1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

খাদ্য দ্রব্য ও পানীয় রোগ-ব্যধির মূল কারণ

অনিক সিকদার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০, ০৫:১১ পিএম খাদ্য দ্রব্য ও পানীয় রোগ-ব্যধির মূল কারণ
সংগৃহীত
খাদ্য ও পানীয় রোগ ব্যধির প্রধানতম কারণ, অথচ এই খাতই সবচেয়ে বেশী অবহেলিত। মানুষের জীবনের জন্য খাদ্য ও পানি অপরিহার্য। সব পানি যেমন পানের যোগ্য নয়, তেমনি সব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য সুখকর নয়। এক কথায় বলা যায় একমাত্র বিশুদ্ধ পানিই কেবল পানের যোগ্য। ঠিক তেমনি সব খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। শুধু স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ খাদ্যই জীবনকে বাঁচাতে, রোগমুক্ত রাখতে সক্ষম।
 
বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যে ভেজাল চরম আকার ধারণ করেছে৷ তবে শুধু ভোগ্যপণ্য নয়, শিশু খাদ্য, প্রসাধন সামগ্রী, এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল৷ প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর ভেজাল খাদ্য খেয়ে তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন মরণব্যাধি ক্যান্সারে। আর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিস এবং প্রায় দুই লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি হলেও ভোক্তা ১৬ কোটি ৩০ লাখ। অতিরিক্ত সংখ্যাটি শোনার পর অবাক হওয়ার কিছু নেই।
 
বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ মা গর্ভবতী। মায়ের পেটে অবস্থানরত নবাগত শিশুরাও ভোক্তা হিসেবে গণ্য হবে। কারণ ভেজাল খাদ্যের পরিণতি তাদেরও ভোগ করতে হবে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে শিল্প খাতে ফরমালিনের প্রয়োজন ৪০-৫০ টন। কিন্তু প্রতি বছর ফরমালিন আমদানি করা হয় প্রায় ২০৫ টন। তার মানে বাড়তি ১৫০ টনের বেশি ফরমালিন বিভিন্ন খাদ্য-দ্রব্যের সঙ্গে দেশবাসীর পেটে গেছে। এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে মানবদেহে রোগ-ব্যাধি আক্রান্তের হার ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন আগামী ২০ বছরের মধ্যে মানুষের মৃত্যুর ৭০ শতাংশ কারণ হবে ভেজাল খাদ্য গ্রহণ।
 
এর থেকে প্রতিকার পেতে হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনশক্তি বাড়াতে হবে এবং কর্মপরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বোপরি নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে। কারণ ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে মানুষ হার্ট অ্যাটাক, ব্লাড ক্যানসারসহ বিভিন্ন মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। রমজান মাস এলেই পণ্যে ভেজাল নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কিন্তু এ বিষয়ে বাকি ১১ মাস অনেকটায় নিশ্চুপ থাকে সরকারি তদারকি সংস্থাগুলো। সরকারি সংস্থাগুলোর এমন আচরণে চটেছেন উচ্চ আদালতও।
 
ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেজালের বিরুদ্ধে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবে এটা সত্য যতদিন পর্যন্ত অসৎ ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তন না হবে ততদিন পর্যন্ত এ প্রবণতা চলবেই। ভেজাল একটি নীরব ঘাতক রূপে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। একজনকে খুনের শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড হয়, তবে যারা লাখ লাখ মানুষকে হত্যার ফাঁদ পেতেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন মৃত্যুদণ্ড নয়?
 
সম্প্রতি খাদ্যে ভেজালের অপরাধ প্রমাণিত হলে চীনে মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের দেশেও ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (গ)-এর ১ (ঙ) উপধারায় খাদ্যে এবং ওষুধে ভেজাল মেশালে বা বিক্রি করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনটির প্রয়োগ নেই। ২০১৩ সালে প্রণীত ভোক্তা অধিকার আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আইনটির যথেষ্ট ফাঁকফোকর রয়েছে। অবিলম্বে আইনটি সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা উচিত।
 
ভেজাল খাবারে যেসকল ক্ষতি হয়:
 
কপার সালফেট বা তুঁতের জলে ডোবানো শাক-সবজি খেলে যকৃতের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ভেজাল মসলার গুঁড়া পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্ষতি করে।
 
ইউরিয়া মেশানো মুড়ি ভাজা খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। সন্দেশ বা পানে রুপার তবকের বদলে অ্যালুমিনিয়ামের তবক ব্যবহারে আলঝেইমার রোগ হতে পারে।
 
লেড ক্রোমেট বা লেড আয়োডাইড মেশানো হলুদের গুঁড়ো ব্যবহারে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মেটালিক ইয়েলো বা কিশোরী রং খাবারে মেশালে চোখের ক্ষতি হতে পারে। খাবারে কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। এ ছাড়া চোখ, ত্বক ইত্যাদির ক্ষতি হয়। পাশাপাশি পেট খারাপ, বমি, চুলকানি, এনকেফেলাইটিস, রক্তস্বল্পতা, গর্ভপাত এবং বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে।
 
ফরমালিন এড়াতে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। ফরমালিন দেওয়া মাছের গায়ে পিচ্ছিল ভাব থাকবে না, মাছের গা খসখসে হবে, চোখের মণি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ না হয়ে ঘোলা আর মলিন দেখাবে। রান্নার পর এই মাছে স্বাভাবিক স্বাদ পাওয়া যাবে না, বিশেষ করে মাথা ও পেটের অংশ অত্যন্ত বিস্বাদ ও রাসায়নিক গন্ধযুক্ত হবে। একই ভাবে ফরমালিন দেওয়া দুধের তৈরি মিষ্টিতে দুধের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যাবে না। এর বদলে রাসায়নিকের গন্ধ পাওয়া যাবে।
 
ফরমালিন দেওয়া আঙুর, আপেল, নাশপাতির বেলায়ও স্বাভাবিক সুগন্ধ থাকবে না। আপেল, নাশপাতিও দিনের পর দিন রাখলেও পচে না। কোনো মাছের বা ফলের দোকানে ক্রেতার চোখ বা নাকে ঝাঁজ লাগলে বুঝতে হবে এখানে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়।। ফরমালিনের প্রভাবে নারীদের মাসিক ঋতুস্রাবের সমস্যা দেয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফরমালিন আরও ক্ষতিকর। এর কারণে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ হয়।
 
খাদ্যে ভেজাল রোধে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে সরকার। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, র‌্যাব, বিএসটিআই, সিটি কর্পোরেশন পৃথক পৃথকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ভেজাল, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজারজাত ও বিক্রি, বন্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। তবে এসব কর্মকর্তা বছরব্যাপী এবং সারাদেশে বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন। তবেই সম্ভব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পানির নিশ্চয়তা। এসব নিশ্চত করা গেলে মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ব্যাপক চিকিৎসা ব্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
 
 
 
আগামীনিউজ/এএস
আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner