কুয়াকাটায় লম্বা ছুটিতে ঈদের তৃতীয় দিনেও লাখো পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) জুলাই ১২, ২০২২, ০৩:৩৮ পিএম

পটুয়াখালীঃ সূর্যোদয় ওসূর্যাস্তের বেলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রথম দিন থেকেই সমুদ্র সৈকতে লাখো পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত। বহু প্রতিক্ষীত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে বহু পর্যটক। ফেরি ছাড়া কুয়াকাটা ভ্রমণে এবারের ঈদে প্রচুর পর্যটকের ভিড়। কুয়াকাটার একাধিক পর্যটন স্পট পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতে আছে রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিকা স্থাপত্য নিদর্শন। এরই মধ্যে ৮০/৯০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়েছে, বুকিং করা পর্যটক ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত এসব পর্যটকদের সবধরনে নিরাপত্তা ও সেবা দিতে প্রস্তুত উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পৌর কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর ১৮ কিলোমিটার বেলাভূমি রয়েছে। পর্যটকরা এখানকার নারিকেল বিথী, ফয়েজ মিয়ার বাগান, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখেন। এছাড়া কুয়াকাটার পশ্চিমে সমুদ্র পথে ফাতরার বন, গঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লীও ভ্রমণ-পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে প্রকৃতির মনোরম-নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার পাশপাশি সাগর সৈকতে ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ অবলোকনের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেননা ভ্রমণ-পিপাসুরা। পদ্মা সেতুর দ্বার উম্মোচন হওয়ায় পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণের সকল রেকর্ড এবার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

রংপুর থেকে থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সারা বশির দম্পতি জানান, এর আগেও আমরা কুয়াকাটায় ভ্রমনে এসেছি, ৭থেকে ৮টি ফেরি পার হতে হয়েছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। ফেরি ঘাটে বসে থেকে, আজকে পদ্মা সেতু পার হয়ে আসলাম মাত্র ৬ ঘণ্টায়, তাও আবার এসে হোটেলে রুম পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

কুয়াকাটায় থ্রি স্টার মানের অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আল-আমিন খান উজ্জল জানান, পর্যটক বরণে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে তাদের ভিলা এবং রিসোর্টের বেশিরভাগই অগ্রীম রুম বুকিং হয়ে গেছে। এখনও অনেক পর্যটকরা রুমের জন্য যোগাযোগ করছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, পদ্মা সেতুৃ চালু হওয়ার ফলে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে অসংখ্য পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর ৮০ ভাগ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, এবছর প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে কুয়াকাটায় ছুটে আসছে প্রচুর পর্যটক, তাই আগত এসব পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবাদানে কুয়াকাটা পৌরসভা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার ঈদুল আজহায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রচুর হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আগত পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশপাশি জেলা পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছে। সবকিছু মিলিয়ে পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে কুয়াকাটা ভ্রমণ করতে পারে এবং কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের টিম রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো: শহিদুল হক জানান, পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষন করছি।

রাসেল কবির মুরাদ/এমবুইউ