1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

এক বছরে আত্মহত্যা করেছে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২, ০৩:৩৩ পিএম এক বছরে আত্মহত্যা করেছে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ গত বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে আত্মহননের পেছনে ‘সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা’ ও ‘আর্থিক সমস্যাসহ’ বেশ কয়েকটি কারণ ওঠে এসেছে। এরমধ্যে ‘পারিবারিক সমস্যা’ এবং ‘হতাশাও’ রয়েছে।

অর্ধশতাধিক জাতীয়-স্থানীয় সংবাদপত্র থেকে সমন্বয়কৃত আত্মহত্যার ঘটনাগুলো নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণে এবার উঠে এসেছে কিছু ভয়াবহ তথ্য। আজ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের এসব তথ্য প্রকাশ করে।

জরিপের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার পরিমাণ ছাড়িয়েছে একশতাধিক। এক বছরে এত বেশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা এবারই প্রথম।

২০২১ সালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো সমন্বয় করে দেখা যায়, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০১টি। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ৬২ জন। এছাড়া, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ১২-তে; যা মোট আত্মহননকারীর ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যা ৪; যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩ জন। এ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আর সবচেয়ে কম আত্মহত্যা করেছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যা ৯ জন। এছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যাদের সংখ্যা ৩ জন। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননের এ হার নিঃসন্দেহে ভীতিকর।

আত্মহননকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। সমন্বয়কৃত তথ্যগুলোর মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা এই বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে, যা মোট ঘটনার ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, ১৮-২১ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার ঘটনা মোট সমন্বয়কৃত ঘটনার ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। এছাড়া ২৬-২৯ বছর এবং ২৯ বছরের উর্ধ্বে এ হার যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা সংখ্যায় যথাক্রমে ১০টি ও চারটি।

সাধারণত নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা গেলেও এবারের সমন্বয়কৃত তথ্য থেকে দেখা গেছে, গত বছর আত্মহত্যাকারীদের একটা বড় অংশই ছিলো পুরুষ শিক্ষার্থী। সর্বমোট ৬৫ জন পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে যা মোট শিক্ষার্থীর ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ছিলো ৩৬ জন বা ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, পুরুষ আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যা নারীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। করোনার মধ্যে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়া পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পিছনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

মাসভিত্তিক আত্মহত্যা প্রবণতা পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যায় ডিসেম্বর মাসে এ হার সবচেয়ে বেশি ছিলো যা সমন্বয়কৃত ঘটনার ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ বা ১৫ জন এবং সবচেয়ে কম ছিলো এপ্রিল মাসে যা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ২ জন। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি দেখা যায়।

আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে আরও উদ্বেগজনক কিছু তথ্য উপস্থাপন করেছেন গবেষকরা। তথ্যগুলো থেকে দেখা যায় অনার্স পড়ুয়া তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি যা ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ধারণা করা যায়, এই শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারকে কেন্দ্র করে সামাজিক চাপ বেশি থাকে এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাদের মধ্যে হতাশার ছাপ বেশি দেখা যায়।

আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, সম্পর্কগত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে এ পথে ধাবিত হয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী। মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছে এ পথ। দুঃখজনক হলেও সত্যি পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং আর্থিক সমস্যা কবলিত হয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছেন ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া, মাদকাসক্ত হয়ে নির্বিকারে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে আত্মহত্যা করেছেন ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারাকে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্র বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, আত্মহত্যার কারণগুলো বাইরে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে, সমস্যা তার চেয়েও গভীর। নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ অপর্যাপ্ত বিধায়, তাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তারা সেটা সামলাতে পারে না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে তারা যেমন ভেঙে পড়ে, তেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদেরকে আশাহতেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদেরকে আশাহত করে। আমরা যদি তাদেরকে শেখাতে পারি যে ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেনো, সেটা জীবনেরই অংশ এবং আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে তাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে। ফলশ্রুতিতে এই শিক্ষার্থীরা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবমুখী কিছু জ্ঞান যেমন- আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি আত্মহত্যা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এখনই পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরবর্তীতে আমাদের অনুশোচনা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় দায়িত্বশীলদের অবদান রাখার সঠিক সময় এখনই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশেষত কোভিড পরিস্থিতিতে এই বিষয়ের পরিসংখ্যান এবং তার ফলাফল যথেষ্ট ভীতিকর। কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে আমরা যতখানি আতঙ্কিত, আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণ করা অসংখ্য মানুষকে নিয়ে কিন্তু আমরা ততোটা চিন্তিত নই।

সমীক্ষা বলছে, শিক্ষা সংক্রান্ত যেমন পড়াশোনার চাপ, বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যর্থতা, পরিবারের সাথে অভিমান, প্রেমঘটিত সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব ইত্যাদি নানাবিধ কারণ আত্মহত্যার জন্যে দায়ী। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মৃত্যুর মিছিলে প্রতিবছরই নতুন নতুন অসংখ্য তরুণ-তরুণী সামিল হবেন যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা উদাসীন। আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের জন্য হওয়া এই বড় ধরণের ক্ষতি রোধ করতে যদি সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায় এবং প্রতিটি জেলায় আত্মহত্যা সেল গঠন করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে অনেকাংশেই আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমি আশাবাদী যে, সমন্বিতভাবে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে এটা নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে আমরা এ ধরণের একটি দিক-নির্দেশনা তৈরি করতে পারব।

আগামীনিউজ/নাসির

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner