Dr. Neem on Daraz
Victory Day

জনৈক সঞ্চালক মহোদয়!


আগামী নিউজ | ইখতেখারুল ইসলাম প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২০, ০৩:০৫ এএম
জনৈক সঞ্চালক মহোদয়!

ঢাকা: অসুস্থ মানুষকে মুমূর্ষু অবস্থায় এনে সেবা দান না করা আর ক্ষুধার্ত মানুষকে প্রয়োজনের সময় সাহায্য না করে অপেক্ষমান রাখা প্রায় একই বিষয়! মাথায় রাখতে হবে সকল সুবিধাবঞ্চিতদের পরিপূর্ণ হিসেব রাখার মত পরিস্থিতি আমাদের কখনোই তৈরি হয়নি! এই মহানগরীতেই বিচ্ছিন্নভাবে দিনে আনি দিনে খাই লোকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়! পুলিশের সদস্যরা তাই বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিজেদের সর্বাত্মক সহায়তা করার চেষ্টাটুকু করে যাচ্ছেন! 

অন্যদিকে জনৈক সঞ্চালক মহোদয় তাঁর এক অনুষ্ঠানে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মানুষদের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের নিয়ম তৈরি করে, অত্যন্ত পারঙ্গমতার সাথে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন পুলিশের এই অবদান নিয়ে!

আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ যখন নিজেদের বড় বড় বাহন ব্যবহার করে রাস্তার জীবাণু মারার ব্যবস্থা করছেন, তখন তো জনাব আপনাকে বলতে শুনছিনা যে, পুলিশ তাঁর পরিধির বাইরে যেয়ে কেন কাজ করছেন? 

করোনা আক্রান্ত মানুষকে কবরস্থ করার কাজে পুলিশ যখন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখন তো মহোদয় আপনি নিশ্চুপ হয়ে যান!

মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে পুলিশ তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী যখন পৌঁছে দিচ্ছেন তখনও জনাব আপনার মুখে খই একদমই ফুটে না! 

স্বামীহারা মহিলা, ক্ষুধার তাড়নায় যখন সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেয় এবং তার প্রেক্ষিতে থানার কর্মকর্তা যেয়ে তাঁর পুরো পরিবারের জন্য একটু ব্যবস্থা করে দিয়ে আসেন তখনও আপনি সঞ্চালক মহোদয়ের মুখে কোনো কথা ফুটে না!  

অনেকেই নিজের ওখানে রান্না করে খেতে পারছে না, তাই তাঁদের জন্য পুলিশ রান্না করা খাবার বিতরণ করে তাঁদের দুই, এক বেলার ক্ষুধা মেটাচ্ছেন! আপনার সুশীলতার জায়গা থেকে তখনও একটি বার কোনো শব্দ উচ্চারিত হয় না! 

আপনার মাইক বেজে উঠে কখোন, যখন একটি বিশাল বাহিনী মানবতা ও সামাজিকতাকে মাথায় রেখে নিজ পেশার পরিধির বাইরে যেয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে থাকে! সমস্যাটি আসলে কোথায় আপনার?

মনে রাখবেন, আপনি যে বাছাবাছির প্রক্রিয়া বলছেন তাঁর বাইরেও অনেকে থেকে যান, যাদের কারো কাছে যাওয়ার থাকেনা, চাওয়ার থাকেনা! পুলিশের সদস্যরা তাঁদের জায়গা থেকে সেই প্রতিটি মানুষকে তাৎক্ষণিক সেবা আমি রিপিট করছি 'তাৎক্ষণিক সেবা' পৌঁছে দিচ্ছেন! যেটি এই সময়ে অতীব জরুরি! একদিন না খেয়ে থাকলে বুঝা যায় ক্ষুধার জ্বালা কাকে বলে! আমরা বুঝিনা কারণ সেই পরিস্থিতিতে আমরা পড়িনা!

সারাজীবন দেখলাম মানুষ কিছু না করলে কথা শুনে, আর এখানে আপনি মহোদয় মাইক ফাটাচ্ছেন পুলিশ কেন মানুষের জন্য করছে? কেন মানুষকে খাওয়াচ্ছে? 
কেন ভাই এত গাত্রদাহ কেন? 

আপনার মাইকের জোরালো শব্দের চেয়ে, ক্ষুধার্তের না বলা কথার শব্দ অনেক বেশি শক্তিশালী আমাদের কাছে ! তাই আপনার অসংবেদনশীল বাণী আমাদের সর্বাধিকের কাছেই পৌঁছায় না! একজন পুলিশ সদস্য নয়, ধরুন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই আপনার ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া এটি।

দেশের এই প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ তাঁর সর্বোচ্চ জনবলের সাহায্যে যতটা এগিয়ে আসতে পারবে, এরকম সিনক্রোনাইজড সেবা চাইলেই সকলের পক্ষে এই মুহূর্তে দেয়া সম্ভব নয়! জনবল একটি বিশাল বিষয়, মাথায় রাখুন! 

আপনার মত উন্নত শ্রেণিভুক্ত হয়ে নয় বরং আপনার প্রিয় সহকর্মীগণ যারা মাঠে, ময়দানের তথ্য সরবরাহ করেন, তাঁদের মত মাঠে, ময়দানে কাজ করা লোক আমরা! তাই মাঠের চিত্র আপনার চেয়ে এট লিস্ট বেশিই বুঝি!  

দয়া করে বিশ্বের এবং আমাদের দেশের এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী বানাবেন না, আমরা রাস্ট্রের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে যতটুকু কাজ করছি সেটিকে সাধুবাদ দিতে না পারেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের মনোবলটুকু ভেঙে দেবেন না দয়া করে! ধন্যবাদ প্রাপ্তি তো আশাই করছি না! অথচ প্রত্যাশা না করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কমান্ড্যান্ট মিঃ মাইক পার্কার এই সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন! না সেটি আপনার কাছে মোটেও প্রত্যাশা করছি না! পুলিশের ভাল কাজের 'সংবাদ মূল্য' কম সেটি বুঝি!

তবে সঞ্চালনা যেন শুধু পুলিশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারকা হতে পারি এরকম মাধ্যম না হয়! সর্বসাধারণের বিষয়ক আলোচনায় সঞ্চালনা যেন গণমানুষের কথাই ফুটিয়ে তুলে- সেটিই প্রত্যাশা!

( নীচের ছবিগুলোর মত বার্তা প্রতিনিয়ত আমাদের পুলিশ সদস্যদের কাছে আসছে! তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া কি অপরাধ জনাব?)

লেখক: অতিরিক্ত উপ কমিশনা,  ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।     


আগামী নিউজ/সুমন/নাঈম
 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে