Dr. Neem on Daraz
Victory Day

কৃষক বাবার স্বপ্ন পূরণ, বিশ্বমঞ্চে নীলফামারীর মারুফা


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক, নীলফামারী প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৬:১৭ পিএম
কৃষক বাবার স্বপ্ন পূরণ, বিশ্বমঞ্চে নীলফামারীর মারুফা

এক সময় বাবার সঙ্গে জমিতে টেনেছেন মই। বর্গাচাষি বাবাকে সহায়তা করেছেন কৃষিকাজে। সেই মারুফা আক্তারের ঠাঁই হয়েছে নারী টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। স্বপ্ন দেখছেন বিশ্বকাপ খেলার। নীলফামারীর সদর উপজেলার সংগলশী ঢেলাপীরের প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা। এই পর্যায়ে আসার পেছনে তার রয়েছে এক সংগ্রামী জীবনের গল্প। 

ছোটবেলা থেকেই খেলার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল মারুফার। শুরুতে তার খেলার দিকের এই ঝোঁককে গ্রামের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। তবে বাবার স্বপ্ন পূরণে গাঁয়ের লোকের কথা কানে না তুলে এগিয়ে গেছেন অদম্য সাহস নিয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপে গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার সিক্সে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর সেমির আশাও জাগায়, যদিও সেই পর্যায়ে যাওয়া হয়নি। তবে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে চমক দেওয়া দলটির মেয়েরা প্রশংসা পাচ্ছে দেশে-বিদেশে। নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এ দলটির অন্যতম সদস্য পেসার মারুফা আকতার। বল হাতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন প্রতিটি জয়ে। তার সতীর্থ স্বর্ণা, দিশা, দিলারাও খেলেছেন দারুণ।  

marufa

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও আছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তার তিন সতীর্থর সঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন নারী টি-টোয়েন্টির জাতীয় স্কোয়াডে।

বর্গাচাষি বাবা আর গৃহিনী মায়ের সংসারে মারুফারা চার ভাই-বোন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভালো ফুটবল খেললেও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন ক্রিকেট। সেই থেকে ভালো লাগা। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিকেএসপিতে, খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন অনেক আগেই।

২০২১ সালে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আইমুল্লাহর সঙ্গে বর্গা নেওয়া জমিতে হালচাষ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা। অভাব-অনটনের সংসারে দুই বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যেখানে সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল মারুফার।  

তাই করোনার সময়ে পারিবারিক দুরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। তবে এগিয়ে আসেন বিসিবি। মারুফা ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৮ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে।

এবার নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের এই দলে জায়গা করে নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মারুফা।

marufa

দারিদ্র্য আর অভাব—মারুফা আকতার তার ছোট্ট জীবনে, এই শব্দগুলোর সঙ্গে বেশি পরিচিত। তবে মানুষ যে স্বপ্নের সমান বড়। তাই তো শত সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে মারুফা নিজের স্বপ্নকে তাড়া করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।

মারুফা আকতারের উৎসাহদাতা ও ক্রিকেট গুরু দুটোই বড় ভাই আলামিন। তার হাত ধরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন তিনি। খেলতেন চাচাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে। মারুফার পেস বোলিং মোকাবিলায় হিমশিম খেত ছেলেরাও।

একসময় মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন আর এখন সেই মেয়েকে নিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন মারুফার বাবা-মা। তাদের প্রত্যাশা ব্যাট-বল দিয়ে নিজ গ্রামকে বিশ্বমঞ্চে চেনাবেন মারুফা।

মারুফার বাবা আইমুল্লাহ বলেন, নিজের কোনো জমি কিংবা বসতভিটা নেই। শ্বশুরের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গাচাষ ও দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। বিশ্বকাপে মেয়ে ভালো কিছু করবে, এই বিশ্বাস রয়েছে। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েটা বড় হয়েছে। আশা করি সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। গ্রামবাসীর জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারবে।

মারুফা বলেন, অভাব-অনটনের কারণে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ এতদূর আসতে পেরেছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময়ই থমকে যেত স্বপ্ন। ছোট বেলা থেকে কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরো সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সাথে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করেছি। সবাই দোয়া করবেন দেশকে যেন ভালো কিছু দিতে পারি।

নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন বলেন, মারুফা আক্তার আমাদের গর্ব। বিশ্ব দরবারে মারুফা বাংলাদেশকে তুলে ধরবে তার নৈপুণ্যে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়েটি অল্প সময়ে ক্রিকেটজগতে তোলপাড় করায় আমরা অভিভূত।

এসএস

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে