পাহাড়ে রং ছড়াচ্ছে জ্যাকারান্ডা ফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০৫:২৫ পিএম

খাগড়াছড়িঃ গত কয়েক দিন ধরে পাহাড়ে আকাশের মন ভালো নেই। আকাশ কালো করে রেখেছে মন কেমন করা মেঘ। আবার কখনো কখনো হঠাৎ বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির শেষে মেঘ কেটে যায়। তখন সূর্যের আলো ছড়িয়ে দেয় পাহাড় জুড়ে। এমন দৃশ্যের মধ্যে চোখে পড়ে খাগড়াছড়ির আঁকাবাঁকা পাহাড়ের গায়ে এক ধরণের গাছ জ্বলজ্বল করছে। সবুজ পাহাড়ে রং বিলাস ছড়াতে শুরু করেছে জ্যাকারান্ডা ফুল। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজ উদ্যোগে বিদেশি এই ফুলের চারা রোপণ করেছেন খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা এই গাছের ফুল এখন পথিকের দৃষ্টি কাড়ছে। 

জ্যাকারান্ডা মূলত স্বপ্ন গাছ নামে পরিচিত। এটি বিগ্নোনিয়াসি পরিবারের সদস্য। এর অদিনিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা।  সবুজ চাকমা বলেন, ‘চায়না থেকে বীজ সংগ্রহ করেছি। পাহাড়ে জ্যাকারান্ডা চারা রোপণের বেশ কয়েকটা উদ্দেশ্য আছে। এরমধ্যে— আমাদের সড়কগুলো শোভাবর্ধন বৃক্ষের মাধ্যমে নান্দনিকতা আনায়ন করা। শোভাবর্ধণ বৃক্ষের মাধ্যমে পর্যটনবান্দব সড়ক গড়ে তোলা অন্যতম।’

তার দাবি, বিদেশের মতো করে যদি এখানেও এ ফুল ফোটে, তা হলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক দেখতে আসবে শুধু খাগড়াছড়িতে।
 
তিনি বলেন, আমাদের সড়কগুলোতে বিদেশী সড়কের মতো নান্দনিকতা নেই। তাই আমি এ নিয়ে স্টাডি করেছিলাম পরে আমার বেস্ট মনে হল জ্যাকারান্ডা। জ্যাকারান্ডা সড়ক শোভাবর্ধক বৃক্ষ। সারাবিশ্বে এর জনপ্রিয়তা আছে। যেমন চায়না, অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের শহরের শোভাবর্ধক হিসেবে এই গাছ লাগানো হয়েছে। 

মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা এলাকায় গেলে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের দুই পাশে বিশ ফুঁট দূরত্ব করে সারি সারি জ্যাকারান্ডা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। ডালে ফুটতে শুরু করেছে বিদেশী এ ফুল। 

খাগড়াছড়ি শহরের মহিলা কলেজ সড়ক থেকে বটতলী এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে চারা রোপণ করা হয়েছে। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের মহালছড়া এলাকা থেকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার ব্যাঙমারা এলাকা পর্যন্ত দুই হাজার জ্যাকারান্ডা ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে।  

ফুলপ্রেমী সাথোয়াই মারমা বলেন, বিদেশী ফুল পাহাড়ে দেখার মতো ফুটতেছে। ফুলে প্রচুর সুগন্ধ আছে। সুগন্ধের কারণে পাখি ও মৌমাছিরা আসবে।

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা ঢাকা মেইলকে বলেন, জ্যাকারান্ডা পরীক্ষামূলক লাগানো হয়েছে। ফুল ফুটছে... আমার পর্যবেক্ষণ করতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। দুই বছর পর বলতে পারব এটি এই সড়কের জন্য উপযুক্ত কিনা। যদি পর্যবেক্ষণ দেখা যায় আমাদের জন্য ফুল ভালো ফুটতেছে। তখন আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগাব।  

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে খাগড়াছড়ির জেলার মহিলা কলেজ সড়ক ও খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে পরীক্ষামূলকভাবে হাজারখানেক জ্যাকারান্ডা ফুলের চারা ব্যাক্তিগতভাবে রোপণ করি। পাহাড়ের আবহাওয়ায় গাছটি কতটা সৌন্দর্য দিতে পারে তা পর্যবেক্ষণ চলছে। রোপণের দুই বছরের মাথায় এ বছর বেশ কিছু গাছে ফুল ফুটেছে। অসাধারণ সৌন্দর্য দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আশা করছি আগামী দুই-এক বছরের পাহাড়ে জ্যাকারান্ডা প্রকৃত সৌন্দর্য কেমন তা পর্যবেক্ষণ করতে পারব। 

সবুজ চাকমা জানান, মহালছড়ি উপজেলা থেকে জালিয়াপাড়া সিন্ধুকছড়ি পর্যন্ত ৩ হাজার চারা লাগাব। কিছু দিনের মধ্যে শুরু করব।

প্রকৃতিবিষয়ক লেখক ও পাখি গবেষক সৌরভ মাহমুদ বলেন, জ্যাকারান্ডা বিদেশী ফুল। দেখতে খুব সুন্দর। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পার্কে লাগানো যেতে পারে। সড়কের দুই পাশে লাগালে বেশ দেখতে হয়। বিদেশে ঝোঁপ করে ফুটে। আমাদের দেশে কয়েকটি ডালে ফোটে। চীন, নেপালসহ কয়েকটি দেশে এদের দেখা যায়।

এসএস