Dr. Neem on Daraz
Victory Day

রংপুরের এলীর আকুতি


আগামী নিউজ | মহিউদ্দিন মখদুমী প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২২, ১১:৫৫ পিএম
রংপুরের এলীর আকুতি

স্পর্শ সুখের অনুভূতি আবৃত্তি করে বেঁচে থাকা যায়। স্পর্শ সুখ জীবনের গোপন সম্পদ হয়ে উঠে কখনো কখনো। সেই স্পর্শ যদি হয় সমৃদ্ধ কোন ব্যক্তির হাতের তবে তো কোন কথাই নেই। ওই স্পর্শ সুখের স্মৃতি আওড়িয়ে পেরিয়ে আসা জীবনের দিনগুলো বন্ধ চোখে দেখা যায় যখন তখন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রংপুরের জেনিফার এলীর মাথায় স্পর্শ করে আদরের রেশ রেখে গেছেন। এখনো সেই রেশ জেনিফার এলীর শরীরে ঝলক এনে দেয়। অন্য রকম অনুভূতিতে কেঁপে উঠে তার শরীর মন।  আবেগ অশ্রæ বিন্দু হয়ে ঝরে পড়ে। সময়ের পালা বদলে বয়স জমে গেছে জেনিফার এলীর। পুরনো সেই স্মৃতি তাড়িত হয়ে এখনো আঁচলে চোখ মোছেন তিনি। জীবনের প্রায় শেষ আয়ুতে এসে জেনিফার এলীর একটিই বাসনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মুখে সালাম করা। বঙ্গবন্ধু তার মাথার যে স্থানে স্পর্শ  করে আদর করেছেন সেই স্থানে তাঁর কন্যার স্পর্শ নেয়া। জেনিফার এলী বলেন, এতেই পূর্ণতা পাবে আমার জীবন। আর কী চাই।

জেনিফার এলী বলেন, আমি তখন ক্লাশ সিক্সে পড়তাম। ১৯৭২ সালের মে মাস ছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধু রংপুরে ছিলেন। তখন রংপুর এ রকম সাজানো ছিল না। জনবসতি ছিল কম। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য হাজার হাজা মানুষ পায়ে হেঁটে গ্রাম গঞ্জ থেকে রংপুর শহরে এসেছেন। সেদিন স্কুল পালিয়ে আমিও দূর থেকে তাঁর  ভাষণ শুনেছি। পরেরদিন মর্নিং স্কুল ছিল। বঙ্গবন্ধু রংপুর সার্কিট হাউসে ছিলেন। ইচ্ছে ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিজ চোখে দেখার। কয়েকজন বান্ধবীসহ চলে আসি। সার্কিট হাউসে ঢোকার সময় গেটে পুলিশ বাঁধা দেয়। শেষে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম।

 একজন এসে জিজ্ঞেস করল, এই, তোমরা এখানে কী করছ? আমি বললাম, বঙ্গবন্ধুকে দেখতে চাই। এ সময় বারান্দা দিয়ে সাজেদা চৌধুরী হেঁটে আসছিলেন। সাথে আরও ২/৩ জন। তিনি আমাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। আমরা পরিচয় দিয়ে তাকে  বললাম বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যাব। সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘তিনি তো খুব ব্যস্ত। লোকজনের ভিড়। সামনের রুমে উনি আছেন। ঢুকে পড়। তখন রুমে অনেক লোক। রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম বিছানায় কোলবালিশে হেলান দিয়ে পাইপ হাতে বঙ্গবন্ধু কথা বলছেন। আমরা ঢুকেই এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।  হঠাৎ বঙ্গবন্ধু আমাদের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কাকে চাও? আমি বললাম, বঙ্গবন্ধুকে দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধু তখণ মজা করে বললেন, বঙ্গবন্ধু! কে বঙ্গবন্ধু? আমি বললাম আপনিই তো বঙ্গবন্ধু। আমি আপনার অটোগ্রাফ নেব। তিনি  বললেন, ‘অটোগ্রাফ! অটোগ্রাফ কি?’ আমি বললাম, ‘আপনার স্বাক্ষর। আমার কাছে কোনো কাগজ ছিল না। বঙ্গবন্ধু আমার ডান হাতটা টান দিয়ে লিখে দিলেন শেখ মুজিব। আমার খুব আফসোস হয়, ‘একটা কাগজ থাকলে আজও সযত্নে  রেখে দিতে পারতাম বঙ্গবন্ধুর অটোগ্রাফটি। বঙ্গবন্ধুর সেই হাসি, চুরুটের পাইপ, বালিশে হেলান দিয়ে থাকার দৃশ্যগুলো এখনো স্মৃতিতে ভাসে।

পার্টির লোকজন তার সাথে দেখা করবে। ওখান থেকে কে যেন বললেন, ‘তোমরা বাইরে যাও।’ আমরা চলে আসি। বঙ্গবন্ধু ঢাকা চলে যাবেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সার্কিট হাউসের করিডর দিয়ে হেঁটে বের হচ্ছেন। আমি দৌড়ে ইটের খোপ বেয়ে দেয়ালের ওপরে উঠে গেলাম। শ্লোগান দিলাম-‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। ’ ‘আমার নেতা, তোমার নেতা, শেখ মুজিব, শেখ মুজিব। 

বঙ্গবন্ধু করিডরে দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে সবাইকে থামালেন। হাতে থাকা ফুলের তোড়া থেকে একটি ফুল আমাকে দিলেন। আমার মাথায় হাত রেখে আদর করে বললেন, ‘তুই ঘেমে গেছিস তো, এইবার থাম। হয়েছে, হয়েছে। ’ কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেদের বললেন, ‘তোরা তো পারলি না, ওর (এলীর) সঙ্গে তোরা পারলি না।  আমি তখনো পর্যন্ত জানতাম না আমার ছবিটি তোলা হয়েছে। পরদিন ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা ইত্যাদি পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু হাত রেখেছেন ছোট মনি এলীর মাথায় ক্যাপশনে ছাপা হয়েছিল ছবিটি। ঢাকার ৩২ নম্বর জাদুঘরে ছবিটি আজও ঝোলানো আছে। ১৯৭২ সালের ছোট এলী নামের আমি দুই কন্যার জননী। দুই কন্যারই বিয়ে হয়েছে। বীরমুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক স্বামী আলী আশরাফ মৃত্যু বরণ করেছেন। এলী কান্না জড়িত কণ্ঠে আকুতি জানিয়ে বলেন, তার শেষ ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে  ছুঁয়ে দেখা।

লেখক- সাংবাদিক ও কবি

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে