে, পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়েই মুসল্লিরা জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলেও জানান তিনি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে শুধুমাত্র জায়নামাজ নিয়ে মাঠে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাসেল শেখ।

এদিকে শোলাকিয়া মাঠের ঐতিহ্য ও সুনাম অনুযায়ী এ মাঠের উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আরো দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো দরকার শোলাকিয়া মাঠকে। অল্প বৃষ্টিতেই মাঠে ঝমে যায় পানি। মাঠের বাউন্ডারি ওয়ালগুলিও ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পড়ছে। এলাকাবাসীর দাবি শুধু ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করেই যেনো এর উন্নয়ন থেমে না থাকে। সকল সমস্যা দূর করে এই মাঠকে নান্দনিক একটি অবকাঠামো দেওয়া হওক।

দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। মুসল্লিদের নিয়ে একটি ভৈরব থেকে আরেকটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ যাবে। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক এবং কয়েকটি মেডিক্যাল টিমও। তাছাড়া মুসল্লিদের জন্য খাবার পানি ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানালেন পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, ১৯৬ তম ঈদুল আজহার জামাতের জন্য প্রস্তুত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশসন ও পৌরসভার নিরলস পরিশ্রমে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এসময় নিরাপদে জামাত আদায়ের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান পৌরসভার মেয়র।

জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

বুইউ