1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি
পৌনে ৫০০ বছরের পুরনো 

অপরূপ নয়নাভিরাম রূপগঞ্জের ‘মাছুমাবাদ দীঘি’

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২১, ০৩:২৪ পিএম অপরূপ নয়নাভিরাম রূপগঞ্জের ‘মাছুমাবাদ দীঘি’
ছবি : আগামী নিউজ

নারায়নগঞ্জঃ মাসুম খান ছিলেন খোরাসানের অন্তর্গত তুবরাতের সাইয়্যিদ বংশীয়। তিনি ছিলেন সম্রাট আকবরের অনুজ মির্জা মুহম্মদ হাকিমের দুধ ভাই। তাঁর পুরো নাম আবুল ফতেহ মুহম্মদ মাসুম খান। তবে মাসুম খান কাবুলি নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে কাত্রাবোতে (বর্তমান মাসুমাবাদ} তাঁর মৃত্যু হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার মাসুমাবাদে দীঘির উত্তর পাড়ে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাধিসৌধে তিনি সমাহিত আছেন। সম্ভবত সৌধটি নিজেই নির্মাণ করেছেন। দীঘিটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত আছে কি-না তা কারো জানা নেই। ন্যুনতম চিহ্ন নেই রক্ষণাবেক্ষণের।

বাংলা পিডিয়া ও স্থানীয় কিছু গ্রন্থ থেকে জানা গেছে, মধ্যযুগের ঐতিহাসিক নগরী কত্রাবোর অংশ ছিলো এই দীঘি। প্রবল পরাক্রমশালী মোগল সম্রাট আকবরকে নাস্তানাবুদ করা বার ভুঁইয়ার ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত এলাকা কত্রাবো। প্রাচীণত্বের নিদর্শন হিসাবে দীঘির পশ্চিম পাড়ে আছে ইমারতাদি আর ঘাটের ধ্বংসাবশেষ উত্তর পাড়ে প্রাচীরবেষ্টিত সমাধিসৌধ। এটা ছিলো ঈসা খাঁর সুরক্ষিত দুর্গ ও অস্ত্রাগারের নগর কত্রাবো। এমন ধারণাই পাওয়া যায় ইংরেজ পর্যটক রাল্ফ ফিচ-এর বিবরণ থেকে। পরবর্তীতে এই নগরীর অংশ বিশেষ পুনঃনির্মাণ করেন আফগান মাসুম খান কাবুলি। ১৫৯৮ তে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত কত্রাবো দখলে ছিলো মাসুম খান কাবুলির। তাঁর নামেই হয়তো গ্রামের নাম হয়ে থাকবে ‘মাসুমাবাদ’।

লোকমুখে প্রচলিত আছে, প্রাচীনকালে এই দীঘি থেকে অলৌকিকভাবে পাওযা যেতো বিয়ে শাদির জন্য ব্যবহৃত সকল প্রকার হাড়িপাতিল, বাসন-চামচ, ডেকচিসহ খানাপিনার সব উপকরণ। সেই সময়কালে কোনো বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠান হলে সন্ধ্যায় দীঘির পাড়ে চাহিদাপত্র দিয়ে পত্র লিখে রেখে আসলে পরদিন দীঘিতে অলৌকিকভাবে ঐসব জিনিসপত্র নিয়ে নৌকা ভাসতো। এরকম আরো অনেক রূপকথার গল্প রয়েছে এই দীঘিকে ঘিরে। দীঘির উত্তর পাড়ে রয়েছে দেওয়ান মাসুম খাঁসহ বুজুর্গ ব্যক্তির সমাধিস্থল।

রাজধানী ঢাকার কাছে বিশাল দীঘি রয়েছে সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। পাঠক রাজধানী ঢাকার অতি সন্নিকটে রয়েছে নয়নাভিরাম দীঘি। দীঘির মাঝখানে গড়ে উঠা দ্বীপটি দীঘির সৌন্দর্যকে আরো ফুঁটিয়ে তুলেছে। প্রায় পৌনে ৫০০ বছরের পুরনো দীঘি মোঘল আমলের কীর্তি বহন করছে। দীঘি নিয়ে রয়েছে নানা রূপকথার গল্প। মধ্যযুগের বিখ্যাত মাছুমাবাদ দিঘী যা সারা বাংলার এক অনুপম সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক দীঘি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ও অপরূপ নয়নাভিরাম দীঘিটি ভ্রমণকারীদের মন ছুঁয়ে যায়।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের মাসুমাবাদ এলাকায় মহারাজাদের কীর্তিময় মাছুমাবাদ দিঘী। চারদিকে সুউচ্চ মাটির টিবি, মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন দীঘির নীল জলরাশি। এর মাঝখানে জলটঙ্গী (দ্বীপ} যে কারো মনকে ছুঁয়ে যাবে অনায়াসে।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাসুমাবাদ গ্রামের ‘মাছুমাবাদ দীঘি’। উত্তর-দক্ষিণে আয়তাকার বিশালাকার এই দীঘির আয়তন ২৮ একরেরও উপর  দৈর্ঘ্য ৪৮০ মি. প্রস্থ ২৪০ মি.)। গভীরতা প্রায় ১১ ফুট। চতুর্দিকে ঝুঁকে থাকা বৃক্ষরাজী বেষ্টিত স্বপ্নলোকের এই দীঘির ঘাটে বাঁধা স্পীডবোট, দু’পাশে রয়েছে সুপ্রশস্থ শান বাঁধানো ঘাটলা। পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে এখন জনবসতি, পাকা সরু রাস্তা দ্বারা বেষ্টিত চতুর্দিক। কথিত আছে, ৩০,০০০ শ্রমিক, ৫০০ হাতী নিয়ে এই দীঘি খনন করা হয়েছে।

দীঘির পাড়ে কথা হয় এলাকার সত্তোর্ধ্ব রতন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাপ আমাগো জানা নাই এ দীঘির বয়স কত। বাপ-দাদাগো মুখে হুনছি হেগো আমলের আগেও এই দীঘি আছিলো। মানুষ আহে, ঘুইরা যায়। মাসুমাবাদ এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ নরেন্দ্র চন্দ্র সাহা বলেন, দীঘিটার বয়স ৪৫০ বছরের উপড়ে হইবো। আমরা এইডারে গাইভী দীঘি বইলা চিনি। দীঘির পাড়ে বেড়াতে আসেন সাতারকুল এলাকা থেকে রুনা আক্তার ও তার পরিবার। কথা হয় তাদের সঙ্গে। রুনা আক্তার বলেন, পাশে ভাইলা এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে জানতে পারলাম এখানে বড় একটা দীঘি আছে। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতোনা এতো বড় দীঘি ঢাকার পাশে রয়েছে। দীঘির মাঝখানে জলটঙ্গী দেখে আরো ভাল লাগলো।

পরিকল্পনার অভাবে, এলাকার পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রমেই আকর্ষণ হারাচ্ছে এক সময়ের মধ্যযুগের বিখ্যাত অমর কীর্তি মাছুমাবাদ দিঘী। অথচ সঠিক পরিকল্পনা, নিরাপত্তাসহ পরিবেশ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে পারলে মাছুমাবাদ দীঘি হতে পারে পর্যটকদের মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দু।

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner