অরক্ষিত সৈয়দপুর বিমানবন্দর বারবেড অয়ার ফেন্সিং ২৪ স্থানে কাটা

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৩, ২০২১, ০৪:৩৮ পিএম
ছবিঃ আগামীনিউজ

নীলফামারীঃ জেলার ব্যস্ততম সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে সুরক্ষিত রাখতে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সীমানা প্রাচীরের ওপর বারবেড অয়ার ফেন্সিং (কাটাতারের গোলাকার বেড) নির্মাণ করা হয়। এজন্য ব্যয় করা হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। মাত্র দুই বছরের মাথায় তা আর কাজে আসছে না। সরকারকা মাল, দরিয়ামে ঢাল এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফের নতুন করে সীমানা প্রাচীরের ওপর বারবেড অয়ার ফেন্সিং নির্মাণ করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৬ নভেম্বর সিভিল এ্যাভিয়েশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ জানান, শিগগির প্রাচীরের ওপর কাটাতারের গোলাকার বেড় দেয়ার কাজ শুরু হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের দুই কিলোমিটার লম্বা প্রাচীরের ওপর বারবেড অয়ার ফেন্সিংয়ের কমপক্ষে ২৪টি স্থানে কাটা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে যেসব স্থানে বাড়িঘর আছে সেইসব এলাকায় বারবেড অয়ার ফেন্সিংয়ের তার কাটা হয়। দূরপথ না ঘুরে কাটা স্থান ব্যবহার করে স্থানীয়রা সহসাই বিমানবন্দর রানওয়েতে প্রবেশ করতেই এমনটি করা হয়েছে বলে একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। কথা হয় বিমানবন্দর মুন্সিপাড়ার অধিবাসী জহির উদ্দিন, জেয়ারতুল্লা, কালাম, রহিমা, ছোট মাই ও আকবরের সঙ্গে। তারা জানান, বিশেষ করে বর্ষাকালে মাঠঘাট পানিতে ডুবে যায়। ফলে দেখা দেয় চরম গোখাদ্য সংকট। সে সময়ে মানুষ পশুদের খাবার জোগান দিতে সীমানা প্রাচীর পার হয়ে রানওয়েতে প্রবেশ করে ঘাস কাটে। নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঘাস কেটে দ্রুত ওয়াল টপকাতেই প্রাচীরের ওপরে নিরাপত্তা বেষ্টনির তার কাটা কেটে ফেলেছে অনেকে।

তারা আরো জানান, আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ ঘাস কাটার জন্য চুপিচুপি রানওয়েতে প্রবেশ করে সীমানা প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে। এতো সাধারণ মানুষের সোজাসাপটা উত্তর। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের অছিলায় রাতের বেলা বিমানবন্দরের অনেক ছোটখাটো পরিত্যক্ত মালামাল পাচার করতে বারবেড অয়ার ফেন্সিংয়ের কাটা স্থান ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে রানওয়ে পাহারায় ৫৭ জন পুলিশ ও ৪৭ জন আনসার রয়েছে। তবে বিমানবন্দর ব্যস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্য শুধুমাত্র রাতের বেলা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে। আর আনসার সদস্যদের মধ্যে অর্ধেক দায়িত্ব পালন করলেও বাকিরা শুয়ে বসে দিন কাটায়। 

নির্মাণের দুই বছরের মাথায় বারবেড অয়ার ফেন্সিংয়ের বেহাল অবস্থা বিষয়ে জানতে কথা হয় সিভিল এভিয়েশনের এক প্রকৌশলীর সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন কাজের মান ও সামগ্রী নিম্নমানের হওয়ায় বারবেড অয়ার ফেন্সিং সহজেই ভাঙ্গা সম্ভব হয়েছে। তার মতে ওয়াই এ্যাংগেলের সঙ্গে মজবুত করে ওয়েল্ডিং করা হলে সহজে কাটা বা ভাঙ্গা সম্ভব ছিলনা প্রাচীরের ওপর দেয়া বারবেড অয়ার ফেন্সিং।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় বর্তমান সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন সেই সময়ে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক ছিলেন শাহীন আহমেদ। ঠিকাদারের কাজ দেখভাল করে দেখে নেয়ার দায়িত্ব ছিল তার। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করায় অল্প সময়ের মধ্যে বারবেড অয়ার ফেন্সিংয়ের এমন হাল হয়েছে। গচ্চা গেছে সরকারের অর্থ। তার মতে বিমানবন্দরের রানওয়ে সুরক্ষিত রাখতে ফের নতুন করে কাজ শুরু হবে। এজন্য চিঠি চালাচালি চলছে। এবার কোন ঠিকাদার দু নম্বরি কাজ করার সুযোগ পাবে না।

আগামীনিউজ/নাসির