ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ২০

মোক্তার হোসেন, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মে ১০, ২০২১, ০৫:০৭ পিএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

গাজীপুরঃ ঈদের ছুুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গী ও কালিয়াকৈরের দুটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় অন্তত ২০ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সোমবার (১০ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন মিজানুর রহমান (২৪), হাসান মিয়া (২৬), রুবেল মিয়া (২২), জাহিদ হোসেন (২৫), রনি (২৪), মামুন (২৬), সোহেল (২২), রুবেল হোসেন (২৪), ইমরান হোসেন (২৪), রাজীবুল ইসলাম (২৬), মামুন মিয়া (২৭), রবি (২১), লতিফ (১৯), রনি (২২), এহসানুল হক (৩৫), রাজিবুল (২৬), কলি বেগম (২৪), নিজাম উদ্দিন (৩০), সমলা (২৫), ইয়াসিন (২০), হাসিনা (৪০), সাব্বির (২২), সাবিনা (২৫), রিনা বেগম (২০)। গুরুতর আহত ১৩ জন শ্রমিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্যদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের এক পোশাক শ্রমিক অফিসকক্ষে গিয়ে মালিক পক্ষের সাথে ঈদের ছুটির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি আমাদের পক্ষ থেকে ১০ দিনের ছুটি চান। মালিকপক্ষ থেকে সাত দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এরপর তিনি বের হলে পুলিশ এসে তার মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়। পরে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে তাকে আঘাতের কারণ জানতে চান। এসময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।

টঙ্গীর হামীম গ্রুপের পোশাক শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারিভাবে ঘোষিত তিন দিনের ছুটির পরিবর্তে শ্রমিকরা ১০ দশ দিনের ছুটি দাবি করে। কর্তৃপক্ষ ৭ দিনের ছুটি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকেরা সোমবার সকালে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্য়ায়ে আমাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে আমাদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

গাজীপুর শিল্পা পুলিশ (জোন-২) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন জানান, টঙ্গীর মিলগেইট এলাকায় হামীম গ্রুপের পোশাক শ্রমিকেরা সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ১০ দিন ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে তারা কারখানায় ভাংচুর করে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ তাদেরকে মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকে ছুঁড়তে থাকে।

এসময় ২০ মিনিটের মতো ওই মহাসড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রায় আধঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম জানান, সংঘর্ষের সময় শ্রমিকেরা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল ছুঁড়লে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে জীবন রক্ষার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসেল নিক্ষেপ করে। আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পারভেজ হোসাইন জানান, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় রাবার বুলেটে আহত ২০ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আহত একজন পুলিশ সদস্যকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে, কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার স্টার লিঙ্ক ডিজাইন লিমিটেড নামের কারখানা শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই কারখানার শ্রমিকেরা সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারে তাদের ঈদের ছুটি তিনদিন দেয়া হয়েছে। খবরটি কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমকদের বুঝিয়ে সড়কের পাশে নিয়ে যায়। শ্রমিকদের দাবি, তাদের কমপক্ষে ১২ দিনের ছুটি দিতে হবে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ পরিদর্শক কমর উদ্দিন বলেন, কারখানার শ্রমিকেরা ১২ দিনের ছুটি চাইলেও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করলে তারা আন্দোলন ত্যাগ করেন। দুই কারখানা চত্বরেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টঙ্গী মিলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ ৯ শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।