Dr. Neem on Daraz
Victory Day

মহাসড়কে কোথায় নেই জরুরী যোগাযোগ ব্যবস্থা


আগামী নিউজ | জেহিন আহমেদ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০, ১২:০১ পিএম
মহাসড়কে কোথায় নেই জরুরী যোগাযোগ ব্যবস্থা

ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ  প্রতিদিন সকালে পত্রিকার পাতা উল্টোলেই প্রধান শিরোনাম মহাসড়কে দুর্ঘটনা, মর্মান্তিক মৃত্যু, কেউ স্বামী হারানো, কেই বাবা, আবার কেউ হারানো সন্তান কিংবা স্বজন। প্রত্যহ বাড়ছে মৃত্যুর হার। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সড়ক পথের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়েছে। বর্তমান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সড়ক পথের উন্নয়নের উন্নত চুড়ায় নিয়ে এসেছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে নতুন নতুন সড়ক মহাসড়ক, দুই লেন থেকে চার লেন কিংবা চার লেনের সড়ক ৬ লেনে উন্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত এই সরকারের সড়কের ব্যপক উন্নয়নের মধ্যেও এ পথে এত দুর্ঘটনা মানুষকে চিন্তায় ফেলেছে। 

সর্বদিক যদি বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে যে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নয়। নানাধিক কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমি এখানে সড়ক দুর্ঘটনার কিছু কারণ তুলে ধরছি।

১. প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালানো এবং ওভারটেকিং দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী। ২. ক্রটিপূর্ণ যানবাহন সড়কে, মহাসড়কে উল্টোপথ গাড়ী চালানো যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ৩. চালকদের অসাবধানতা, অদক্ষতা ও লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক। ৪. যানবাহনে ব্যবহৃত তেলে ভেজাল। ৫. রাস্তার স্বল্পতা ও অপ্রশস্ততা এবং রাস্তার অবৈধ অংশ দখল হয়ে যাওয়া। ৬. রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা। ৭. বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করে যখন-তখন যেখানে সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ৮. সড়ক পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত এক ধরণের কর্মচারীদের দুর্নীতি। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ছোটখাট আরও নানাবিধ কারণ রয়েছে। যা নিত্য জনসাধারণের চোখে পড়ে। ৯. রিক্সা ও ভ্যানের সংখ্যাধিক্য। যা মহানগরের ভয়াবহ যানজটের মূল কারণ। ১০. প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশের অভাব ও ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করা এবং অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। ১১. ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ ও ক্ষেত্রবিশেষে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অদক্ষ রিক্সাচালকদের রিক্সা ও ভ্যান চালনা। ১২. ট্রাফিক-পুলিশের সংখ্যা স্বল্পতা ও দায়িত্বহীনতা এবং সামান্য উৎকোচের বিনিময়ে অবৈধ চলাচলের ব্যবস্থা। ১৩. সড়কের উপর অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা। ১৪. অতিরিক্ত মাল ও যাত্রী বোঝাই, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পথ অবরোধ, পথ-সভা, হরতাল প্রভৃতি কারণে যানজট সৃষ্টির ফলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ১৫. ওভারব্রিজের স্বল্পতা, অসাবধানে রাস্তা পারাপার বা রাস্তা পারাপারের নিয়ম মেনে না চলা। 
 
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র তা সত্যি ভয়াবহ এবং দুঃখ জনক। দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ছিনিয়ে নিচ্ছে মানুষের অমূল্য জীবন। ভেঙে দিচ্ছে অসংখ্য সাজানো সংসার। স্বজন হারা মানুষের আহাজারি, পিতৃহারা সন্তানের আকুতি সত্যি হৃদয় বিদারক। 

বিশ্বে সড়ক মহাসড়কের দিকে তাকালে দেখা যায় মহাসড়কের নির্দিষ্ট দূরত্বে টেলিফোন বুথ। জরুরি যোগাযোগে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে। সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে হাসপাতাল, থানা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ অতিব জরুরী। কিন্তু আমাদের দেশে মহাসড়কে কোথায় নেই কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা। যদিও সরকার জরুরী পরিসেবা হিসেবে ‘৯৯৯’ এর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মহাসড়কের আশে পাশে বসবাসরত কিংবা সড়কে চলাচলকারী সকলের তো মোবাইল ফোন নাও থাকতে পারে। যদি জরুরী প্রয়োজনে টেলিফোন বুথের ব্যবস্থা থাকত তাহলে অবশ্যই দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে এর ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হত। হয়ত দুর্ঘটনায় আহত কাউকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান গেলে তার জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হতো। 

সড়ক দুর্ঘটনা হয় না এমন দেশ নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায় সেটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভাল যান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক, সড়ক ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী করার বিষয়গুলো তো রয়েছেই। এর সঙ্গে দুর্ঘটনায় পতিতদের ত্বরিত চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় আইনি জটিলতার কারণে আহতদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয়। এ সমস্যাটি সমাধানেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। অন্যথায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতেই থাকবে। হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা যেমন জরুরি, তেমনি সড়ক-মহাসড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে দিতে হবে। সবার আগে চালকদের নিয়ে ভাবা দরকার। লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে কোনোভাবেই কোনো গাড়ি তুলে দেওয়া যাবে না। যানবাহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি।

 

আগামীনিউজ/জেহিন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে