1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

যে কথা জানে না কেউ

মহিউদ্দিন মখদুমী প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২২, ০১:১৯ এএম যে কথা জানে না কেউ

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়নের পালিচড়া এখন ফুটবল কন্যাদের নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। খাদিজাতুল কুবরা লাবনী নামের এক ফুটবল কন্যা ফেসবুকে লিখেছে-নাছিমা জামান ববি আমার ফুটবল লাইফের পার্ট। তিনি আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে অনুপ্রেরণা দেন ইত্যাদি ইত্যাদি। লাবনীর ষ্টাটাসটি পাঠ করে একটু অনুসন্ধান চালিয়েছি। নাছিমা জামান ববি ২০০৯ সালে আম প্রতিকে বিপুল ভোটে সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১২ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে চরম প্রতিদ্বন্দ্বতা পূর্ণ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। নাছিমা জামান ববির জনপ্রতিনিধি হওয়ার ভোট যুদ্ধ জয়ের সাথে পালিচড়ার ফুটবল কন্যাদের উত্থান, ফুটবল যুদ্ধ বিজয় একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে হয়েছে। কারণ সাফল্য কিংবা বিজয় টাকা দিয়ে কেনা যায় না। ‘অর্জন’ করতে হয়। এই অর্জনের জন্য প্রয়োজন মেধা, দক্ষতা এবং কৌশল। অর্জনের সামনে, পিছনে থাকে দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগ ও তিতিক্ষা। যা নাছিমা জামান ববি ও পালিচড়ার ফুটবল কন্যাদের ক্ষেত্রে মিলে গেছে শতভাগ। নাছিমা জামান ববি তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয় অর্জনের বাধা ছিল রাজনীতিক প্রতিপক্ষ বন্ধুরা, কিছু বিশ্বাস ঘাতক, অর্থ সংকট এবং নারী হওয়া। পালিচড়ার ফুটবল কন্যারা দেশ সেরা হওয়ার ‘অর্জন’ লড়াইয়ে বাধা ছিল দারিদ্রতা, কুসংস্কার, বখাটেদের উৎপাত, অর্থ ও উপকরণ সংকট। অদম্য থেকে মাঠে ভোট লড়াই করে নাছিমা জামান ববি জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব ‘অর্জন’ করেছেন। তাঁর সঙ্গে পাশাপাশি থাকা পালিচড়ার ফুটবল কন্যারা তাঁরই নেপথ্যে দেয়া অনুপ্রেরণা ও সহায়তায় সব বাধা পেরিয়ে দেশ সেরা হওয়ার ‘অর্জন’ লড়াইয়ে এগিয়েছে বহুদূর। যে কথা জানে না কেউ। অর্থ্যাৎ ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নাছিমা জামান ববি এবং পালিচড়ার ফুটবল কন্যাদের সাফল্য, অর্জন, প্রাপ্তি যাই বলি না কেন তা সমান তালে এসেছে। ফুটবল কন্যারাই বলেছেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে যখন তাদের অভিযাত্রা শুরুটা হয়, তখন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাড়া কেউ পাশে ছিল না। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাইম বিল্লাহ, আনার কলি, প্রিয়সিন্ধু তালুকদার, জিয়াউর রহমান, ইসরাত সাদিয়া সুমি এসেছিলেন আবার চলে গেছেন। কিন্তু নাছিমা জামান ববি আপা এখনো আমাদের সাথেই আছেন। ফুটবল, জার্সি, বুট, মাঠ, পরিবারিক সমস্যা ও বখাটের উৎপাত সব সমস্যায় আমরা ববি আপাকেই জানাই। তিনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার ঋণ শোধ করার মতো নয়।

২০১১ সালে নাছিমা জামান ববি ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা কালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলোচনায় আসে পালিচড়ার ফুটবল কন্যারা। এরপর ২০১২ ও ২০১৪ সালে আবার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও ৪৭তম জাতীয় স্কুল-মাদরাসা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ২০১৫ সালে ব্র্যাক কিশোরী ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এবং কেএফসি জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে অংশ গ্রহণ করে ফেয়ার-ফেয়ার প্লে ট্রফি জয়। ২০১৬ সালে কেএফসি সিনিয়র ন্যাশনাল উইমেন চ্যাম্পিয়নশিপে তারা অর্জন করে তৃতীয় স্থান। ২০১৭ সালে জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪-এ তারা রানার্সআপ, ২০১৮ সালে ৪৭তম গ্রীষ্মকালীন ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৯ সালে জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪-এ তারা চ্যাম্পিয়ন, ২০২১ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা অনূর্ধ্ব-১৭-এ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০২২ সালে সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে স্বপ্নার বিরাট অর্জন। এছাড়া সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়ন ও এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে কৃতিত্বের জন্য সুলতানা, লাভলী, রত্নাসহ বেশ কয়েকজন ফুটবলার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সম্মাননা পেয়েছেন। নাছরীন, রেখা, মৌরাশি ও শাম্মী উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য পর্তূগাল যাবে এ বছর। জাতীয় ও বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলে খেলছে কয়েকজন। খেলার জন্য ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পালিচড়ায় মিনি-স্টেডিয়াম করে দিয়েছে সরকার। ফুটবল কন্যাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা এসেছে। পাকা বাড়ী করেছে অনেকেই। অন্য চোখে এটিকেই বদলে যাওয়া, দিন বদলের গল্প কিংবা মেঠোপথের গ্রামে উন্নয়ন বলে।

পালিচড়ার ফুটবল কন্যাদের এগিয়ে যাবার পথে স্থানীয় পক্ষ বিপক্ষ গ্রুপ তৈরী হয়ে বাধার সৃষ্টি করেছিল। বিভক্ত হয়ে ছিল টিম। তখন সেই সংকট নিরসনে অবিচল ও কঠোর থেকেছেন নাছিমা জামান ববি। তিনি কঠোর না হলে শুরুতেই শেষ হতো এই ফুটবল কন্যাদের পথ চলা। দুই বছর সেরা খেলোয়াড় হয়ে গোল্ডেন বুট জিতেছিল রোকসানা পারভীন। গ্রুপিং এর শিকার হয়েছিল সে। নাছিমা জামান ববির কথার অবাধ্য হওয়ায় আজ সে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও পড়ে আছে, ফুটবল মেধা নেই হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ফেরানো যায়নি পালিচড়ার মাঠে।

ফুটবল কন্যা খাদিজাতুল কুবরা লাবনীর একটি ফেসবুকের ষ্টাটাস ও নাছিমা জামান ববিকে জড়িয়ে ধরা ছবিটি দেখে অনেক অজানা কথা জেনেছি। সাফল্য আসায় এখন ফুটবল কন্যাদের অনেক অভিভাবক এবং বন্ধু জমেছে। এটি ভালো কথা। অনেক সাপোর্ট প্রয়োজন তাদের। কিন্তু কোচ মিলন খান স্বীকার করেন, সব সংকট আমরা চাপিয়ে দিতাম ববি আপার কাঁধে। তিনি সমাধান করে দিতেন। ববি আপা পালিচড়ার ফুটবল কন্যাদের উন্নয়নে গোপনে ও প্রকাশ্যে অনেক অবদান রেখেছেন। আরো রাখবেন বলে আশা করি। পালিচড়ার ফুটবল কন্যাদের পিতা-মাতা নাছিমা জামান ববির অবদানের কথা এ বাক্যে স্বীকার করেছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এটি আমার ভালো লেগেছে। তবে তাদের একটি কথা মাথায় চিমটি কেঁটে বসে গেছে। তারা বলেছেন, হামার উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি কপালী নারী। ভাগ্যবান নারী। তাঁর কপালের সাথে হামার ছওয়া গুলার কপাল মিলি য্যায়া উন্নতি হইছে। এই পাকা বাড়ী হামার কপালত আছিল না। 

আত্ন-কথন-৪০
সাংবাদিক ও লেখক
১৪/১০/২০২২

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner