Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন : সাম্প্রদায়িক শক্তির উল্লম্ফন


আগামী নিউজ | এ এন রাশেদা প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৪:০৫ পিএম
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন : সাম্প্রদায়িক শক্তির উল্লম্ফন

ছবি: আগামী নিউজ


ঢাকাঃ ১৯৭১ থেকে ২০২১। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। ৩০ লাখ শহীদ ৩ লাখ মা-বোনের আর্তনাদ এবং বুদ্ধিজীবীদের আত্মদানে আমাদের এই স্বাধীনিতার পঞ্চাশ বছর।


কিন্তু পঞ্চাশ বছর পরও এসে কেন ঐ একই প্রশ্ন? কাদের বিরুদ্ধে এবং কিসের জন্য ছিল এই আত্মদান? আমরা কি ভুলে গেছি আমাদের সেই অঙ্গীকারের কথা, শপথনামার কথা? ১০ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগরের আম্রকাননে যা উচ্ছারিত হয়েছিল। “... যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করিয়াছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজীরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাইতেছে এবং যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্যা এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনা দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হইয়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করিয়া জনগণের সরকার প্রতিষ্টা অসম্ভব করিয়া তুলিয়াছে এবং যেহেতু .......... এবং সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকার বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়াছেন সেই ম্যান্ডেট মোতাবেকই আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের সমবায় গণপরিষদ গঠন করিয়া পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে এবং যেহেতু আমরা বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী ঘোষণা করিতেছি এবং উহা দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করিতেছি, এবং এতদ্বারা...” ইত্যাদি এই ঘোষণাপত্র আজ যত সহজে উল্লেখ করছি সেদিন পাকিস্তান বাহিনী এবং তাদের সহযোগী ধর্মান্ধগোষ্ঠীর দৃষ্টি এড়িয়ে পাশ্ববর্তী দেশের সহায়তা নিয়ে ঘোষণা পাঠ করা অত সহজ কাজ ছিল না। ঠিক আট মাস পাঁচ দিনের মাথায় দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু করাচীর কারাগার থেকে ফিরে আসেন ১০ জানুয়ারি।


যুদ্ধ-বিধ্বস্ত নতুন দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিলেন তিনি, অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেন, খাদ্যে জন্য সারাবিশ্বে আবেদন জানালেন, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট, নৌ ও সমুদ্র বন্দর মাইনমুক্ত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য চাইলেন, স্বাস্থ্য সেবা মানুষের নাগালের আনার চেষ্টা করলেন, শ্রমিক কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন এবং শিল্প ও কৃষির বিকাশের জন্য বিজিএস------ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, পরমাণু শক্তি কমিশনসহ বহুকিছু প্রতিষ্ঠা করলেন।


আদমজি বাওয়ানীর মত, বৃহৎ শিল্পকারখানা রাষ্ট্রয়াত্ত করলেন জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিলেন ও আইসি সম্মেলন, জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিলেন। সোবিয়েত ইউনিয়ন, যুগাশ্নোভাশিয়া, ভারতসহ বহু দেশে শুভেচ্ছা সফরে গেলেন এবং সবার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবার জন্য শিক্ষা কমিশন গঠন করলেন; ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেমনরবর বিজ্ঞানী ও কুদরাত এ খুদা কে প্রধান করে কমিশন দ্রæততার সাথে ১৯৭৩ সালে ৮ জুন অন্তবর্তীকালীন রিপোর্টও পেশ করেন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী। এবং রিপোর্ট গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। যা কমিশন তাদের রিপোর্টের ভ‚মিকায় উল্লেখ করেছেন। জানা যায় তৎকালীন আমলাতন্ত্র বঙ্গবন্ধু বুঝিয়েছিলন এই শিক্ষানীতি বাসত্বায়ন করতে গেলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে বা অন্য কোনো খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া যাবে না।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে বলতে শোনা গেছে ‘আমি লাল ফিতার দৌরাত্ম কমাবো’। যা হোক শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়নের কোনো দিক নির্দেশনা তিনি দেননি। এরপর দুই বছর দুই মাস তিনি বেঁচে ছিলেন। শিক্ষা কমিমন বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনা বা পরবর্তী পদক্ষেপ না নিলেও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করলেন, পাকিস্তানি শাসনামলেও যা ছিল না। এ পর্যায়ে তিনি কাকরাইলের বৃহৎ মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি এবং টঙ্গিতে তুরাগ নদীর পাড়ে বিশাল এলাকা দান করলেন ওয়াদ মাহফিল আয়োজনের জন্য।

এখন সেখানে দুই গ্রæপের মারামারিও সংগঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। অথচ সারা বাংলাদেশে গ্রামে গ্রামে যে যাত্রাপালা, গান, কবিগান, ভাটিয়ালি, বাউল, ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের রাতভর আসর বসত এবং গ্রামের রিদ্র জনগোষ্ঠী সেইসব অনুষ।ঠান উপভোগ করত, সেইসব সংগঠনকে এক খন্ড জমিও বরাদ্দ দিলেন না। তাহলে বাঙালি সংস্কৃতি আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেত যদিও বাঙালি সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ছিল কিন্তু চর্চা চলত আরও বিকাশের জন্য। বাউল সাধকদের মরমী গানুষকে মানবিক করত। প্রকৃতি প্রেমিক করে গড়ে তুলত।

তার জায়গায় আজ আমরা দেখছি বাউল শিল্পীদের মার ধরে করে দাঁড়ি কেটে দেয়া হচ্ছে, গান গাওয়ার বা লেখার ‘অপরাধে’ জেলে পোরা হচ্ছে নতুন নতুন আইন কলে। আজ ------------------- আওয়ামী লীগ সরকারই তা করছে। আর জোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোতে কোনো মাঝিকে গান গাইতে গাইতে নৌকা বাইতে দেখা যায় না। গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে সে জায়গা দখল করেছে হত্যা, ছিনতাই, রাহাজানি আরও কত ---------। কার মধ্যে গান গাইতে। প্রবীন সাংবাদিক আবুল মোমেন ‘বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা’ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যুগে যুগে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার কিভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন, “মওলানা বখশের নেতৃত্বাধীন মাদ্রাসা শিক্ষা কমিটি ১৯৩৮ সনে কাজ শুরু করে এবং ১৯৪১ সনে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ঐ কমিটিতে ভিন্নমত প্রকাশ করে মৌ. মোজাম্মেল হক বলেছিলেন যে, গত একশ বছর ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার প্রচেষ্টা চলছে কিন্তু বিশেষ ফল পাওয়া যায়নি। তাঁর মতে এখনও পর্যন্ত বাদশাহ আলমগীরের সময়কার পাঠ্যক্রম চলছে। তিনি সেক্যুলার ও মাদ্রাসা শিক্ষা হাত ধরাধরি করে চলা উচিত বলে মনে করেন। বরাবর রক্ষণশীল পক্ষ এসব সংস্কার ও আধুনিকায়নের বিরোধিতা করেছে। ১৯৪৭ সনে সৈয়দ মোয়াজ্জাম উদ্দিন হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত মাদ্রাসা সিলেবাস কমিটিতেও সেক্যুলার বিষয় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। এভাবে দেখা যায় ইংরেজ আমলে নিউ স্কিম পদ্ধতিতে যেটুকু সংস্কার হয় তারপর বস্তুত মাঝে মাঝে মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যম আরবি বা উর্দু করার প্রয়াস, সেক্যুলার বিষয়ের পরিবর্তে ইসলামী বিষয়ে পাঠ সীমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগে এই শিক্ষা বারংবার চরম বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলার শিকার হয়েছে। তাইতো প্রশ্নÑ বঙ্গবন্ধু এত খোঁজ খবর রাখতেন, সেই ’৪৮ সাল থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তিনি কিনা পাকিস্তানের কারাগার থেকে এসে ১৯৭২ সনে মাদ্রাসা শিক্ষা ধারাকে নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠনের ঘোষণা দিলেন।

‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ বলে; তিনি মনে করতেন তাই। একইভাবে একই সুরে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা, বলে চললেন ইসলাম শান্তির ধর্ম, শান্তির ধর্ম সাধারণ শিক্ষা ধারাকে চরমভাবে অবমূল্যায়ন করে, নানাভাবে অপমাণিত করে তিনি মাদ্রাসা ধারাকে বেগবান করে চললেন এবং এখনও করছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কালের কণ্ঠ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে “গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ বাজেটে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছেÑ এক হাজার ১৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। “মাদ্রাসায় রেকর্ড বরাদ্দ” শিরেনামে একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। সেখানে রয়েছে, সারাদেশে এক হাজার ৬৮১টি মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৪) বাস্তবায়ন ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে নির্বাচিত মাদ্রাসা গুলির জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশে মাদ্রাসার উন্নয়নে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন প্রকল্পসহ ১৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বঅহী কমিটি (একনেক)। এগলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মাদ্রাসা উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। এর পুরোটি সরকার দেবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।

জানা গেছে, আইসিটিসহ সব ধরনের আধুনিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে এসব নতুন ভবনে। কম্পিউটার ল্যাবও থাকবে। এনর পরও শিক্ষার্থীদের চাহিদার উপর নির্ভর করবে ভবনের আকার-আয়োতন প্রাথমিকভাবে প্রতি এমপি প্রায় ছয়টি করে মাদ্রাসার বরাদ্দ পাবেন। (সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। পাঠক এখানেই শেষ না। আরও আছে। ধৈর্য ধরে পাঠ করুন। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে। কালের কণ্ঠ বলছে, “সরকার ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্থাৎ যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, সেসব এলাকার প্রতি উপজেলায় দু’টি করে মোট এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলাতে মাদ্রাসা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আইসিটি ও বিজ্ঞান বিষয়। মাদ্রাসায় আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু কামিলকে মাস্টার্সের সমমান মর্যাদা প্রদান, যুগোপযোগী নতুন কারিকুলাম প্রদানের মাধ্যমে ইসলাম শিক্ষায় শিক্ষিত প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর।”

অথচ সাধারণ শিক্ষাধারা কতোভাবেই উপেক্ষিত। স্কুল পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হাজারো সমস্যা। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই শিক্ষক সমস্যা, ক্লাসরুম সমস্যা, লাইব্রেরি সমস্যা, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি পরিচালনার সমস্যা, শিক্ষকের বেতন ভাতা সমস্যা, সম্মানজনকভাবে বসবাসের সমস্যা, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সমস্যা, প্রতিষ্ঠান অডিটকারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা দাবির কারণে অডিট সমস্যা, এমপিওভুক্তির বেলায়ও তাই ইত্যাদি সেকারণে গত ২৪ মার্চ একজন শিক্ষার্থীর তাৎক্ষণিক জবাব তুলে ধরছি। আমার প্রশ্নের উত্তরে সে জানাল সে কুমিল্লার হোমনা থানায় ‘রামকৃষ্ণপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ এ পড়াশুনা করে ইন্টার মিডিয়েটে অটোপ্রমোশনে দ্বিতীয় বর্ষে; ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬৫ জন কলা বিভাগে, বিজ্ঞানে খুবই কম ২৫ বা ২৬ জন কমার্সে সামান্য একটু বেশি।

শিক্ষক স্বল্পতাসহ কোনো সুবিদাই নেই। আর কিছুদিন পূর্বে কালের কণ্ঠের একটি শিরোনাম মনে পড়ছেÑ “শিক্ষক সংকটে, জটে শিক্ষার্থীরা” ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাবে ঠিকমত ক্লাস হয় না ...‘ ইত্যাদি। তাই আসার বক্তব্য গদবাধা নয় এবার একটু ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা থাক। “মসজিদÑ মাদ্রাসার উন্নয়নে রেকর্ড” শীর্ষক ঐ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছেÑ “ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৬০ হাজার ৬৪৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠার সংগঠন, দুস্থ ব্যক্তির মধ্যে মোট ৯১ কোটি ৭৫ লাখ, ১৪ হাজার ৩০০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আট হাজার ৭০০ ধর্মীয় নেতাকে নৈতিকতাসহ আর্থ-সামাজিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ পদ্রান করা হয়েছে। মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের আতায় ২৬ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমৈ ৪৬ লাখ ৮০ হাজার শিশুকে প্রাক প্রাথমিক ও নৈতিকতার শিক্ষা, ১৭ হাজার ৪০০টি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ৩১ লাখ ২৯ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীকে পবিত্র কোরআন শিক্ষা এবং ৭৬৮টি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে এক লাখ ৬৯ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে সাক্ষরতা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।

ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে ২২ হাজার ৬৪৭ জন ইমামকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার ৭৫৬ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চার হাজার নতুন মমজিদ পাঠাগার স্থাপন এবং দুই হাজার ৫০০ মসজিদ পাঠাগারে পুস্তক সংযোজন করা হয়েছে।” জনকণ্ঠ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে এবং কালের কণ্ঠ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে তাদের রিপোর্টে মসজিদ-মাদ্রাসার এই উন্নয়নকে রেকর্ড উন্নয়ন বলছে। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক লাখের বেশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আছে।

এটিকে সাম্প্রদায়িক সংগঠনসমূহ তাদের শক্তির মূল হিসেবে বিবেচনা করে নারকীয় তান্ডব চালাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামের হাটহাজারি এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে তারা তান্ডব চালিয়েছে এবং আরো যেসব জায়গায় হয়েছে তা সবাই জানেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসাসমূহের দাওয়ারে হাদিস (তাফসিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমমান মর্যাদা দান করেছেন। সেই আইন অনুযায়ী বিদ্যমান ছয়টি কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের সমন্বয়ে একটি কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হবে। ‘আল হাইয়াতুল উলাইয়াতুল লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামের কমিটিই এই বোর্ড হিসেবে কাজ করবে। এর কার্যালয় হবে ঢাকায়।

‘কওমির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে তাহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণের মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় ওলামায়ে-কেরামের মাধ্যমৈ প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হুলাম ওজির শিক্ষাকেন্দ্র”। বঙ্গবন্ধু করেছিলেন ‘মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড’।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষাধারা অবজ্ঞা এবং শিক্ষকদের অধিকার বঞ্চিত করে মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় যেভাবে বিনিযোগ করছেন তার ফল বর্তমান হেফাজত ও জামাতের কার্যকলঅপে দেশবাসী পেতে শুরু করেছে। এতদিন ধরে মাদ্রাসা শিক্ষিকদের এক এক রূপ দেশবাসী দেখেছে মেয়েদের ফুটবল খেলার বিরুদ্ধে, বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় মেয়েদের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তাদের ফতোয়াবাজী, দোড়রা মারা সর্বজন বিদিত। এছাড়া, তাদের আছে রাজনৈতিক ---------------।

ধর্ম ও রাজনীতির সংমিশ্রণ দেশের মানুষকে বিভক্ত করে কীভাবে বিকাশের পথ রুদ্ধ করে তার পরিচয় পাকিস্তানের ২৫ বছর ধরে এবং সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানি মিলিটারির সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, খুন নারী নির্যাতন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার বিভৎসতা দেশবাসী চরম মূল্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছে। আর তাই সেইসব অভিজ্ঞতা থেকেই ১৯৭২ সালে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা তা গৃহিত হয়েছিল মূল রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবেই এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না-কারার নীতিও গৃহিত হয়েছিল সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বলে। ওই অনুচ্ছেদে আরও বলঅ হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার এবং কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ করা হবে। আবার ৩৮ অনুচ্ছেদেÑ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুযায়ী ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক সমিতি বা সংঘ গঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেখানেই তো প্রশ্ন ‘হেফাজতে ইসলাম’ সংবিধানসম্মত সংগঠন হয় কি করে এবং তারা দফায় দফায় মেন তান্ডবই চালায় কি করে?Ñ বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেই তো এই প্রশ্ন করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদের মাথায় যতই হাত বুলাক, টেস্ট বুক বোর্ডের তৈরি ৩৬ কোটি বই মাটির নীচে পুতে রাখুক, কওমির দাওরায়ে হাদিস-কে মাস্টাস মর্যাদা, হেফাজত ইসলামকে করোনাকালে ১০ কোটি টাকা প্রদানসহ যত সুযোগ সুবিদাই দিক, ন্যায়তো বা অন্যায়গতভাবে কিন্তু এইসব দল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি কোনো দিক নিদের্শনাই পাচ্ছেন না  তাঁর দেয়া মাস্টার্স ডিগ্রির মর্যাদাপ্রাপ্তরা কি ধরনের ‘সুললিত” ভাষা ব্যবহার করছেন ভিডিও’র মাধ্যমে সর্বত্র প্রচার করে? সেই ব্যক্তির নাম মোয়াজ্জাম হোসেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁন স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠান ভস্মিভ‚ত করায়মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার কোন্ ডিগ্রি দেবেন পিএইচডি.? বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কদর্য ভাষা ব্যবহার করে সমস্ত সরকারি অফিস পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। সেই মোয়াজ্জেম হোসেন তারা মিয়া নিজেকে আলেম ওলামায়ে দাবি করে অসাধারণ সব বিশেষণে নিজেদের বিশেষায়িত করে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সরকার পতনের যে ডাক দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এবার তারা মিয়ার পদক কি হতে পারে? দেশবাসী বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তা অবলোকন করতে থাকুন। শুকু এইটুকু বলতে পারি সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। মোকাবিলা করতে হবে। কারণ দেশটা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রগতিশীল দল ও ব্যক্তিদেরও। শুধু আওয়ামী লীগ হেফাজত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের না।

লেখকঃ শিক্ষাবীদ ও প্রাবন্ধিক

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে