1. প্রচ্ছদ
  2. জাতীয়
  3. সারাবাংলা
  4. রাজনীতি
  5. রাজধানী
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আদালত
  8. খেলা
  9. বিনোদন
  10. লাইফস্টাইল
  11. শিক্ষা
  12. স্বাস্থ্য
  13. তথ্য-প্রযুক্তি
  14. চাকরির খবর
  15. ভাবনা ও বিশ্লেষণ
  16. সাহিত্য
  17. মিডিয়া
  18. বিশেষ প্রতিবেদন
  19. ফটো গ্যালারি
  20. ভিডিও গ্যালারি

মেধা সম্পদ রক্ষায় কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২০, ০১:১১ এএম
ছবিঃ আগামী নিউজ

ঢাকাঃ কপিরাইট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন। কপিরাইট দ্বারা মেীলিক সৃষ্টিকর্মের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করা হয়।কপিরাইট মূলত “শিল্প-স্রষ্টা ও পারফরমারের  মেীলিক সৃষ্টি কর্মের জন্য স্বত্ব প্রদান এবং বিনা অনুমতিতে যে কোন ধরনের পৃন:মুদ্রণ, প্রচার, অনুবাদ বা অনুলিপি নিবৃত্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা”। আপনার মেধা সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আপনার। আর এই কপিরাইট সম্পর্কিত বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আগামী নিউজ ডট কম এর সাথে আলোকপাত করেছেন বাংলাদেশ কপিরাট অফিস এর রেজিস্টার (যুগ্ম-সচিব) জাফর রাজা চৌধুরী। 

আগামী নিউজঃ মেধাস্বত্ব কি?

জাফর রাজা চৌধুরীঃ মেধাস্বত্ব হচ্ছে ক্রিয়েশন অব মাইন্ড। মানুষের মস্তিষ্ক জাতও অধিকার। যেমন আপনি একটা গান লিখলেন, একটা কবিতা লিখলেন, একটা উপন্যাস রচনা করলেন  কিংবা একটা সফটওয়্যার তৈরি করলেন। এটার জন্য শারীরিক পরিশ্রম যে রকম প্রয়োজন কিন্তু এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার মেধার প্রয়োগ। এই মেধার মাধ্যমে যখন আপনার একটা সৃষ্টি ্তৈরি হলো সৃজিত কর্ম তৈরি হলো এই সৃজিত কর্ম যিনি তৈরি করলেন এই কর্মের উপর সৃজনকারীর যে অধিকার এটাই হচ্ছে মেধাস্বত্ব। 

আগামী নিউজঃ মেধাস্বত্ব রক্ষায় কপিরাইটের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন হলো কখন থেকে, এর গুরুত্ব কতটুকু?

জাফর রাজা চৌধুরীঃ কপিরাইট আইনের ভূমিকা অপরিসীম। মূলত মেধাস্বত্ব রক্ষার জন্য বিশ্বে কপিরাইট আইনের প্রবর্তন হয়েছে। আমরা যদি ধরে নেই সেই আদি পর্বে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম সুইজারল্যান্ডের বার্নে একটা কনভেনশন হয়। বেশ কিছু দেশ একত্রিত হয়ে একটা আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। মূলত এটা ছিল গ্রন্থ রচনার উপরে। যাতে দেখা গেলো লেখক বহু কষ্ট বহু শ্রম ও মেধা খাটিয়ে একটা রচনা তৈরি করলেন, একটা গল্প ও একটা উপন্যাস কিংবা একটা নাটক রচনা করলেন কিন্তু পরবর্তীতে এটার যে স্বত্ব সেটা আরেক জন হয়ত কপি করে নিচ্ছে। যখন কপি করে নিচ্ছে তখন কিন্তু তার মেধা বা পরিশ্রমের প্রয়োজন হচ্ছে না। অন্যদিকে যিনি এত কষ্ট বা শ্রম ও মেধা দিয়ে একটা রচনা তৈরি করলেন তিনি কিন্তু তার প্রকৃত যে স্বত্ব  বা অধিকার সেটা থেকে বঞ্চিত হলেন। এমনকি তিনি যে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তার নামটাও অন্যজন নিয়ে নিচ্ছে। এই অবস্থার উত্তোরণ ঘটানোর জন্য সুইজারল্যান্ডের বার্নে বেশ কিছু দেশ একত্রিত হয়ে একটা আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনা করে।এই চুক্তিতে বলা হলো যে লেখকের অনুমতি ব্যতিত অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে পারবে না। ১৭০৯ সালে বিশ্বের প্রথম কোন দেশের পার্লামেন্টে (ইংল্যান্ডে) কপিরাইট আইন প্রণীত হয়। ১৯১৪ সালের এক সংশোধনীর মাধ্যমে এ উপমহাদেশকে কপিরাইট আইনের আওতাভূক্ত করা হয়। দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার ১৯১৪ সালের কপিরাইট আইন বাতিল করে ১৯৬২ সালে ‘কপিরাইট অধ্যাদেশ’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করে কেন্দ্রীয় কপিরাইট অফিস প্রতিষ্ঠিত করে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে অনুমোদিত আইনের মাধ্যমে ১৯৬২ সালের অধ্যাদেশের কিছু ধারা সংশোধন করে আঞ্চলিক অফিসকে জাতীয় পর্যায়ের দপ্তরের মর্যাদা প্রদান করে। সেই অধ্যাদেশের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রুপই এখন চলছে। দিন দিন যেমন সৃষ্টিশীল কর্মের পরিধি বাড়ছে তেমনি এই কপিরাইট আইনের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আগামী নিউজঃ কপিরাইট সম্পর্কিত ধারনা এখনো বাংলাদেশে অপ্রতুল, এর কারণ কি, এ সংকট সমাধানে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

জাফর রাজা চৌধুরীঃ কপিরাইট সম্পর্কে প্রথম যে সমস্যা আমার মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে ফিজিক্যাল প্রোপ্রাটি যেমন আপনার একটা বাড়ি আছে, আপনার একটা গাড়ি আছে কিংবা আপনার অন্য মেটারিয়েলেস্টিক প্রোপ্রাটি আছে এগুলো দেখা যায় কিন্তু মেধাস্বত্ব দেখা যায় না। যার ফলশ্রুতিতে প্রথমে আগ্রহ টা জন্মায় না। যেহেতু এটা দেখা যায় না সেহেতু এটার প্রতি আমার আবেগ আমার আকর্ষণ সেটাও কম। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের সচেতনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। শুধু গ্রাম অঞ্চল নয় আমাদের শহর অঞ্চলেও মেধাস্বত্ব সম্পর্কে আশানুরূপ সচেতনতা নেই। আপনি ধরুন আপনি একটা বই লিখলেন এই বইটি লেখার পরে আপনার যে এটির কপিরাইট করার দরকার সেটা তো আপনি প্রয়োজন মনে করেন না। যখন আপনি আপনার মেধাস্বত্বকে মূল্যবান সম্পদ মনে করবেন তখন এটাকে কপি রাইট করবেন। এ বিষয়ে আমরা কিছু অ্যাওয়ারনেন্স প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি মূলত সেটা ঢাকা কেন্দ্রিক হলেও ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু জেলায় এবং বিভাগীয় শহরে এই অ্যাওয়ারনেন্স প্রোগ্রামগুলো চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই প্রোগ্রামগুলো চালিয়ে এলেও এই যে আমাদের এই উদ্যোগটার যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে দেখা যাবে হয়ত ১ কোটি মানুষ ক্রিয়েটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই এক কোটির মধ্যে আবার মূল্যবান ক্রিয়েটিভ কাজ করছে ১০ শতাংশ। অর্থ্যাৎ এই দশ শতাংশ মানুষের কাছে আমরা তো আমাদের এই সীমিত সক্ষমতা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে মিডিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মিডিয়া এটা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে এই মেসেজটা দিতে পারে যে আপনার সম্পদ এটা রক্ষার দায়িত্ব আপনার। এটার রয়্যালটি দিয়ে আপনার জীবনমান বা জীবনকাল চালিয়ে নিতে পারবেন। এই মেসেজটা তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে কারণ বিভিন্ন যায়গায় এটা স্বীকৃত যে ফিজিক্যাল প্রোপ্রাটির চেয়ে ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপ্রার্টির মূল্য অনেক বেশি। আপনার মেধাস্বত্ব আপনার, আপনার মেধা দিয়ে তৈরি যে সম্পদ সেটাকে রক্ষার জন্য কপিরাইট করবেন। কপিরাইট আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে, আপনার যদি কপিরাইট সনদ থাকে তাহলে এটা নিয়ে যদি মামলা হয় তাহলে এটা ভুল প্রমাণিত হবার আগ পর্যন্ত এটা আপনার সম্পদ। তাই আমি বলি যদি আপনার মেধাসম্পদ কে মূল্যায়ন করতে পারেন, আপনি যদি মনে করেন আপনার মেধা সম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান একটা সম্পদ সেক্ষেত্রে আমি বলবো আপনার মেধা সম্পদটাকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করবেন। এটাই মূলত আপনার সৃষ্টির প্রটেকশন দেয়ার মক্ষম অস্ত্র।

আগামী নিউজঃ সম্প্রতি সংগীত শিল্প সম্পদকে রক্ষায় কপিরাইট আইন থাকা স্বত্বেও সংগীত নীতিমালা করার যে উদ্যোগটা আপনারা নিয়েছেন সেটা কেন?

