1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখবে প্রাণিসম্পদ খাত

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২০, ০৯:০৮ এএম গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখবে প্রাণিসম্পদ খাত

কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রায় আট লাখ প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর প্রভাবে কাজ হারিয়ে ফেরার অপেক্ষায় আছেন আরো অনেকেই। বিদেশফেরত এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিক দেশে ফিরে কীভাবে আয়-রোজগার করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যক্তি, পরিবার থেকে শুরু করে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে পথ দেখাতে পারে প্রাণিসম্পদ খাত। বিদেশফেরত শ্রমিকরা প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের কাজে যুক্ত হলে একদিকে কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদাও মিটবে।

কভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে গ্রামে ও গ্রোথ সেন্টারকেন্দ্রিক ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বেচাকেনা অনেকটাই কমে গেছে। কৃষিজ ও খাদ্যপণ্যের বিক্রি ছাড়া নেই তেমন চাঞ্চল্য। এসএমই খাতের পতন ও বৈরী পরিবেশের কারণে ৯৫ শতাংশ মানুষের উপার্জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৫১ শতাংশ পরিবারের এখন কোনো আয় নেই। দৈনিক মজুরির ও স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভরশীলদের এখন প্রায় ৬২ শতাংশের উপার্জনের সুযোগ নেই। গ্রামের আয় ও উপার্জনহীন এসব পরিবারে তীব্র হতাশা ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।

এদিকে কভিড মোকাবেলায় রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার; বিশেষ করে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ভোক্তারা সঠিক মান ও পরিমাণে এসব পুষ্টিকর পণ্য পাচ্ছে না। যদিও দেশের চাহিদা অনুসারে প্রতি বছর প্রায় ৫৩ লাখ টন দুধের ঘাটতি ও ২২ কোটি পিস ডিমের ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বেকারদের স্বাবলম্বী করতে অনেকটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে প্রাণিসম্পদ খাত।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদ খাত একধরনের অবহেলা ও বঞ্চনার মধ্যেও নিজেকে প্রস্ফুটিত করছে। সম্ভাবনা থাকলেও খাতটি বিকশিত করছি না আমরা। কিন্তু করোনার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতির রূপান্তর প্রক্রিয়া ধসে পড়েছে। তাই গ্রামীণ অর্থনীতিকে মাইলেজ দিতে পারে একমাত্র প্রাণিসম্পদ খাত। এজন্য বিশেষ কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু সামান্য প্রশিক্ষণ ও কিছু অর্থায়ন করলেই দেশের তরুণরাই এগিয়ে নিতে পারবে। এরই মধ্যে দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ এবং পোলট্রি শিল্পে নিয়োজিত ১৫ লাখের বেশি তরুণ সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে। এ খাতে আরো কয়েক লাখ তরুণকে নিয়োজিত করা সম্ভব। দক্ষতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় সহযোগিতা করলেই স্বয়ম্ভর হবে প্রাণিসম্পদ খাত।

গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে প্রাণিসম্পদ একটি খুবই সম্ভাবনাময় খাত হলেও সুদূর অতীতে খাতটির বিকাশে কখনই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এক দশক আগেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে ১০০ টাকা বরাদ্দের বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। কয়েক বছর আগেও কোরবানির গরুর চাহিদার জন্য নির্ভর করতে হতো পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর। ভারতের গরু রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দুই বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এখন দেশে উৎপাদিত পশুতেই কোরবানি ঈদের চাহিদা পূরণ হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানি প্রাণিসম্পদ খাতের একটি বড় অর্জন। তবে এ খাতে উন্নতির আরো অনেক সুযোগ আছে। যেমন দুধের চাহিদা পূরণে যদি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় খামারের ওপর নির্ভর করা হয় তাহলে দুধ ও দুগ্ধপণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় হওয়া বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পরিকল্পিতভাবে দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়ন ঘটানো হলে সেটা খুবই সম্ভব। এতে কেবল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে তা নয়, তরুণদের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থান হবে।

হালাল মাংসের কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈশ্বিক বাজারে আমাদের প্রবেশ খুবই সীমিত। ছোট, বড় ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন করা সম্ভব হলে খুব সহজেই রফতানির বাজার তৈরি করা যেতে পারে। এতে হালাল মাংস রফতানির মাধ্যমে দেশের রফতানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগিসহ সব ধরনের প্রাণীর উৎপাদন হয়েছে ৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার। দেশের খামারিরা প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ৬৮ লাখ পিস ডিম ও ৩ হাজার ২৭ কোটি টন মুরগি উৎপাদন করছে। প্রতি বছর দুধের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৯৯ লাখ ২৩ হাজার টন। অন্যদিকে মাংসের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৭৬ লাখ টন। চাহিদার সমান মাংসের উৎপাদন হলেও দুধের ঘাটতি রয়েছে। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকার দুধ আমদানি করতে হয়েছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই আমদানির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।

শিক্ষিত কয়েক লাখ তরুণ দুগ্ধ শিল্পে নিয়োজিত হওয়ার কারণে  দেশে চাহিদা ও জোগানে ঘাটতি অনেকটাই কমে এসেছে। তার পরও দেশের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। তবে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে জাত উন্নয়ন, কৃত্রিম প্রজনন, মানসম্পন্ন ব্রিড তৈরিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নত জাত না আসায় দেশী গাভির দুধ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে। ভালো জাত না থাকায় মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে খামারিদের বেশি পরিমাণে খাবার ও শ্রম দিয়ে কম মাংস উৎপাদন করতে হচ্ছে। এছাড়া দেশেই দুধ উৎপাদন হলেও আমদানিতে দেয়া হয়নি তেমন কোনো বাণিজ্য-বাধা। এছাড়া মার্কেট ভ্যালু চেইন উন্নয়ন, রোগবালাই দমন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনসহ নানান সহযোগিতা প্রয়োজন। এর সঙ্গে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে নতুন অনুষঙ্গ বিপণন দুর্বলতা। সেখানেও বাধা দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে।

দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা বিবি) সভাপতি আবু লুেফ ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষুদ্র খামারিরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ক্ষুদ্র খামারিদের নিবন্ধন করে ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। তরুণদের এ খাতে নিয়োজিত করতে পারলে খাতটির সব ধরনের উৎপাদনে দক্ষতার ছোঁয়া লাগবে। এরই মধ্যে গুঁড়ো দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। তাই আমিষের চাহিদা পূরণ ও দেশের মানুষের পুষ্টিনিরাপত্তায় প্রাণিসম্পদ খাতকে ঢেলে সাজাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের আরো বড় পরিকল্পনা নিতে হবে। করোনাকালে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সেই সুযোগ হারানো মোটেও যুক্তিসংগত হবে না।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পোলট্রি ও দুগ্ধ খামার তৈরি করা, গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে খামার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উৎপাদন ছাড়াও বিপণন ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে। গ্রামেই ছোট পরিসরে প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক কারখানা গড়ে তোলাটা দরকার। কাঁচা ও ঘাসজাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পতিত জমিকে কাজে লাগাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে প্রাণিসম্পদ খাত। আবার প্রাণিসম্পদ খাতে সম্পদবৈষম্য খুবই কম। ভালো মুনাফার কারণে দ্রুত আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব। ফলে প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দ্রুত গ্রামীণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়ানো ও বিপণন ব্যবস্থায় সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হচ্ছে। পুষ্টিনিরাপত্তা এ খাতের অবদান বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। খামারে উৎপাদিত দুুধ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণের জন্য মিল্কভিটাকে আরো গতিশীল করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের ব্যাংকঋণের সুদ মওকুফ ও কিস্তি স্থগিতকরণের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদানে কাজ করা হয়েছে। প্রক্রিয়াকরণে বেসরকারি খাতকে নিয়োজিত করা হচ্ছে। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।(খবর :দৈনিক বণিক বার্তা, ১৮ জুন২০২০) 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner