কলাপাড়ায় বনবিভাগের পাশেই গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি এপ্রিল ২৩, ২০২২, ০৪:২৩ পিএম

পটুয়াখালীঃ কলাপাড়ায় বনবিভাগের পাশেই গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল। আইন বহির্ভূতভাবে বনের পাশে স্থাপিত প্রভাবশালীদের এসব করাতকল প্রকাশ্যে চললেও প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন বিভাগের কোন উদ্দোগ নেই। এছাড়া ফাতরা, লেম্বুর বন, গঙ্গামতি সহ উপকূলীয় এলাকার বনাঞ্চল উজাড় হয়ে আসা গাছ এসব করাতকলে চেরাই হয়ে হাতবদল হচ্ছে কাঠ ব্যবসায়ী ও ইটভাটা মালিকের কাছে। এসব নিয়ে বনবিভাগের কোন মামলা না হলেও যত্র তত্র মামলা হচ্ছে দরিদ্র শ্রেনীর মানুষের নামে। যারা শুকনো পাতা ও চুরি হয়ে যাওয়া গাছের গোড়ার অংশ ছুঁয়ে আসামী হয়ে কোর্টের বারান্দায় ঘুরছে বছরের পর বছর। বনবিভাগের এসব মামলা থেকে আদালতের রায়ে এক সময় মুক্তি পায় দরিদ্র মানুষ। আর আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হন বন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহিপুর রেঞ্জের অধীন মহিপুর বন্দর, খাঁজুরা, কুয়াকাটা, গঙ্গামতি এবং ধুলাসার এলাকার সংরক্ষিত এবং সামাজিক বনায়নের আশপাশেই এসব করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। এক শ্রেণীর প্রভাবশালী বেড়িবাঁধের বাইরে, নদীর তীরে পর্যন্ত করাতকল স্থাপন করেছে। মহিপুর, লতাচাপলী, ধুলাসার, ডালবুগঞ্জ, কুয়াকাটা, নীলগঞ্জ, হাজীপুর, মিঠাগঞ্জ, লালুয়া, বালিয়াতলীতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। কুয়াকাটাগামী মহাসড়ক ও বিকল্প সড়কের পাশের জনবহুল এলাকাসহ আবাসিক এলাকায় বসানো হয়েছে করাতকল। লালুয়ার বানাতিবাজারের অবৈধ করাতকল বন্ধে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ করার পরও প্রতিকার পায়নি। এছাড়া সংরক্ষিত বনের গাছ চেরাই হয় রাতের বেলা। রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেটচত্র।

বনবিভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, কলাপাড়া ও মহিপুর রেঞ্জে মোট ৭৭ টি করাতকল রয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টির কোন বৈধতা নেই। মহিপুর রেঞ্জের ৪১ টি করাতকলের ৩৭টি অবৈধ। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের চোখের সামনে চলমান রয়েছে এসব অবৈধ করাতকল। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশে রয়েছে করাতকল।

কুয়াকাটার একাধিক পরিবেশকর্মী জানান, কুয়াকাটায় করাতকল বসানো হচ্ছে আইন বহির্ভূত ভাবে। ফলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি বনবিভাগের ১ কিলোমিটারের মধ্যে খাপড়াভাঙ্গা নদীর তীর দখল করে মহিপুর-আলীপুরে বসানো হয়েছে অনেকগুলো করাতকল।

মহিপুর বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মহিপুর রেঞ্জের অধিকাংশ করাত কল অবৈধ। মাত্র ৮টি করাতকলের লাইসেন্স রয়েছে। অবৈধ করাত কল বন্ধ করার পাশাপাশি কুয়াকাটা পৌর এলাকায় আরও ৩টি করাতকলের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া করাতকল ও ইটভাটা মালিকের সাথে বন বিভাগের সখ্যতা থাকার বিষয়টি সঠিক নয়।

কলাপাড়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানায়, সকল করাতকলের লাইসেন্স করাসহ নবায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। করাতকল চালাতে। বৈধতা থাকতে হবে, নিয়মের বাইরে কেউ করাতকল চালু করতে পারবেনা বলে তিনি জানান।

রাসেল কবির মুরাদ/এমএম