পূর্ণাঙ্গ রায়ের দিকে তাকিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির ওপর ৭.৫% ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এ নিয়ে ওই সময় আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।

ঢাকাঃ দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে বলে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)।

আপিল বিভাগের রায়ের পর গতকাল এ বিষয় নিয়ে বৈঠকে বসে এপিইউবি। এপিইউবি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর ওপর কর আরোপ কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেই প্রশ্ন রয়েই গেছে। 

তারা এখন পূর্ণাঙ্গ আদেশের জন্য অপেক্ষা করবে এবং সেই আদেশ রিভিউ করা যায় কি না সে বিষয়টিও ভাববেন এপিইউবির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণও করবে এপিইউবি।

মঙ্গলবার আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন— বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। তবে এই কর কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। 

আপিল বিভাগের রায়ের পর রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে এপিইউবি‌। তবে কর আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেনি। সভায় এপিইউবির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. আনিস আহমেদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় নেতারা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে। বিদ্যমান ট্রাস্ট আইন-১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান করযোগ্য নয়। তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর দিতে হবে বলে রায় প্রকাশ কেন?

এ জন্য সরকারের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এপিইউবি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত একজন বলেন, গতকাল সভায় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছি। এটা তো দীর্ঘ দিনের আলোচনা। তাই পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি এবং এটা রিভিউ করা যায় কি না তা দেখব।

এপিইউবি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট আইনে এসব প্রতিষ্ঠান অলাভজনক। তবে এখন সেখানে কর আরোপ করা হলে সেটা চলে যায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে। যেটা ভারতসহ অন্যান্য দেশে আছে— লাভজনক এবং অলাভজনক দুটোই। যারা লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করবে তারা সরকারকে কর দেবে আর যারা ট্রাস্ট আইনের অধীনে নিজেদের রাখবে তারা কর দেবে না। এরকম সারা বিশ্বে প্রচলন আছে। তাই আমরা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। আমরা কি এখন তাহলে ট্রাস্ট আইনের অধীনে অলাভজনক নাকি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে যাবে? এগুলো আরও আলোচনার দরকার আছে।
আমরা তো ট্রাস্ট আইনের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করি, সেক্ষেত্রে যদি কর দিতে হয় তাহলে অন্যান্য দেশে যেভাবে চলে সেভাবে চলতে হবে। সব ধরনের আইন তো আছে। সোসাইটি আইনও আছে, অন্য আইনও থাকতে পারে। এরই সঙ্গে ট্রাস্ট আইনও আছে। 

এপিইউবির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপিল বিভাগের আইনি করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে কর কোন পদ্ধতিতে আদায় হবে তা ঠিক করতে পারেনি। যেহেতু আদালতের রায় তাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ করার আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে যেহেতু বিষয়টি সরকারের রাজস্বের বিষয় তাই সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

এদিকে, রায়ের বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস কে মো. মোরশেদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ট্যাক্স দিতে হবে। তবে কীভাবে এবং কখন থেকে ট্যাক্স দিতে হবে তা আদেশের পূর্ণাঙ্গ পাঠ প্রকাশের পর জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের তাৎপর্য এখনও প্রকাশ করা না হওয়ায় এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তাই এখনই বলা যাবে না যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে ট্যাক্স দিতে হবে 

২০১৫ সালে ভ্যাট আরোপ করে পিছু হটে সরকার 
২০১৫ সালে বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির ওপর ৭.৫% ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এ নিয়ে ওই সময় আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। 

তাদের আন্দোলনের মুখে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার।  

এম/