1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

বিকাশে আর্থিক লেনদেনের চার্জে গ্রাহকদের অবিশ্বাস

ম.শাফিউল আল ইমরান প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২০, ০৭:০৪ পিএম বিকাশে আর্থিক লেনদেনের চার্জে গ্রাহকদের অবিশ্বাস

ঢাকা: করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি রুপ পাওয়ার পর  থেকে কাগজের টাকায় লেনদেনের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন  বেড়েছে। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে সব পর্যায়ে টাকা লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিচিত বিকাশ। এর পাশাপাশি রকেট,নগদ বা অনান্য সেবাও বিদ্যমান থাকলেও বিকাশের দখলে সিংহভাগ বাজার।

কিন্ত এদের সার্ভিস চার্জের বিষয়টি বেশি বেশি মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের দাবি, বাজারে বিকাশ সবচেয়ে বেশি সার্ভিস চার্জ বেশি নিচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষরা। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী এ দুর্যোগের মুহূর্তে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার টাকায় বিশ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয়। বাজার ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহকদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ও সার্ভিস চার্জ নির্দিষ্ট করে দেয়া জরুরী।

কিন্ত বিকাশ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিতে নিম্ন আয়ের এজেন্টদেরকে সাবলম্বী করতেই চার্জ ১৮ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে এখন পর্যন্ত বিকাশসহ প্রায় ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রতিদিন এর মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটিরও বেশি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে লেনদেন হয়ে থাকে বিকাশের মাধ্যমে। শহর ছাড়া গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বিকাশ সহজ মাধ্যম হলেও কেউ কেউ নানানভাবে প্রতারিত হয়।

সেবাগ্রহীতাদের দাবি, বিকাশ দিনে কোটি কোটি টাকা ট্রানজেকশন করছে ফলে, এখন ফি আরো কমানো উচিত। রাজধানীর আদাবরে রিক্সা চালক নুহুর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

নুহু বলেন, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় প্রতিদিনের আয় করা টাকা পাঠাই বিকাশের মাধ্যমে। কারণ, আমার কোন ব্যাংক একাউন্ট নেই। আর বিকাশে টাকা পাঠালে সাথে সাথে টাকা উঠিয়ে নিতে পারে। কিন্ত বিকাশ যদি টাকা পাঠানোর চার্জটা কম রাখে তবে আমাদের পরিশ্রমের টাকার অনেকটা থেকে যেত।

সালমা বেগম নামের একজন মহিলা ঢাকায় বিভিন্ন বাসায় কাজ করেন। মাস শেষে যে অল্প টাকা আয় করেন তা এনজিও এর কিস্তির জন্য গ্রামে পাঠান বিকাশের মাধ্যমে। কিন্ত হাজারে বিশ টাকা চার্জ দিতে হয় বলে তার আক্ষেপের শেষ নেই।

এই গল্প শুধু এই দুইজনের নয়। ঢাকায় সিংহভাগ মানুষের কথাই এমন। সবার একই কথা বিকাশ এক চাটিয়া বাজার দখল করলে সার্ভিস চার্জের দিকে নজর দিক।

কিন্ত সার্ভিস চার্জের কথা মানতে নারাজ বিকাশের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম। তিনি বলেন, 'বিকাশ কোনো ব্যাসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে গ্রাহকদের যেসব সুবিধা দেওয়া হয় তাদের মধ্য থেকে মাত্র দুটির মাধ্যমে কিছু চার্জ নেওয়া হয় গ্রাহকদের নিকট। বাকী যেসব সার্ভিস আছে সেগুলো থেকে কোন চার্জ নেওয়া হয়না।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ নিয়মিত এ সেবা ব্যবহার করছে। আর এ সেবার জন্য নিবন্ধিত গ্রাহক এখন প্রায় ৮ কোটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সেবার গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯৬ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক ৩ কোটি ৪৭ লাখ। আর দেশজুড়ে এ সেবা দিতে এজেন্ট রয়েছেন ৯ লাখ ৭১ হাজার। ডিসেম্বরে দৈনিক লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা, নভেম্বরে যা ছিল ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।

এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, যে মাশুল আদায় হয়, তার ৬০ শতাংশের বেশি এজেন্টদের দেওয়া হয়। এরপর নেটওয়ার্ক খরচ দিতে হয়। বাকিটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাতে খরচ হয়। দিন শেষে মুনাফা হয় খুব কম। তবে দিন শেষে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি জমা থাকছে। এসব অর্থের সুদ থেকেই মুনাফা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সমাজের যারা নিম্ন শ্রেণির মানুষ তারাই সাধারণত তাদের আয়ের সিংহভাগই টাকা লেনদেন করে বিকাশের মাধ্যমে। কারণ তারা কেউ রিক্সা চালায়,মজুরদারি করে অথবা গার্মেন্টস এ কাজ করে। তাদের উর্পাজন করা টাকায় গ্রামে সংসার চলে বেশিরভাগের। এছাড়া, টাকা লেনদেনে বিকাশ কর্তৃক নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ বেঁধে দেয়া হলেও নেই কোনো পর্যবেক্ষণ। এতে প্রতি হাজার ক্যাশ আউটে সাড়ে ১৮ টাকার পরিবর্তে গ্রাহকদের কাছ থেকে এজেন্টরা নিচ্ছে ২০ টাকা। এজেন্টদের একজন বলেন, আমরা প্রতি হাজারে ২০ টাকা করে নেই শুরু থেকেই। শুরু থেকেই এভাবেই চলছে।

সাধারণ ব্যাংকিং-এ ৫ হাজার টাকা পাঠাতে যেখানে ২০ টাকা চার্জ। সেখানে বিকাশে ব্যয় হয় ৫ গুণ, অর্থাৎ একশ টাকা।

‘কোন এজেন্টের বিরুদ্ধে যদি ২০ চার্জ নেওয়ার অভিযোগ পাই তবে দ্রুত তার বিরুদ্ধ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’ জানিয়েছেন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম।

বিকাশ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ থেকে একজন গ্রাহক যত ধরণের সেবা পেতে পারেন তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা বিকাশ অ্যাপের ‘মোর’ বা ‘আরো’ অপশন ক্লিক করেই একসাথে দেখতে পাবেন গ্রাহক। সেন্ড মানি, ক্যাশ আউট, মোবাইল রিচার্জের মত বহুল ব্যবহৃত সেবাগুলো ছাড়াও যে সেবাগুলো দ্রুত গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্ত যেত সেবাইত গ্রাহকদের দেওয়া হোক না কেন শুধুমাত্র দুইটির ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব লড়ছে করোনা ভাইরাসের সাথে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে এবং নগদ টাকার ব্যবহার এড়িয়ে ব্যাংক, মার্কেট এর মত জনসমাগমে না গিয়ে ঘরে বসেই ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার করে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারেন গ্রাহক।

বিকাশ তাদের নেওয়া সার্ভিস চর্জের নাম মাত্র পায় উল্লেখ করে শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম আরো বলেন, আমাদের সার্ভিস চার্জের ৭৭ শতাংশ পায় এজেন্টরা, প্রায় ১০শতাংশ পায় মোবাইল অপেরেটাররা আর বাকী যে অংশ থাকে সেই টাকা দিয়ে আমাদের লোকবল, অফিস মেইনটেইন এবং  যাবতীয় কাজ ও প্রতিষ্ঠানের ট্রাক্স, ভ্যাট দিয়ে থাকি।

এজেন্টরাই বিকাশের মূল পার্টনার ও প্রাণভোমরা  উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সাধারণত গরীব মানুষ  এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমরা তাদের লাভবান করতে চাই।

অর্থনীতিবদিরা বলছেন, গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি চার্জ নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থাকতে হবে কঠোর নির্দেশনা। তারা মনেকরেন, দেশের প্রান্তিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যসহ লেনদেন সহজ করতে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রাসী ভূমিকায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র লেনদেনকারীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত আগামীনিউজকে বলেন, দেশের বর্তমান পেক্ষাপটে ডিজিটাল লেনদেনের হার বেড়ে যাবে সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত চার্জ নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশেষকরে দেশের এমন দুর্যোগ মহূর্তে একটি গাইড লাইনের মাধ্যমে কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করে দেওয়া।
 
বিকাশের চার্জের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম আগামীনিউজকে বলেন, ইতিমধ্য বাজারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয়ে গেছে। বাজারে প্রতিযোগীতা তৈরি হলে তাদের চার্জ আল্টিমেটলি কমে আসবে।
 
আগামীনিউজ/ইমরান/ডলি/নাঈম


 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner