Dr. Neem on Daraz
Victory Day

অর্থনীতির চাকা শ্লথ


আগামী নিউজ | মাহমুদা ডলি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২০, ০১:৫৯ পিএম
অর্থনীতির চাকা শ্লথ


সরকারের মেয়াদের গত এক বছরে রেমিট্যান্স আয় ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নেতিবাচক প্রবণতা। অর্থনীতির অন্তত ১৩টি সূচক এখন নিম্নমুখী। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি আসেনি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে রাজস্ব আয়ে।

তবে সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পূর্বশর্ত টেকসই অর্থনীতি। এটি নিশ্চিতে দরকার বিনিয়োগ বাড়ানো, কর্মসংস্থান তৈরি, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। এজন্য  যথাযথভাবে মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন এবং শক্ত হাতে দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। একই সঙ্গে তারা ক্রোনি ক্যাপিটাজম ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে সম্পদের সুষম বণ্টনের ওপর  জোর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রত্যয়ে, আগের দশ বছরের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থনীতির প্রাণসঞ্চার করা সূচকগুলোর মধ্যে প্রধান সূচকগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। রাজস্ব ও রফতানি আয় কমেছে; কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।
ভেঙে পড়ার অবস্থায় আমদানি বাণিজ্য, কমে গেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, পুঁজিবাজারের বেহাল দশা; ঋণ পাচ্ছে না বেসরকারি খাত। চাপে পড়েছে ব্যাংক খাত, বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস, সংকুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থান। মানুষের আয় না বাড়লেও মূল্যস্ফীতি তথা জিনিসপত্রের মূল্য বেড়েছে।
বিপরীতে বেড়েছে সরকারের ব্যাংক ঋণ, বেড়ে গেছে ব্যাংক ঋণের সুদ হার, বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। বাড়ছে ঋণ পুনঃতফসিলের ঘটনা। ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, সরকারি বেসিক ব্যাংক তার কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারছে না।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ আগামী নিউজ ডটকমকে বলেন , ‌‘রাষ্ট্রীয়ভাবে পোষিত পুঁজিবাদের কারণেই আজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী। সরকারের কাছের আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের দ্বারা পুঁজিবাদী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। দেখুন বাংলাদেশে আমরা প্রায়ই বলে থাকি যে এ দেশে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। আর এজন্যই পুঁজিবাদের শাসনক্ষমতার জন্য আজকের আর্থিক নৈরাজ্য চলছে। এই যে মেগা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে , সরকারের প্রত্যেকটি খাতে ব্যয় বাড়ছে। অথচ বাস্তবের চেয়ে সেই ব্যয় কয়েকগুণ বেশি। ব্যয় বাড়লে কিছু লোকের উপকার হয়, অপরদিকে বড় একটা জনগোষ্ঠীর পকেটের টাকা খরচা হয়। সত্যিকারভাবে এদের দ্বারা সমাজ পরিচালিত হলে তো সম্পদের সুষম বণ্টন হবে না। গরিব লোকের MPC বেশি হলে, ধনী লোকের MPC কম হয়। সুতরাং সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধনী লোকদের কেন্দ্র করেই পরিচিত হতে হবে।সরকারকে বলব আগে সম্পদের সুষম বণ্টন করুন।  রফতানি আয়ের জন্য শুধু গার্মেন্টস নয়, সব ধরনের পণ্যের ওপর জোর দিন।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আগামী নিউজকে বলেছেন, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে গেছে। সব ক্ষেত্রেই একটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এখন নির্দিষ্ট সময়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে বড় বড় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, সেখানে অর্থ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। তাই সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বমন্দার কারণে রফতানির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, আমদানির পরিমাণ কমেছে। নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। তবে সরকারের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক বলয়মুক্ত করতে হবে। রফতানিতে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। অথচ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এমনকি পাকিস্তানও এগিয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে আরো উল্টো পিছিয়ে পড়েছে।’

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ। ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাওয়ায় বেড়েছে রেমিট্যান্স। তবে নেতিবাচক ধারায় রফতানি খাত। এ সময়ে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ কম। তবে রাজস্ব আয় নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে সরকারের।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আর বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
আগামীনিউজ/এমডি/ এনএনআর/আরআর

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে