Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মানবসেবামূলক পেশা এখন ভয়াবহ বাণিজ্য!


আগামী নিউজ | ড. নিম হাকিম প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২০, ০৭:৩৪ পিএম
মানবসেবামূলক পেশা এখন ভয়াবহ বাণিজ্য!

গুরুত্বপূর্ণ পেশা এখন নিতান্তই বাণিজ্য। পেশাগত নৈতিকতা এখন পরিণত হচ্ছে অনৈতিক বাণিজ্যে। ডাক্তার ভাইয়েরা তাদের রোগী দেখা বা ইনভেস্টিগেশনে বা রোগ তদন্তে তাদের ক্লিনিক্যাল স্কিলস বা ইনভেস্টিগেটিভ স্কিলস প্রয়োগ না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যন্ত্রের ওপর নির্ভর হয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে তাদের পেশাগত দক্ষতা নষ্ট হচ্ছে এবং অনৈতিকভাবে হাসপাতাল বা ক্লিনিক পরিচালনাকারীদের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে এবং নিজেও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন ফলে তাদের পেশাগত নৈতিক শপথ ভঙ্গ হচ্ছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চায় তারা যে জ্ঞান ও দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার প্রয়োগ করছেন না মোটেও। একজন রোগীর উপসর্গ সুক্ষ্মণু-সুক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ না করে তাকে নানারূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপদেশপত্র লিখে দিচ্ছেন অথবা শুধুমাত্র উপসর্গের উপর ভিত্তি করে শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন যার মোটেও প্রয়োজন নেই।

ব্যবস্থাপত্রে যত বেশি প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখা হচ্ছে তার থেকে তার কমিশন, উপঢৌকন বা ভ্রমণ বাণিজ্যও হচ্ছে কিন্তু তার এই পেশাগত অনৈতিকতায় রোগীর যে মারাত্বক শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি মোটেও তোয়াক্কা করছেন না। তার নিজের লাভটাই তার কাছে মুখ্য। অন্যদিকে রোগীর আর্থিক সামর্থ্য অসামর্থ্যের বিষয়টিও তার কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না।

এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে, রোগ নির্ণয়ে ডাক্তার তার নিজের নিরীক্ষণ দক্ষতা প্রয়োগ না করে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন তার ৮০ ভাগ পরীক্ষার ফলাফলই নেতিবাচক বা নেগেটিভ। ডাক্তারদের এই অনৈতিকতায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চিকিৎসা প্রার্থীরা। বাণিজ্য বেড়ে যাচ্ছে নৈতিকতাহীন ব্যবসায়ীদের, তাই চিকিৎসার মত গুরুত্বপূর্ণ পেশাটি এখন নিতান্তই বাণিজ্য।

অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থাপত্রও লিখছে শতকরা ৮০ ভাগ ডাক্তার, এতে করে ওষুধ উৎপাদনকারীর সংখ্যা ও ওষুধ উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত, ফলে ওষুধ উৎপাদনকারী ও ডাক্তার উভয়ই লাভবান হচ্ছে, প্রক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ধনী-দরিদ্র সকল শ্রেণির রোগীরা। তাদের ব্যক্তিগত লাভের কারণে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনে মারাত্বক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে লাখো মানুষ!

ডাক্তারদের পেশাগত শপথ বা হিপোক্রেটিক ওথ যার প্রয়োগ প্রচলন করেছিলেন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটাস তাও ভঙ্গ হচ্ছে অক্ষরে অক্ষরে।  জনস্বাস্থ্য খাত ধ্বংসের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এভাবে।

তার চেয়ে ভয়াবহ হলো— সকল শ্রেণির রোগীদের মধ্যে একটা ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে ডাক্তার যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপদেশ বা পরামর্শ না দেন তবে ওই ডাক্তারের প্রতি তাদের আস্থার অভাব সৃষ্টি হচ্ছে কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মে গিয়েছে যে, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিবেন এটাই সত্য। ডাক্তারের পর্যবেক্ষণ ও ক্লিনিক্যাল দক্ষতা বা ইনভেস্টিগেট স্কিলের ধারণা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ ডাক্তার ওই দক্ষতা প্রয়োগ করছেন না ফলে রোগীরা তা অবগত নয়। সৃষ্টিকর্তার পরেই রোগীরা ডাক্তারের ওপর বিশ্বাস রাখেন এবং তাদের পেশাগত অসততার কথা রোগীরা চিন্তাও করেন না।

আর একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা এবং অপারেশনের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি ডাক্তাররা বা ভালো চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে নিজেদের প্রাইভেট চেম্বারে ডাকেন এবং সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় অপারেশনের সুযোগ থাকলেও প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন।

আরও একটি ভয়াবহ তথ্য হলো— গর্ভবতী মায়েরা সন্তান প্রসবের জন্য গাইনি ডাক্তারদের কাছে গেলে তারা আর নরমাল ডেলিভারি করাচ্ছেন না কারণ তাতে ডাক্তারের রোজগার হয় কম। তাই ৮০-৯০ ভাগ ক্ষেত্রে তারা সিজারিয়ান করে মোটা অঙ্কের অর্থ রোজগার করছেন যা তাদের পেশাগত সততার মধ্যে পড়ে না।

এগুলো হলো সামাজিক গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণের সামান্য অংশ। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।


টিআইএস/এএম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে