1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত

জয়িতা চক্রবর্তী প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২১, ০৪:৫১ পিএম অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত
ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ নানা আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়েই নারীদের ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। ব্রিটিশবিরোধী যেকোনো সংগ্রামেই তাঁরা ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। তেমনই নারী কল্পনা দত্ত, যিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তবে তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় বিপ্লবীদের অনেকেই মেয়েদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চাইতেন না। প্রতিমুহূর্তে বিপদের আশঙ্কা থেকেই বিপ্লবী নেতারা মনে করতেন, স্বভাবে নরম এবং কোমল হবার দরুন নারীরা বিপ্লবী কাজে অনুপযুক্ত। এছাড়াও তাদের ধারণা ছিলো, নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে নানাভাবেই পুরুষের নৈতিক আদর্শের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাদের এই বিরূপ মনোভাবের কারণে কল্পনা দত্ত লিখেছিলেন- ‘It was an iron rule for the revolutionaries that they should keep aloof from the women’ এবং তৎকালীন নেতাদের এরূপ মানসিকতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে কল্পনা দত্ত এবং প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার উল্লেখযোগ্য। 

মিষ্টি হাসির অধিকারী কল্পনা দত্ত জন্মেছিলেন ১৯১৩ সনের ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায়। স্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম।স্বপ্ন ছিলো সকলকে নিয়ে সুখী সমাজে বসবাসের। দাদু ডাক্তার রায়বাহাদুর দুর্গাদাস ছিলেন চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি। পিতা বিনোদবিহারী দত্ত ছিলেন সরকারি কর্মী। কিশোরী বয়স থেকেই বিভিন্ন স্বদেশি বই পড়তেন। বিপ্লবীদের জীবনীসহ নানা বই পড়তে পড়তে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব জেগে ওঠে তাঁর ভেতর। মাত্র বারো বছর বয়স থেকেই দেশ নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তিনি। পড়াশোনায়ও বেশ মেধাবী ছিলেন কল্পনা। 

চট্টগ্রামবাসীর কাছে ‘ভুলুদা’ নামে সমধিক পরিচিত কল্পনা দত্ত ১৯২৯ সালে চট্টগ্রামের খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় চতুর্থ হন এবং পবর্তীতে কলকাতার বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন সময়েই তিনি বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। বিপ্লবের আদর্শে গড়ে ওঠা ‘ছাত্রী সংঘে’ যোগ দিয়ে হরতাল পালনসহ নানা আন্দোলনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। বিপ্লবী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে স্কলারশিপের টাকা দিয়ে সাইকেল কিনে তা চালাতে শেখা কিংবা প্রতি রোববারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে গিয়ে নৌকো চালানোর অভ্যেস এসব কিছুর মধ্য দিয়েই কল্পনা দত্তের মানসলোক গড়ে উঠছিল। বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লববাদী, রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে মাস্টার দা’র সাথে তিনি পরিচিত হন এবং মাস্টার দা প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন। নিজের পড়ার ঘরে বসেই কল্পনা বোমার জন্য তৈরি করতেন গান-কটন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলে দুজন নেতার নাম রয়েছে। তাঁদের নামের সঙ্গে যে দুজন নারীর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তাঁরা হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত। ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে কল্পনার বিশেষ ভূমিকা ছিলো। এসময়ে তাঁর তৈরিকৃত গান-কটন বোমা ইত্যাদি জেলের ভেতরে গোপনে চালান করা হয়, যাতে জেলের ভেতরে থাকা বিপ্লবীরা পালাতে সক্ষম হয়! কিন্তু ১৯৩১ সালে এই ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে কল্পনা দত্তের অন্যান্য জায়গায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। মাস্টার দা’র সাথে প্রায়ই তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন। 

১৯৩২ সালে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্বে থাকেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। শহীদ হন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গৈরালা গ্রামে ইংরেজ ফৌজের সঙ্গে সংঘর্ষে মাস্টারদা আর তারকেশ্বর দস্তিদারের সঙ্গী ছিলেন কল্পনা। অতর্কিত পুলিশের উপস্থিতিতে অস্ত্রসহ মাস্টারদা এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়লেও অন্যদের সাথে পালিয়ে যান কল্পনা দত্ত। তবে ১৯ গৈরালা গ্রামে আরেক সশস্ত্র সংঘর্ষের পর সতীর্থদের সাথে কল্পনা ধরা পড়েন। 

বিপ্লবী নেতা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সঙ্গে একসময়ে কল্পনা সম্পর্কে আসেন। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা চট্টগ্রামের সরোয়াতলীর পূর্ণেন্দু দস্তিদার ‘ফুটু দা’ নামেই সবার কাছে বেশ পরিচিত ছিলেন। লড়াইয়ের মাঠে ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলা হয়ে ওঠেনি। তবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে কোনোদিন না বলা সেই কথাটিই বলে উঠেন-“তোকে ভালো লাগে, যদি ফিরে আসি আমার জন্য অপেক্ষা করবি?” কিন্তু ১৯৩৪ সালে তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি হয়েছিল মাস্টারদার সাথেই। তবু কল্পনা দত্ত অপেক্ষা করেছিলেন। অপেক্ষা করেছিলেন দীর্ঘ ১০ বৎসর। 

১৯৩৯-এ ছাত্র আন্দোলন এছাড়াও উপর মহলের নানা চাপে সরকার কল্পনা দত্তকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্নিকন্যা কল্পনার মুক্তির জন্য গভর্নরের কাছে আবেদন করেন। জেল থেকে বেরিয়ে ১৯৪০-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন। পরে ১৯৪৩ এর দিকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পূরণ চাঁদ যোশীর সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং একই বছরে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৪৬ সালের দিকে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহিলা আসনে কল্পনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হয়ে। যদিও নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। ১৯৪৭ এর দেশভাগের পর জন্মভূমি ছেড়ে তিনি চলে যান ভারতে। ১৯৭৩ ও ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে আসেন দু’বার। 

১৯৯৫-র ৮ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে কল্পনা দত্তের জীবনাবসান হয়। আমৃত্যু তিনি অতি সাধারণ জীবন অতিবাহিত করেন। লড়াইয়ের মাঠ থেকে কোনোদিন পিছপা হননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত হারিয়েছেন অনেক কিছু, কিন্তু বাঙলার ইতিহাসে জুড়ে দিয়ে গেছেন অমূল্য কিছু অধ্যায়। যা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।

লেখক: অধ্যাপক জয়িতা চক্রবর্তী, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner