1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

“ওপারে অপুদা এপারে সাইফুল দা”

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২১, ০৬:২৩ পিএম “ওপারে অপুদা এপারে সাইফুল দা”
ছবি: সংগৃহীত
ঝিনাইদহঃ জেলার মহেশপুর সীমান্তে জেলা প্রশাসনের জরুরী বিধি নিষেধ ও বিজিবির কঠোর নজরদারীর মধ্যেই ব্যাপক হারে মানুষ এপার ওপার করছে। এই অবৈধ পারাপারে দুই দেশের দালালরা নিয়োজিত।
 
বৃহস্পতিবারও ৬জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বিজিবি। মহেশপুর উপজেলার জুলুলী ও বৃত্তিপাড়া গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয় বলে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান বৃহস্পতিবার এক ই-মেইল বার্তায় জানান। এরমধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলার সোহেল রানা, ঝিকরগাছা উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের আলামিন, স্ত্রী রোখসানা বেগম ও মেয়ে হাবিবা খাতুনকে অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ও সিরাজগঞ্জের দারিয়াপুর গ্রামের যতিন মদক, স্ত্রী কামনা মদক ও ছেলে লিখন মদককে ভারতে প্রবেশের সময় আটক করে বিজিবি। 
 
সীমান্তের গ্রামবাসির অভিযোগ, কোন ভাবেই এই জনশ্রোত থামানো যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর দালালের নিয়োজিত সদস্যরা গ্রামে গ্রামে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পারাপারে লিপ্ত হয়। 
 
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ভারতের সীমান্ত রয়েছে ৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কাঁটাতারবিহীন এলাকা প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার। এসব এলাকা দিয়ে মুলত অবৈধভাবে মানুষ যাতায়াত করে। এদিকে বিজিবির হাতে আটক হয়ে ২/১দিন পরই অনুপ্রবেশকারীরা পাসপোর্ট আইনের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এমন অবৈধ পারাপার করোনার ভারতীয় ধরন ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝিনাইদহ জেলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিকিৎসকরা জানান। বেশ কয়েকদিন মহেশপুর সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে অনুসন্ধান করে মানুষ পরাপারের চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। 
 
প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সীমান্তে প্রবেশের সময় কিছু মানুষ আটক হলেও বেশিরভাগ মানুষ অধরা থেকে যায়। তারা নির্বিঘ্নে ওপার ওপার করে বেড়ায়। অন্যদিকে বিজিবির হাতে কিছু অনুপ্রবেশকারী আটক হলেও তাদের ছাড়াতে আদালতপাড়ায় ভিড় করেন দালাল চক্রের সদস্যরা। আদালতপাড়ায় কথা হয় এমন এক দালাল চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে। নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান,‘ভারতে অপু দাদা নামে একজন আছেন। তিনি নদীতে নৌকা চালান। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। কখনো তাকে দেখিনি। ওপারে তার একটি গোডাউন রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের এনে রাখা হয়। বর্ডারে তার লোক আছে। রাতে সুযোগ বুঝে গ্রুপ করে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পাচার করে। এপারে (বাংলাদেশ) সাইফুল দাদা তাদের বুঝে নেন।’ সাইফুল দাদাও একই ভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করেন।
ওই সদস্যের ভাষ্যমতে, ‘ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় যারা বিজিবির হাতে আটক হয়, তাদের নাম-ঠিকানা ও আইডিকার্ড অপুদা ভারত থেকে আমাদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন। আমাদের টাকা পাঠান বিকাশে। এরপর আমরা তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি। বাংলাদেশ থেকে সাইফুল দা যাদের পাঠায় ভারতে অপুদা বুঝে নেন। এ কাজে আরো একাধিক চক্র আছে।’ সুবিধা ও পরিস্থিতি বুঝে জনপ্রতি ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা নেওয়া হয়। এভাবেই বছরের পর বছর অবৈধ পথে মহেশপুরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ-ভারতে শত শত মানুষ প্রবেশ করছে।
 
গত ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে ভারতে যাওয়া বন্ধ থাকার কারণে অবৈধ পথে যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলে ঝিনাইদহের সীমান্ত এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
 
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মিথিলা ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে যারা ধরা পড়ছে তাদের আমরা কোয়ারেন্টাইনে রাখছি। যারা ধরা পড়ছে না তাদের ব্যাপারে আরও বেশি তৎপর হাওয়া প্রয়োজন। কারণ এদের মধ্যে যারা করোনা পজিটিভ হবেন, তাদের থেকে ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহেশপুরের সীমান্তবর্তী বাউলি গ্রাম লকডাউন দিয়েছে। সেখানে একই পরিবারে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া জুন মাসের ১০ দিন ১২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন দুই জন। 
 
ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিলন বলেন, ‘১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে সীমান্ত অনুপ্রবেশে দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের জেল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা উচিৎ হবে। তাছাড়া ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনকেও যুগোপযোগী করা দরকার। কেননা আইনের দুর্বলতার সুযোগে এমন অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে তিনি মনে করেন। 
 
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ পথে কেউ যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য সীমান্তে বসবাসকারীদের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। তাদের সীমান্ত অতিক্রম না করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে টহলের জন্য আমাদের কোনো পথ নেই। মাঠ-ঘাট বাগান দিয়ে আমাদের নজরদারি করতে হয়। এছাড়া আমাদের তেমন যানবাহনও নেই। ফলে সাইকেল চালিয়ে মেঠো পথেই আমাদের সদস্যরা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন, যা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ 
 
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান আগামী নিউজকে বলেন, মহেশপুর সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা মিটিং করেছেন এবং সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে মানুষকে আনা নেয়ার কাজে কেউ যেন সহযোগিতা না করে। আমরা এর সুফল পাচ্ছি।
আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner