1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে

জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২১, ১১:৫৮ পিএম ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে
ছবি; সংগৃহীত

নীলফামারীঃ সমাজে বাস করেও যেন সমাজের বাইরে আছেন নীলফামারীর ৩১০টি হরিজন পরিবার। বংশপরম্পরায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন তারা। এরপরও ‘ভদ্র- পরিচ্ছন্ন’ নাগরিকদের কাছে তারা যেন অস্পৃশ্য ও অদৃশ্য। এমনকি রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এই হরিজনরা।

নীলফামারী জেলা সদর, সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, জলঢাকা, ডিমলা, ডোমারের ৩১০ হরিজন পরিবারের এক হাজার ৫৬৭ জন সদস্য। ধর্মীয় পরিচয়ে তারা নিম্নবর্ণের হিন্দু। অন্য কাজের সুযোগ না থাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 

হরিজন সম্প্রদায়ের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, খাবারের হোটেল থেকে শুরু করে সেলুনেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না তাদের। এমনকি বসবাসের জন্য তাদের কাছে বাড়িও ভাড়া দেওয়া হয় না। এমন অনেক ধরনের সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সৈয়দপুর শহরের তামান্না সিনেমা হল সংলগ্ন পাওয়ার হাউস এলাকা, অফিসার্স কলোনি, সুরকি মহল্লা, নতুন বাবুপাড়া, জেলা শহরের কোর্ট চত্বর, থানা পাড়া, ডিসি অফিস চত্বর এলাকায় হরিজনদের বাস। সেখানকার কয়েকজন হরিজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন,  ‘পাশে বসা তো দূরের কথা, কাছেই ভিড়তে দেয় না আমাদের। এক কাপ চা খাবো, তাও কাপে দেওয়া হয় না। গ্লাস নিয়ে গেলে বাইরে দাঁড় করিয়ে কোনও রকমে দূর থেকে তাতে ঢেলে দেয়।  রেল লাইনের ওপর বসিয়ে গ্লাসে চা ঢেলে খাওয়ানো হয়। টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাই। এরপরও হোটেলের ভেতরে বসতে দেয় না, বাইরে বসায়।’

তবে বৈষম্য সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন হরিজনদের নতুন প্রজন্ম। তাদের অনেকেই লেখাপড়া করছেন। নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সজল বাসফোর বলে, ‘লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যা নেই।’

নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জ্যোতি রাণী বাসফোর বলেন, ‘সদর হাসপাতালে দেড়যুগ কাজ করেন আমার বাবা। কিন্তু চাকরি স্থায়ী হয়নি। ঘুষের টাকা দিতে না পারায় স্থায়ী চাকরি হয়নি তার।’

একই কথা বলেন সদর আধুনিক হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী রণজিৎ বাসফোর। তিনি বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জাতের লোক এখন আমাদের পেশায় ঢুকে পড়ছেন। ঘুষের বিনিময়ে চাকরি হচ্ছে তাদের।’

হরিজনরা জানান, তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা ও খেলাধুলা করার সুযোগ নেই। কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধাও নেই। বয়স্ক ভাতা, মাতৃভাতা ও বিধবাদেরও মিলছে না কোনও ধরনের আর্থিক সুবিধা।  

১৮৭০ সালে ইংরেজ শাসনামলে সৈয়দপুরে গড়ে উঠে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা। শুরুতেই এ বিশাল কারখানায় অফিস, স্থাপনা ও শ্রমিক কোয়ার্টারে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পান হরিজনরা। এরপর ধীরে ধীরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসতি স্থাপন করেন তারা।

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুদ বাসফোর (সুমন) বলেন, ‘আমরা যদি একটা দোকান নিয়ে ব্যবসা করি, সেখানেও কেউ কিছু কিনতে আসে না। কারও কাছে পানি চাইলেও পানি পান করতে দেয় না। সেলুনে চুল কাটতে গেলে নাপিত তাড়িয়ে দেয়। হোটেলে বসে কেউ খেতেই পারে না।’

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি মেঘুরাম বাসফোর  বলেন, ‘সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের কোথাও মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ সমাজের সব ধরনের কাজ আমরা সবসময় করে থাকি।’

তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সমস্যার কথা সবাই জানলেও এর কোনও প্রতিকার হয় না।’

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner