গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রয়াণ

সোমবার শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা, মায়ের কবরে দাফন

বিনোদন ডেস্ক সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ০৩:২০ পিএম

ঢাকাঃ কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জানাজা ও দাফন সময় জানানো হয়েছে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাদ আসর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে কিংবদন্তি এই গীতিকারকে দাফন করা হবে।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল।

তিনি জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে সংস্কৃতি অঙ্গন ও সাধারণ মানুষেরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

এরপর গাজীর মরদেহ নেওয়া হবে চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর বিএফডিসিতে। সেখানে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম জানাজা। সেই সঙ্গে সিনেমা সংশ্লিষ্টরা কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানাবেন।

বাদ আসর গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ রাখা হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। এরপর বনানী কবরস্থানে তার মা খোদেজা বেগমের কবরে তাকে সমাহিত করা হবে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জানাজা ও দাফনে বিলম্ব হওয়ার কারণ তার মেয়ে দিঠি আনোয়ার। দিঠি যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। আজ বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে তার ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে ২১ বছর বয়সে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে। ওই চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘আয়না ও অবশিষ্ট’।

১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখাতেও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। তিনি মোট ৪১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম- ‘শাস্তি’, ‘চোর’, ‘শর্ত’, ‘স্বাধীন’, ‘সমর’, ‘রাগী’, ‘আর্তনাদ’, ‘জীবনের গল্প’, ‘পাষানের প্রেম’, ‘তপস্যা’, ‘ক্ষুধা’, ‘পরাধীন’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’।

অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান লিখেছেন। ২০ হাজারেরও বেশি গানের রচয়িতা তিনি। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ও ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’ তার লেখা তুমুল জনপ্রিয় দুটি গান। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পেয়েছে তার লেখা তিনটি গান।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মহানগর’, ‘নতুন বউ’, ‘নাজমা’, ‘অভিযান’, ‘মা ও ছেলে’, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘বাবার আদেশ’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন।

২০০২ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ২০২১ সালে তিনি সংস্কৃতিতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য গাজী মাজহারুল স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়াও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পাঁচবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, একাধিকবার ‘বাচসাস পুরস্কার’, ‘বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

এমবুইউ