জিপিএ-৫ পাওয়া আলমতাজের সামনের এখনো পথ অনিশ্চিত

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৩, ২০২২, ০৬:০৪ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

বরগুনাঃ মোসা. আলমতাজ। জন্মের পর থেকে অভাবের সংসারে জীবনের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করে চলেছে। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি। পিছু হটেনি লড়াই থেকে। বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে নিজের চেষ্টায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার ফলাফলে খুশি হয়েছে পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে তার। 
আলম তাজের খবর পেয়ে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসলেও  সামনের পুরোটা পথ এখন আলমতাজের অনিশ্চিত। দারিদ্র্যতার কারণে আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় মা ও তার চোখমুখে হতাশার ছাপ।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ছোপখালী গ্রামে নানা বাড়িতে আমলতাজের বেড়ে ওঠা। বাবা আব্দুর রহমানের বাড়ি পাবনায় হলেও কখনো দাদা বাড়িতে যাওয়া হয়নি তার। আলমতাজ হাইস্কুলে পড়া অবস্থাতেই তার বাবা পাবনায় দ্বিতীয় আরেকটি বিয়ে করেন। এর পর থেকে আলমতাজের বাবা তাদের খোঁজ খবর নেওয়া কমিয়ে দেয়। মা মোসা: শ্যামেলা বেগম ঝিয়ের কাজ এবং ইট ভেঙ্গে যে অল্প আয় করেন তা দিয়েই চলে দু'জনের সংসার। তবে গত বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আলমতাজের মাথার উপর থেকে বাবার শেষ ছায়াটুকুও চলে যায়।
আলমতাজের মা শ্যামেলা বেগম জানান, মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। তবে মেয়ের ফলাফলে খুশি হলেও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সে আরও পড়তে চায়। তাই সে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খরচ নিয়ে।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অভাবের সংসারে যেখানে বেঁচে থাকা দায় সেখানে মেয়েকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখন মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে তাকে কলেজে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু তাকে কলেজে ভর্তি করার সামথর্য আমার নেই নেই। এজন্য তার কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ছোপখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে আলমতাজ। এসএসসি পরীক্ষার মতো স্কুল জীবনের সব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা আলমতাজ ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে গরিব অসহায়দের সেবা করতে চায়। কারও কাছে একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে হাসি ফুটাবে অন্তরের মুখে।
আলমতাজ বলেন, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পড়ালেখা করেছি। পাশাপাশি প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়েছি। আবার কখনও কখনও মায়ের কাজে সহযোগিতা করেছি। এই আয় থেকে নিজের পড়ালেখা খরচের পাশাপাশি সংসার চলেছে।

ছোপখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করা আলমতাজের জন্য বড়ই কষ্টের। বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীর চেয়ে আলাদা মেধা সম্পূর্ণ ছিল সে। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন তাকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছে। সমাজের শিক্ষানুরাগী কোনো সুহৃদ ব্যক্তির একটু সহযোগিতা পেলে তার উচ্চশিক্ষার পথ নিশ্চিত হতে পারে।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, অর্থের অভাবে মেধাবী আলমতাজের লেখাপড়া যেন বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য তাকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।

আগামীনিউজ/এসএস