জাফর রাজা চৌধুরীঃ কপিরাইট আইন হলো এই সেক্টরে কিছু বেসিক কথা বলা থাকে যে এই কাজগুলো আপনি করতে পারবেন। আইনে বিস্তারিত কিছু থাকে না। আইনটাকে পরিচালনা করার জন্য রেগুলেশন দরকার, বিধিমালা দরকার। আর এই বিধিমালাকে আরও সুস্পষ্ট করার জন্য দরকার পলিসি।  একটা গানের কথা ধরুন, একটা গানে গীতিকার থাকে সুরকার বা গায়ক থাকে সেক্ষেত্রে সেই গানের রয়্যালটি কে পাবে সেটা কিন্তু কপি রাইট আইনে বিস্তারিত থাকবে না । আর বিস্তারিত বিষয়ের জন্য দরকার পরবে নীতিমালা বা পলিসি। এক্ষেত্রে সংগীত শিল্প সম্পদকে রক্ষায় সংগীত নীতিমালা করা অতীব জরুরী।

আগামী নিউজঃ বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে আপনার কর্মজীবনে নতুনত্ব কি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

জাফর রাজা চৌধুরীঃ এখানে আমার চার বছরের কর্মজীবন চলছে এটা কিন্তু একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য দীর্ঘ সময়। এই সময়ে আমি দেখেছি যে এই কপিরাইট বিভিন্ন জায়গা থেকে রেজিস্টেশন করাটা ডিফিকাল্ট। এক সময় এই রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ঢাকা আসতে হতো কিংবা বিভাগীয় শহরে এখন সেটাকে আমরা অনলাইনে করেছি। সেটার আমরা ভালো ফলও পেয়েছি। এখন শুধু বাংলাদেশ থেকে নয় বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেও বাংলাদেশি কর্ম যদি কেউ কপিরাইট করতে চায় সেটা সে করতে পারে। আমি মনে করি এটা আমার সময়কালে সবচেয়ে বড় অর্জন। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমি ২০১৭ সালে এখানে যোগ দেয়ার পরের বছরে কপিরাইটের সংখ্যা ছিল গড়ে ৫৫০ টি। যা এখন প্রায় ৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কিছু ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি। কপিরাইট রিলেটেড কাজে যারা জড়িত তাদের বেশ কিছু অর্গানাইজেশন আছে তাঁদের সাথে আমরা ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করেছি। এই অর্গানাইজেশনের সাথে আমরা অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম করেছি। এর বাইরেও আমরা ফেসবুক ফ্যান পেইজ ডেভেলপ করি, এছাড়া কুইক রেসপন্স এর জন্য আমরা কিছু ডেডিকেটেড ফোন নাম্বার দিয়েছি যেন কপিরাইট সম্পর্কে যে কোন তথ্য জানতে পারে এই নাম্বারগুলোতে ফোন করে। এর বাইরে বিখ্যাত কিছু ব্যক্তি কিংবা মহিলারা যারা স্ব-শরীরে কপিরাইট অফিসে এসে কপিরাইট করা মুশকিলের তাঁদের ক্ষেত্রে তাঁর হয়ে আমরা তাঁর বাসায় গিয়ে কপিরাইট করে দিচ্ছি।

আগামী নিউজঃ আগামী নিউজের মাধ্যমে কপিরাইট সম্পর্কে দেশের মানুষের কাছে কোন মেসেজ পৌঁছাতে চান ?

জাফর রাজা চৌধুরীঃ অবশ্যই। যারা সৃজনশীল কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত আছেন যেমন সাহিত্য, গবেষণা তথ্য, কম্পিউটার সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপস, কম্পিউটার গেমস, ফিল্ম, কার্টুন, শ্লোগান, পেইন্টিংস, আর্টিস্টিক ওয়ার্ক, নাটক ও বিজ্ঞাপন নিয়ে যারা কাজ করেন  তাঁদের সম্পদকে প্রটেকশনের জন্য কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করান। কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য খুব বেশি কিছুর দরকার হয় না। এটার জন্য মেইন দরকার আপনার যে ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক সেটার দুইটি কপি, ন্যাশনাল আইডির ফটোকপি অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি ও দুই কপি ছবি এবং একটা হলফ নামা সেই সাথে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার টাকা এবং একটি অঙ্গিকারনামা দিতে হয় এই অঙ্গিকার নামা হচ্ছে আপনার সৃষ্ট কর্ম যে আপনার সেটার হলফনামা এটা হলেই আপনি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এটা করলে আপনার সৃষ্টিশীল কর্মের যে আপনি ক্রিয়াটার সেটার স্বীকৃতি পাবেন। শুধু স্বীকৃতিই নয় আপনার মৃত্যুর পরে ৬০ বছর পর্যন্ত এটার অধিকার পাবেন আপনার উত্তরাধিকার। সুতরাং আমি মনে করে আপনার ক্রিয়াটিভ ওয়ার্ক সেটা আপনার সন্তানের মতো, এই সন্তানের পরিচিত এবং আপনিই যে এটার ক্রিয়াটার এটা প্রমাণ করার জন্য আপনারা যেখানেই থাকুন কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করুন।  এটাই হবে যারা ক্রিয়েটার, যারা মেধাসত্বের অধিকারী তাঁদের প্রতি আমার একটা বিশেষ আবেদন। 

আগামীনিউজ/এএইচ

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে
Small Banner