
যশোরঃ পরিশ্রমী এক আত্মপ্রত্যয়ী যুবক বেনাপোলের পুটখালী গ্রামের খামারি নাসির উদ্দিন (৩৬)। গরু ছাগলের খামার করে বাৎসরিক আয় তার কোটি টাকার উপরে। এবার সেই কোটি টাকার স্বপ্ন বিলীন হতে চলেছে বলে ধারণা করছেন তিনি ও খামারের কর্মচারীরা।
জানা গেছে খামারে আছে প্রায় ৪০০ গরু। ছাগল ও ভেড়া আছে শতাধিক। মহিষ আছে প্রায় অর্ধশতাধিক। তবে এবছর করোনার দাপটে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তের এই খামার ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। হতাশা প্রকাশ করেছে ওই ব্যবসায়ীসহ খামারের প্রায় ৭০ জন কর্মচারী। পরিস্থিতি এমন থাকলে এবার লোকশান গুনতে হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
যশোর এর বেনাপোল পোর্ট থানার সীমান্তবর্তী গ্রাম পুটখালী। এই গ্রামে বুধো সরদারের ছেলে নাসির উদ্দিন। অভাব অনটনের সংসারে এক সময় তিনি স্কুল ত্যাগ করে বাবার সাথে ছোট খাট কাজ করত। এরপর নাসির উদ্দিন কয়েকটি ছোট ছোট গরু নিয়ে খামার গড়ে তোলে। সেই থেকে বিগত ৮ বছরে তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক তিনি গরু খামার বৃদ্ধি করে এগিয়ে যায়। এখন ওই খামারে আছে প্রায় ৪০০ গরু। শতাধিক ছাগল ও ভেড়া। আরো আছে প্রায় অর্ধশতাধিক মহিষ। এছাড়া তার খামারে আছে উন্নত জাতের গাভী গরু। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এই খামারের প্রতিটি গরুর মূল্য নিম্ন ৪ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এবছর যেভাবে করোনা মহামারি সংক্রমণে দেশে ‘লকডাউন’ চলছে তাতে গরু পশুহাটে তুলতে না পারলে তিনি লোকসানের মুখে পড়বেন। এমনটাই জানালেন খামারি নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, গরু পালন করতে হয় সন্তান সেহে। এদের মাথার উপর পাখা এবং গরুর বর্জ্য পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে মেশিন। প্রতিদিন প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকার খাদ্য দিতে হয়। প্রতিবছর রাজধানী ঢাকা সহ চট্রগ্রাম থেকে আসে ব্যপারীরা। এছাড়া ট্রাকে করে এসব গরু ঢাকা চট্রগ্রাম নিয়েও বিক্রি করা হয়। তবে এবার পড়েছি মহাসংকটে। করোনা মহামারির কারণে পশুহাট বন্ধ করে দেওয়ায় গরুর ব্যপারীও আসছে না আবার বড় বড় শহরেও নিতে পারছি না। আর কোরাবানি আসার আগে গরুর পিছনে খরচও বেড়ে যায়। গায়ে মাংস বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন একটু বেশি বেশি করে খাবার দিতে হয়। যাতে প্রতিটি গরুর প্রতিদিন এক কেজি করে মাংস বৃদ্ধি পায়। সারাবছর গরু লালন পালন করে কোরবানির বাজার ধরে গরু ছাগল মহিষ ভেড়া বিক্রি করে তার প্রায় এক কোটি টাকার উপরে লাভ থাকে। তবে এবছর কি হবে জানি না। প্রতিটি কর্মচারীকে মাসে ১০ থেকে ১৪ হাজার পর্যন্ত বেতন দিতে হয়।
খামারে নিয়োজিত পুটখালী গ্রামের তৌহিদুর রহমান বলেন, আমরা নাসিরের খামারে কাজ করে সংসার চালাই। সামনে কোরাবানির ঈদ। সরকার করোনায় লকডাউন দেওয়ায় গরু বিক্রি করতে পারছি না। এবার ঈদে বেতন নিয়েও আশঙ্কা করছি। আমরা গরুকে খাবার দেওয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, গোসল করাসহ সময়মত ডাক্তার দেখানো কাজ করে থাকি।
খামারের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, সরকার যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করার অনুমতি দেয় তাহলে আমরা গরু বিক্রি করতে পারব। তা না হলে পথে বসতে হবে। কারণ সারা বছর এসব পশু লালন পালন করতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায় কোরাবানির হাটে বিক্রি করার আশায়। আর এসব গরু পালনে অত্যন্ত কষ্ট হয়। কখনো কোন গরু অসুস্থ হলে সব দিক খেয়াল রেখে আমাদের চলতে হয়। এক কথায় এই খামার থেকে প্রায় ৭০টি পরিবার চলে। লকডাউন এর মধ্যে তারা যেন গরু পশুহাটে নিতে পারে সে জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। বছর শেষে খরচ বাদে প্রতিটি গরু থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় বলে তিনি জানান।