আ.লীগ কার্যালয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি, ভোগান্তিতে নিম্নবিত্তরা

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ১০:৫১ এএম

সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ভর্তুকি মূল্য কিছুটা স্বস্তি দিলেও স্থানের কারণে ভোগান্তি কমেনি তাদের।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কার্ডধারীরা। টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে সময় এবং খরচ বেড়েছে নিম্নবিত্তদের। 


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে হিমশিম খাওয়া ১ হাজার ৪৩৬ জন নিম্নআয়ের মানুষের কাছে টিসিবির পণ্য ভর্তুকি মূল্যে কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভোগান্তি কমেনি। সরকারের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে তীব্র রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব নিম্ন আয়ের মানুষ।

জানা যায়, পরিবার কার্ডধারী একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল ৪৭০ টাকায় কিনতে পারবেন। যার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা।

কার্ডধারীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, সলপ ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে সোনতলা মোড়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। কার্যালয়ের সামনেই রাস্তার উপরে নিম্ন আয়ের কার্ডধারী ক্রেতারা তীবে রৌদ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।


টিসিবি'র পণ্য কিনতে আসা সলপ ইউনিয়নের বাহিমান গ্রামের মাহাতাব সরকার (৬৭) অভিযোগ করে বলেন, সকালে ১৫ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে সোনতলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এসে রোদের মধ্যে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর ৪৭০ টাকায় ৫ কেজি চাল ও দুই কেজি তেল পেয়েছি। দুই কেজি ডাল দেয়ার কথা থাকলেও আমায় দেয়নি। পরে ডিলারের কাছে ডাল চাইতে গেলে বলছে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। টাকা দিয়ে কিনতে এসে যদি সারাদিন ব্যয় করতে হয় তাহলে কি আমাদের পেট চলবে।

পণ্য কিনতে আসা একই গ্রামের গোলজার হোসেন (৪২) বলেন, সেই সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে দিলে আমাদের এতো কষ্ট হতো না। এখানে লাইনের জায়গা হারানোর ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করাতে মহিলা ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। 


টিসিবি'র পরিবেশক মের্সাস মার্জিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা সুবিধাভোগীকে মসুর ডাল না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পণ্য কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে একজন মসুর ডাল পাননি বলে জানিয়েছিল। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। আর উপজেলা থেকে আমাদের যেখানে পণ্য বিক্রি করতে বলে, আমরা সেখানেই বিক্রি করি।

পণ্য বিক্রির তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আল্লামা ইকবাল বলেন, সলপ ইউনিয়নে সর্বমোট ১ হাজার ৪৩৬ টি কার্ডধারী সুফলভোগী রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগে ইউনিয়ন পরিষদেই পণ্য বিক্রি করা হতো। ইউএনও'র নির্দেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান বলেন, আগে টিসিবির পণ্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে দেওয়া হতো। কিন্তু কিছুদিন হলো ইউনিয়ন পরিষদ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রি করায় সিংহভাগ কার্ডধারীর গাড়ি ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা ও সময়ের ব্যয় হচ্ছে। এতে অনেকেই ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পেয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। 

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, এমন ভোগান্তির বিষয়টি আমার জানা নেই, আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এমআইসি