Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যা করছেন তা বিশ্বে বিরল


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২০, ০৯:১৪ পিএম
করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যা করছেন তা বিশ্বে বিরল

ছবি সংগৃহীত

বিশ্বের উন্নতদেশগুলো আজ যেখানে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা, কর্মপরিকল্পনা এবং দিকনির্দেশনাই এ অবস্থায় রয়েছে  বাংলাদেশ।

১. বিশ্বের কোনো প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন দেশ ও দেশের মানুষের সকল বিষয়ের খবরা খবর রাখছেন, তা বিশ্বে নজিরবিহীন এবং  প্রশংসার দাবিদার। 

২. করোনার বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে  পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করণ- করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁকে ও বাংলাদেশের জনগণকে পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আমরা কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কিভাবে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা। 

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেন শেখ হাসিনার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি  ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কোনো ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বাতিল না  করা নিয়ে আলোচনা। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, তাঁর দেশ তৈরি পোশাক সম্পর্কিত বাংলাদেশের কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করবে না।  এবিষয়ে প্রতিশ্রুতি আদায়। 

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
 
৩. স্বাস্থ্য  অধিদফতরের সঙ্গে  সার্বক্ষনিক যোগাযোগ  রক্ষাসহ করোনা যুদ্ধের যারা সামনের সারিতে যুদ্ধ করছেন তাদের নানা প্রণোদনা- করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং দেশের অন্যান্য কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গ্রেডভেদে ক্ষতিপূরণ উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ১ম-৯ম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা। মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাঁচ লাখ আর মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ২০১৫ এর বেতনস্কেল অনুযায়ী এ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। 
 
৪. ব্যবসা বাণিজ্যে  নানা প্রণোদনা- করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে বাংলাদেশ সরকার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তারমধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বড়-ছোট শিল্পকারখানা, ও সেবাখাতসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে। দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য।  

প্যাকেজ-১: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-২: ক্ষুদ্র (কুটিরশিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণসুবিধা প্রণয়ন করা হবে। এ ঋণসুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

৫, কৃষকদের প্রণোদনা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ও কৃষকদের  জন্য ৫ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এই তহবিল থেকে গ্রামাঞ্চলে যাঁরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি, তাঁদের দেওয়া হবে। যাঁরা পোলট্রি, কৃষি ফার্ম, ফলমূল, মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন করবেন, তাঁরা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন, যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং সরবরাহ হয়।

কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিকাজ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে বোরো ধান উঠবে। আর কৃষক যেন এই ফসলের ন্যায্য দাম পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গতবারের চেয়ে বেশি এবার ধান চাল ক্রয় করবে। দুই লাখ মেট্রিক টন বেশি ক্রয় করছে। এছাড়াএ সারর ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা, বীজের জন্য ১৫০ কোটি টাকা এবং কৃষকদের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

৬, সমাজের অস্বচ্ছল মানুষকে সহায়তা- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আস্বচ্ছল, বেকার, সুবিধা বঞ্চিত  সাধারণ মানুষের  পাশে দ্বাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ,  স্থানীয়  জনপ্রতিনিধি, সংসদসদস্যরা। তারা নিজ নিজ এলকার মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন।  এছাড়াও ৫ মাস ১০ টাকা করে ৫০ লাখ মানুষকে সরকারিভাবে তালিকা করে প্রত্যেকের আলাদাভাবে কার্ডের মাধ্যমে চাল দেয়া হচ্ছে।

সরকার প্রধান এসময়ে যারা মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে অহেতুক সমালোচনা করছেন, তাদের হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বলেন, অনেক দল, অনেক সুধী সমাজ মানুষের পাশে এগিয়ে আসছেন না। তারা সমালোচনা করতেই ব্যস্ত। তারা কিন্তু একটি মানুষকে একটি পয়সা দিয়েও সহযোগিতা করছে না। এত কথা না বলে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সে হিসাবটা দেন মানুষকে।

অসহায়দের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতিতে অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

৭,  গার্মেন্টস শিল্প খুলে দেয়া- বিদেশি বায়ারদের অর্ডার বিবেচনায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে উৎপাদন শুরুর জন্য অনুমতি দেয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য অঞ্চলেও কারখানা খোলা হবে। গ্রামে থাকা শ্রমিকদের শহরে না আনতে ও তাদের ছাঁটাই না করতে মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার যাতে হাতছাড়া না হয়, সেজন্য সব কারখানা খুলতে হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার থাকে। এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই এই চার মাসের অর্ডার থাকার কথা ১২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলার বাতিল হয়েছে। বাকি ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাঁচানোর লক্ষ্যেই ৮৬৫ টি কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে।

 ৮. করোনা সহায়ক কিট ও ওযুধ উৎপাদনের অনুমোদন- করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে। এছাড়াও করোনাভাইরাস চিকিৎসায় বেশ কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ‘রেমডেসিভির’ উৎপাদনে ছয়( বেক্সিমকো, বিকন, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার এবং হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস) ওষুধ কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত ওযুধ বাজারজাত করতে শুরু করেছে।

৯, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা- মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা প্রকোপ শুরুর পর যাতে অসাধু ব্যবসাীরা দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত দাম নিতে না পারে, পাশাপাশি সংকট তৈরিকরতে না পারে এ জন্য জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায়, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর,  বিএসটিআই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছে। ফলে করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে পারেনি। 

১০. করোনার মধ্যেও দেশের কর্মহীন ও দুঃস্থ মানুষকে ঈদ উপহার- করোনায় দেশজুড়ে কার্যত লকডাউন চলায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে নিম্নআয়ের মানুষরা খাদ্য ও অর্থসংকটে পড়েছেন ভীষণ বিপাকে। এসব অসহায় এবং হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন।  এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রতিজেলার পাঁচজন সুবিধাভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে অর্থসহায়তা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও দেশের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, প্রায় ৭ হাজার কওমি মাদ্রাসা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের পুরোহিতরাও শিগগিরই সরকারের এ নগদ সহায়তা পাবেন। 
 


আগামী নিউজ/তরিকুল/নাঈম

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে