পিঠে বড়শি গেঁথে চরক পূজা, দেখতে হাজারও মানুষ

জেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম

জয়পুরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হাজারও ভক্তের সমাগমে অনুষ্ঠিত হয়েছে চরক পূজা। পূজা ঘিরে শত শত ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন আক্কেলপুর  উপজেলার হোসেন নগর গ্রামের মাঠে।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) আক্কেলপুর উপজেলার হোসনে নগর গ্রামে মনের ইচ্ছা পূরণে চরক গাছের গোড়ায় পূজো দিয়েছেন ভক্তরা। আর পূজার মূল আকর্ষণ পিঠে বড়শি গেঁথে চরক গাছে বেঁধে শূন্যে ভেসেছন বগুড়া কাহালুর সাধক সুপদ চন্দ্র।

পূর্বপুরষদের রেখে যাওয়া ধর্মীয় আচার মেনে পিঠে বড়শি গেঁথে এ ধরনের আচারে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল থেকে পূজা ঘিরে শত শত ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন আক্কেলপুর  উপজেলার হোসেন নগর গ্রামের মাঠে। পূজো দেওয়া ছাড়াও পূজার মূল আকর্ষণ চরক গাছে পিঠে বড়শি গেঁথে ঘোরানোর অপেক্ষায় ছিলেন সবাই।

ঢোল আর বাদ্যের তালে তালে সুপদ চন্দ্রের  পিঠে বরশি গাঁথেন পূজারি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অপেক্ষা শেষ হয় ভক্তদের। সাধক সুপদ চন্দ্রকে ঝোলানো হয় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু চরকে। এরপর ভক্তদের উলু ধ্বনি ও ঢোলের তালে চরক গাছে শূন্যে ঘুরতে থাকেন তিনি। সুপদ চন্দ্র  ঘুরাতে অপর প্রান্তে রশি ধরে ঘুরাতে থাকেন কয়েকজন ভক্ত।

চক্করের মাঝে মাঝে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, সুপদ চন্দ্রকে থামানো হয় কয়েকবার। এ সময় কল্যাণের আশায় ভক্তদের অনেকেই সুপদের পায়ে প্রণাম করেন। এভাবেই শেষ হয় চরক পূজা।

অন্যদিকে চরক পূজাকে কেন্দ্র করে মাঠের মধ্যেই একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে হরেক রকমের মুখোরচক খাবার। সাত মিশালি, মুড়ি মাখা, পেঁয়ারা মাখা, গুড়ের গোজা, মোয়া, মিষ্টিসহ নানা পদের খাবার। চরক পূজা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখছে আর এসব খাবার খাচ্ছেন। কেউবা নিজে খাবার খেয়ে বাসায় খাবার নিয়ে যাচ্ছেন।

পূজায় আসা স্থানীয় বিকাশ মন্ডল বলেন, চরক পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। পূজায় আসতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। ঠাকুরের কৃপায় ভালোভাবে পূজা শেষ হয়েছে। এখানে সবাই মনের বাসনা নিয়ে আসেন। পরে পূজো দিয়ে উৎসব করেন।

জয়ন্তী সাহা নামে আরেকজন বলেন, আজ চরক পূজায় আমাদের ধর্মাবলম্বীদের অনেক ভিড় হয়েছে। সবাই চরক পূজায় অংশ নিয়েছেন। শুধু হিন্দুরাই না, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও বরাবরের মতো চরক পূজা দেখতে এসেছেন। সবাই মিলে উৎসব উদযাপন করেছি আমরা।

জাহিদ নামে একজন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই শুনেছি চরক পূজার নাম। এবার নিজের চোখে দেখলাম। খুবই মারাত্মক পূজা এটা। যখন সাধক উপরে উঠে ঘুরছে তখন আমার খুব ভয় লেগেছিল।

সাধক সুপদ চন্দ্র বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে আমরা চরক পূজায় অংশ নিচ্ছি। পূজাস্থলে আসার আগে বাড়ির মন্দিরে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠিত করেছি। আর গত কয়েকদিন ধরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছি। পূজা ভালোভাবে শেষ করতে পারায় আমি খুশি।

এসএস