
নবম গ্রেডে প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে বিএসসি পড়ুয়াদের একাডেমিক পড়াশোনার অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে তারপর আবার বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করে আসতে হয়। অন্যদিকে ডিপ্লোমা পড়ুয়ারা এস এস সি পাস করে সরাসরি ডিপ্লোমা করে দশম গ্রেডে নিয়োগ পান, এরপর কিছু অভিজ্ঞতা হলে নবম গ্রেডে প্রমোশন পেয়ে যান। এই পুরো প্রসেসে ব্যাপক বৈষম্য তো আছেই, এখানে নিরেট টেকনিক্যাল দিক থেকেও অনেক সমস্যা আছে।
-
বিএসসি কারিকুলাম ডিজাইন করা হয় ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য, আর ডিপ্লোমার কারিকুলাম ডিজাইন করা হয় ইঞ্জিনিয়ারদের ডিরেকশনে কাজ করবে এমন টেকনিশিয়ান বানানোর জন্য। কেউ টেকনিশিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলে কখনোই ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না এমন নয়, তবে এজন্য তার বিশেষায়িত পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিদ্যমান সিস্টেমে দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদোন্নতি মূলত চাকরির বয়স দেখেই দেয়া হচ্ছে, যার ফলে জ্ঞানগত ঘাটতির দিকটা পূরণ হচ্ছে না।
-
নবম গ্রেডের সকল পজিশনের ভিতর আবার ৩৩% কোটা করে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সংরক্ষিত করা আছে। এটাও খুবই বৈষম্যমূলক এবং মেধা ও যোগ্যতার প্রতি অবমাননাকর একটা সিস্টেম। প্রমোশন দিতেই হলে এভাবে কোটা নির্ধারিত না করে মেধা ও যোগ্যতার পরীক্ষা নিয়ে তারপর দেয়া যেতে পারে।
-
অন্যদিকে দশম গ্রেডের ১০০% পজিশনই ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীদের জন্য সংরক্ষিত, বিএসসি পড়ুয়ারা এসব পজিশনে আবেদনই করতে পারে না। সামগ্রিকভাবে সবদিক বিবেচনা করলে বিএসসি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এবং আন্দোলন যৌক্তিকই মনে হয়। তারা তিনটি দাবী করেছে:
- নবম গ্রেডের পজিশনগুলো কেবলমাত্র বিএসসি ডিগ্রীধারীদের জন্য বরাদ্দ করা।
- দশম গ্রেড বিএসসি ও ডিপ্লোমা উভয়ের জন্য।
- ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীরা ইঞ্জিনিয়ার পদবী ব্যবহার করতে পারবে না।
-
সরকারের সদিচ্ছা এবং দক্ষতা থাকলে এই ইস্যুতে এমন সমাধান বের করা সম্ভব যাতে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হয়। কিন্তু এই অকর্মণ্য এনজিও সরকারের সম্ভবত তেমন কোনো আগ্রহ নাই। কারণ তারা ব্যস্ত হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস আর জলকামান মারতে। রাষ্ট্রীয় সিকিউরিটি এজেন্সি ছাত্রদের শাসাচ্ছে তারা যেন আন্দোলন না করে। রাষ্ট্রকাঠামোর উল্লেখযোগ্য একটা অংশের মধ্যে সেই পুরনো যুলুমবাজ মানসিকতা রয়ে গেছে, তারা জনগণের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বলপ্রয়োগ করে জনমত দমন করতেই বেশি আগ্রহী।
-
আন্দোলনকারীরা যদি পিছু না হটে লেগে থাকে তবে কিছু আদায় করে নিতে পারবে আশা করা যায়। তাদের প্রতি একটা পরামর্শ, ডিপ্লোমা পড়ুয়াদের ডিব্বা বা এই টাইপের অসম্মানজনক কিছু বলে নিজেদের ভিতর তিক্ততা যাতে না বাড়ান তারা। এই পুরোম চাপ দিয়েই এই ভুল সংশোধন করতে হবে।