1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

বীরকন্যা প্রীতিলতা

আশরাফী নিতু প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২১, ০৩:২৬ পিএম বীরকন্যা প্রীতিলতা
ছবি: আগামী নিউজ

ঢাকাঃ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯১১ সালের ৫ মে, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের ডা.খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই ১৯২৭ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করে ঢাকায় ইডেন কলেজে ভর্তি হন। মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৩০ সালে তিনি আই. এ. পাস করেন। এরপরে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে বি.এ (দর্শন ) অনার্সে ভর্তি হন। 

সেই সময়ে চট্টগ্রাম বিদ্রোহের অন্যতম বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কলকাতার অলীপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির প্রতীক্ষায় ছিলেন। প্রীতিলতা অলীপুর জেলে গিয়ে বোন পরিচয় দিয়ে একেবারে অচেনা রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন। পরবর্তীতে তিনি একই পরিচয়ে তাঁর সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁর সাহচর্যে এসে বিপ্লবের গাঢ় রঙ প্রীতিলতার জীবনে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে শুরু করে। রামকৃষ্ণের ফাঁসির পর তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের পথে সংকল্পবদ্ধ হন। সবার অনুরোধে বি.এ পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা চলে যান চট্টগ্রামে। কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁর এবং তাঁর সঙ্গী বীণা দাশগুপ্তের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁদের দুজনকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। 

বি.এ পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে বাড়ি এসে দেখেন তাঁর পিতার চাকরি হারিয়েছেন। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে বিশিষ্ট দানশীল ব্যক্তিত্ব অপর্ণাচরণ দে’র সহযোগিতায় সেসময়ে নন্দনকাননে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। শিক্ষকতা, পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও তাঁর মন থেকে তখনও সশস্ত্র বিপ্লবের চেতনা বিন্দুমাত্র ম্লান হয়ে যায় নি। বিপ্লবী কল্পনা দত্তের কাছে তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। 

অবশেষে ১৯৩২ সালের ১৩ জুন ধলঘাট গ্রামের একটি গোপন ডেরায় প্রীতিলতার সাথে দেখা করেন মাস্টারদা সূর্যসেন। সেদিন রাতেই বাড়িটিতে ব্রিটিশ ফৌজ আক্রমণ করে। বিপ্লবীদের সঙ্গে সেই সংঘর্ষে ব্রিটিশ ফৌজের একজন ক্যাপ্টেন নিহত হন এবং বিপ্লবী নেতা নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন শহীদ হন। মাস্টারদা প্রীতিলতাকে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। 

সেসময়ে চট্টগ্রাম ইউরোপীয়ান ক্লাব ছিল সরকারি ও ফৌজি অফিসারদের ভারতবিরোধী ষড়যন্ত্র কেন্দ্র। এর সামনে একটা সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো, যাতে লেখা ছিলো- “কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ”। বিপ্লবীরা এই ক্লাবটি আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন আগে থেকেই। এই ক্লাব আক্রমণের জন্য প্রথমে বিপ্লবী শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবীর ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। নানা কারণে পরপর দুইবার সেই আক্রমণ ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার ভার সহ্য করতে না পেরে শৈলেশ্বর চক্রবর্তী অবশেষে এক রাতে কাট্টলীর সমুদ্রতীরে গিয়ে নিজের রিভলবার দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনা পরিক্রমায় এই অভিযান চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে প্রীতিলতার ওপর। স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারেন তার দৃষ্টান্ত তৈরি করার জন্য সূর্যসেন নিজেই ইউরোপীয়ান ক্লাবটি আক্রমণ করার দায়িত্ব প্রীতিলতাকে দেন। সিদ্ধান্ত হয় ২৩ সেপ্টেম্বর (১৯৩২) পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউরোপীয়ান ক্লাব হামলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। আক্রমণের দিনটি ছিল শনিবার, প্রায় ৪০ জন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবী দলে ছিলেন ১০-১২ জন। তাঁরা তিন ভাগে ভাগ হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন রাত ১০.৩০টা নাগাদ। প্রীতিলতার পরনে ছিল খাকি শার্ট, ধুতি, মাথায় পাগড়ি ও কোমরে চামড়ার কটিবদ্ধে রিভলবার। অভিযানের শেষের দিকে হঠাৎ একজন গুর্খা অফিসারের ছোঁড়া গুলি প্রীতিলতার হাতে লেগে বুকের পাশ দিয়ে চলে যায়, ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। রক্তক্ষরণে তাঁর গায়ের পোশাক ভিজে যাচ্ছিলো। দূর থেকে মিলিটারি মোটরগাড়ির আলো এসে ক্লাবের দিকে পড়তেই প্রীতিলতা বিপ্লবী দলটিকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। কিছুদূর এগিয়ে যাবার পর তিনি খোঁজ নেন সবাই ঠিকমতো এসেছে কি-না। যখন দেখা গেল সবাই ফিরে এসেছেন, তখন তিনি তাঁর পোশাকের ভিতর থেকে বের করেন মারাত্মক বিষ পটাসিয়াম সায়ানাইড। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১২টা পেরিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বরে প্রবেশ করছে। নির্দেশ অনুযায়ী ধরা না দিতে, ব্রিটিশ সরকারের হাতে মৃত্যুকে অস্বীকার করে তিনি মুখে সেই মৃত্যু হলাহল পুরে দেন। 

এই সেই বিষ। মাত্র একুশ বছর বয়সে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাসে অমরত্বের খাতায় নিজের নাম লিখিয়ে নিলেন প্রীতিলতা। 

পরবর্তীতে তাঁর মৃতদেহ থেকে পাওয়া যায় পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের প্ল্যান, শহীদ রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফটো, ভারতীয় রিপাবলিক্যান আর্মির একটি বিজ্ঞপ্তি- যাতে প্রীতিলতার ফটো ছাপানো ছিল, একটি হুইসেল এবং নিজের হাতে লেখা একটি বিবৃতি। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “নারীরা আজ কঠোর সংকল্প নিয়েছে যে, আমার দেশের বোনেরা আজ নিজেকে দুর্বল মনে করবেন না। সশস্ত্র ভারতীয় নারী সহস্র বিপদ ও বাধাকে চূর্ণ করে এই বিদ্রোহ ও সশস্ত্র মুক্তি আন্দোলনে যোগদান করবেন- এই আশা নিয়ে আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হলাম।” 

প্রীতিলতার এই বাণী যুগের পর যুগ ধরে আলো হয়ে পথ দেখাচ্ছে সকল বিপ্লবী নারীদের। অন্ধকার পথে আলোর দিশারী হয়ে তিনি চিরকাল জ্বলতে থাকবেন এবং আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকবেন বিপ্লবী চেতনায়।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner