1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

টিএসসি বিষয়ক বিতর্ক প্রসঙ্গে

শান্তনু মজুমদার প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১, ০২:২৯ পিএম টিএসসি বিষয়ক বিতর্ক প্রসঙ্গে
ছবি: সংগৃহীত

টিএসসি নতুন করে গড়ে তোলার সরকারি উদ্যোগকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পথে। সরকারপক্ষ বর্তমান স্থাপনা ভেঙে বহুতল আধুনিক অবকাঠামো গড়ে দেয়ার কথা বলছেন। অবশ্য নতুন টিএসসি কেমন হবে সে ব্যাপারে কোথাও থেকে কোনো স্পষ্ট চিত্র দেখা যাচ্ছে না। যারা বিরোধিতা করছেন তাদের মতে সরকারের এ উদ্যোগ অবিবেচনাপ্রসূত এবং ঐতিহ্যনাশী। এই দুই বিপরীতমুখী অবস্থান মাথায় রেখে এই লেখাতে দুটো সম্ভাব্যতা আলোচনা করা হয়েছে। 

প্রথম কথা হচ্ছে, নির্মাণকালীন সময়ের তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অনুষদ-বিভাগ-ইন্সটিটিউটের সংখ্যা ব্যাপক বেড়ে যাবার বাস্তবতায় টিএসসির বর্তমান অবকাঠামোয় কাজ চলছে কি? যদি কাজ চলে যায়, তাহলে কোনো কথা নেই। কিন্তু, যদি কাজ না চলে, তাহলে কী করণীয়? কাজ চলছে না, এই যুক্তিতে বর্তমান কাঠামো ভেঙে দিয়ে নতুন কাঠামো বানানো হবে? নাকি যথাযথভাবে সকল দিক বিচার-বিবেচনায় নিয়ে অবকাঠামোগত সংস্কার করে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও সুবিধাদির দিক থেকে এর উপযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ আছে? এর বাইরে আরেকটি আলোচনা হতে পারে- টিএসসির বর্তমান আয়তন বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানের সুযোগ আছে কি? 

নিয়মিত যাতায়াতকারীরা প্রত্যেকে জানেন যে, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় ধরলে টিএসসি বহুদিন আগেই এর সক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র অডিটোরিয়াম বা গেস্ট রুমের কথা ধরা যাক। এগুলোর বুকিং পাওয়ার জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হয় তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের লোকজন ভালোভাবে জানে। অডিটোরিয়ামের আসন সংখ্যা থেকে শুরু করে এর সার্বিক মান কিংবা গেস্ট রুমের ¤্রয়িমান পরিস্থিতির কথা আর কিইবা বলা যায়? মোট কথা বর্তমান অবকাঠামোর টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন কোনভাবেই মিটছে না। কিন্তু কথা হচ্ছে, টিএসসি মানে কেবল একটি ইট-কাঠ-সিমেন্টের অবকাঠামো মাত্র নয়। এটি জগদ্বিখ্যাত গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডেসের দুর্দান্ত সৃজনশীলতার অনবদ্য এক নজির। এ ধরনের স্থাপনা ব্যবহারগত প্রয়োজনের দোহাইতে ভেঙে ফেলা যায় না। টিএসসির বয়সী অনেক কুৎসিত স্থাপনা আছে যেগুলো সামর্থ থাকলে ভেঙে দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা গেলে ভালোই হয়। “ওল্ড” হলেই “গোল্ড” হয় না। কিন্তু তেমন কোন বয়স না হলেও, টিএসসি ভিন্ন ব্যাপার। স্থাপত্যকলাবিষয়ক জ্ঞান না থাকলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ডক্সিয়াডেস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গর্ব করার মত একটি জায়গা তৈরি করে দিয়েছিলেন। 

নান্দনিক নির্মাণশৈলীর বাইরে আসে টিএসসির গুরুত্বের প্রসঙ্গ। মনে রাখতে হবে, টিএসএসি দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র। সামরিক শাসকদের আমলে টিএসসি কখনো কখনো রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। টিএসসির বাইরের দেয়ালে-চত্বরে, ভিতরের বারান্দায়, সবুজ লনে ও বিভিন্ন কক্ষে সংস্কৃতিচর্চা চলে অবিরাম। নানা সীমাবদ্ধতা, নানা অনিয়মের অভিযোগ স্বত্তেও, মানবতা-সম্প্রীতি-বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধীদের দ্বারা সামাজিক পরিসর বেদখল হতে থাকার বাস্তবতাতে টিএসসির গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। গত ৫০-৬০ বছরে সংস্কৃতিচর্চার যে ধাঁচ ও আবহ টিএসসিতে গড়ে উঠেছে, নতুন বহুতল কাঠামোতে তা না পাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কথা হচ্ছে, এসব বাস্তবতার মুখে তাহলে কি এটা বলতে হবে যে, অনন্য সাধারণ নকশা আর অপরিসীম জাতীয় গুরুত্ব আছে বিধায় অবকাঠামো ব্যবহারকারীর সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধিজনিত বাস্তবতা নিয়ে কিছুই বলা যাবে না? তা কিভাবে সম্ভব? প্রয়োজন নিয়ে কথা হবে না কেন? 

এবার তাহলে এই প্রয়োজন মেটানোর দুটি উপায় আলোচনা করা যাক। প্রথম কথা হচ্ছে, টিএসসির অডিটোরিয়ামের আসন, গেস্ট হাউস এবং নানারকমের শিক্ষা-সংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য কক্ষের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। এছাড়া একটি মাত্র অডিটোরিয়াম দিয়ে এতগুলো বিভাগ-ইন্সটিটিউট-অফিস ও সংগঠনের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়না। এ প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য বাড়তি জায়গা দরকার - হয় পাশে, নয়তো উপরের দিকে। বর্তমান সীমানা প্রাচীর অনুসারে টিএসসির পাশে বাড়ার সুযোগ নেই। তবে ডক্সিয়াডেসের নকশার অবমাননা না করে টিএসসির কিছু অংশ উপরের দিকে বাড়িয়ে সমস্যার একটা সমাধান করা যায় কি? গায়ের জোর বা প্রয়োজনের দোহাই নয়, বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে মহান একজন স্থপতির সৃষ্টিকর্মের ওপর অন্য কারু দ্বারা এমনকি ইতিবাচক কোনো সংযোজন সঙ্গত হবে কিনা? অবিরাম সর্ব-বিষয়ে কথা বলা লোকেরা নয়, বরং প্রকৃত ওয়াকিবহাল লোকেরা এক্ষেত্রে শেষ কথা বলবেন। তাঁরা যদি এধরনের সংযোজনের বিপক্ষে মত দেন তাহলে আর কোন কথা চলে না। কিন্তু যদি এমন কোন সুযোগ থেকে থাকে, তাহলে টিএসসির দক্ষিন অংশে, অর্থাৎ গেস্ট হাউস, ক্যাফেটেরিয়া ও গেমস রুম সাইডের উপরে দিকে মূল নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে একটি বা দুটি ফ্লোর বাড়িয়ে আগামী কয়েক দশকের প্রয়োজন মোটামুটি মেটানো হয়তো সম্ভব হবে। ফাউন্ডেশন না থাকলে নতুন ফাউন্ডেশন দিয়ে নীচের ফ্লোর হুবহু মূল নকশানুযায়ী পুনরায় তৈরি করা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। উপরে থাকতে পারে হাজার দুয়েক আসনের একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম, গোটা বিশেক গেস্ট রুম এবং শিক্ষা-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য কিছু সংখ্যক কক্ষ বরাদ্দ। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই সংযোজনের জন্য দেশের সেরা স্থপতিদের কাজে লাগাতে হবে। 

তবে ডক্সিয়াডেসের সৃষ্টিকর্মের ওপরে কোনরকম হস্তক্ষেপ না করে, টিএসসিকে পাশে বাড়ানোর একটা উপায় অবশ্য আছে। এই উপায় বাস্তবায়নে যেসব বাধা আছে বা আসবে তার জন্য আগে থেকে মগজ খরচ, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা ক্ষিপ্ত হওয়ার দরকার নেই। আগে উপায়টি আলোচনা করা যাক। উপায়টি হচ্ছে টিএসসির পূর্ব পাশে রাস্তার উল্টোদিকে সোহরাওয়ার্দী পার্ক থেকে এক টুকরো জমি নিয়ে টিএসসির এক্সটেনশন গড়ে তোলা। এই জমিতে প্রয়োজনীয় স্থাপনাগুলো গড়ে তুলে আন্ডারপাসের মাধ্যমে টিএসসির মূল অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে পার্কের স্থাপনাটুকু দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা দেয়াল ঘেরা থাকবে। এই সীমানা প্রাচীর এমন শৈল্পিকভাবে নির্মিত হবে যা কোনভাবেই পার্কের সৌন্দর্যহানি করবে না কিংবা দেয়ালের আড়ালের সুবিধা নিয়ে পার্কের ভেতরের অংশটি সমাজবিরোধীদের আড্ডাখানায় পরিনত হবে না। এক্সটেনশনে যাতায়াতের জন্য পার্কের মধ্যে বা রাস্তার পাশে কোনো গেইট থাকবে না। যাবতীয় যাতায়াত হবে আন্ডারপাস হয়ে। আলোকোজ্জ্বল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই আন্ডারপাসের দেয়ালজুড়ে থাকতে পারে নানা থিমের চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে সভ্যতা-সংস্কৃতি বিষয়ক স্মারকসমূহ। আন্ডারপাস এপার-ওপার করার সময় যাতায়াতকারীরা শুনতে পাবেন দেশ-বিদেশের সেরা মিউজিক। যুগান্তকারী ভাষণ, আলোড়ন ফ্লো কবিতার আবৃত্তি। নবীন কোনো গায়ক দোতরা কি গিটার নিয়ে বসে শোনাতে পারবেন লাইভ মিউজিক। নতুন কবিরা পড়বেন কবিতা। 

পার্কের জমি সরকারের কোনো অফিসের আওতায়, তারা কেন জমি দেবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জমি দেয়া হলে অন্যরাও চাইতে শুরু করবে- এত কথা বিবেচনায় রেখে এই লেখা প্রস্তুত হয়নি। বরং এক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। টিএসসির জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় রাখলে, সোহরাওয়ার্দী থেকে এক টুকরো জমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া তেমন কোন বড় সমস্যা মনে হওয়ার কথা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জমি কিন্তু অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে। সে কথা মনে রেখে পার্কের এক টুকরো জমি টিএসসির জন্য বরাদ্দ দেয়া হলে অন্য কারুর কোনো কষ্ট লাগার কথা নয়। 

লেখক : শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner