Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ওরাও মানুষ


আগামী নিউজ | নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২১, ০১:১৮ এএম
ওরাও মানুষ

ছবি; সংগৃহীত

ঢাকাঃ সমগ্র বিশ্ব যখন সার্থকতায়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়,মানবিকতা বির্সজন দিয়ে উত্তেজিত তখন ই মধ্য যুগের বাংলার কবি বড়ু চণ্ডীদাস বিশ্বকে শুনিয়েছিলেন মানবতার অমর কবিতা-‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই’।

সেই সুবাদে জোড়ালো ভাবে বলা যেতেই পারে,না ই হোক নারী অথবা পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ “হিজড়া ওরাও মানুষ”।

কতশত যুগ পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী এখন বড্ড আধুনিক, এখন কেটে গেছে অন্ধকার যুগ।এখন অধিকার নিয়ে লড়াই,নিরাপত্তা নিয়ে বড়াই,মানবধিকার নিয়ে কত গোল টেবিল সেমিনার। এত সবের মাঝে পিছিয়ে নিয়ে নেই বৃহৎতম ব দ্বীপ ‘বাংলাদেশ’। মানতবার সাক্ষর রাখতে গিয়ে -২০১৪ সালের ২৬ শে জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়৷

রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলেও,স্বীকৃতি দেয়নি এই সমাজ,সমাজের এই আমরাই সভ্য মানুষেরা, আমাদের মুখে মানবতার মহান বুলি, আবার অন্তরে আর ব্যবহারে ঝড়ে অমানবিকতার গুলি। এই সমাজে ওরা (হিজড়া)যেনো ভিনগ্রহের আশ্চর্যজনক এক অদ্ভুত প্রাণী, দেখলেই, বাজে মন্তব্য,অশ্লীল বলে গালি,ওরা মানুষ না ওরা হিজড়া ওরা সভ্য সমাজের অসভ্য কীট,ওরা নোংরা,ওরা নষ্ট,ওরা চাদাবাজ,দেহব্যবসাকারী, ওহ হ্যা ওরাই তো শিশুদের ভয়দেখানোর এক জীবন্ত ডায়নী।

কিন্তু ওরা কেনো এমন বেপরোয়া, ওরা কেনো এমন অস্বাভাবিক জীবনের পথিক? নিজেদের একবার প্রস্ন করেন তো! আমরা কতটুকু মানবিক ওদের উপর?

জন্মের পর যখন প্রকাশ পায় নারী অথবা পুরুষ নয় শিশুটি – তখন পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সবখানে তারা কেবল উপহাস,অপমান,অবহেলা আর নিগ্রহের শিকার। .আমরা কি আজ ও এই সমাজে নিশ্চিত করতে পেরেছি হিজড়াদের সমানধিকার যতটা পায় একজন স্বাভাবিক মানুষ? .হিজড়া বলার আগে কখনো ওদের মানুষ ভেবেছি? নাকি ওদের পরিবার নিজেদের সন্তান বলে পরিচয় করিয়ে দেয় সমাজ সংসারে? না-পারিনি,ভাবিনী, দেয়নি।

হিজড়াদের এই মানবেতর জীবনযাপন, বেপরোয়া চলাফেরা, অনৈতিক কাজে লিপ্ততা, অসৎ পথ বেছে নেবার সব পন্থা যেনো এ-ই সমাজ ব্যবস্থা করে দিয়েছে আপন চেতনায় । অথার্ৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমাজের সম্মিলিত অনুদাতারাই হিজড়াদের ‘অভিশপ্ত ‘ করে রেখেছে।

অতত্রব, কঠোর সমালোচনা আলোচলার পর বলা যেতেই পারে, এই অবস্থার জন্যে শুধু হিজড়া গোষ্ঠী দায়ী নয়।দায়ী আমরা,আপনারা,দায়ী সমাজিক কুসংস্কার, দায়ী রাষ্ট্রের সঠিক আইন প্রয়োগের গড়িমসি, দায়ী সঠিক নিয়ম নীতির। অনেক তো হলো,এবার সম্মিলিত ভাবে প্রতিটা সুস্থ মানুষের,সমাজের,রাষ্ট্রের,মানবাধিকার সংস্থা গুলোর, এক হয়ে হিজড়াদের সুন্দর জীবন গড়ার শপথ নেবার। দেশের বাহ্যিক কাঠামো উন্ননের পাশাপাশি, একটি মানবিক জাতি গড়তে হবে, এক একটি মানবিক সমাজ তৈরি করতে হবে,প্রস্তুত করতে হবে সেই সমাজ যে সমাজে আমার আপনার মত হিজড়াও পাবে বেঁচে থাকার সুস্থ অধিকার,ওরাও পাবে মৌলিক চাহিদার সকল ব্যবস্থা, সুশিক্ষায় শিক্ষত হবে প্রতিটি হিজড়া শিশু, শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে অবদান রাখবে সর্বক্ষেত্রে।

সেই সমাজ গড়তে হবে যে সমাজে লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারনে কাউকে অছ্যুৎ করে রাখবেনা।গড়তে হবে সে সমাজ যে সমাজে নারী ও পুরুষের মতই সমান অধিকার ও মর্যাদায় বুকে টেনে নেবে হিজড়াদের। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্থানের মতন কট্টরপন্থী দেশে বৃহন্নলা সংবাদ পাঠক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মডেল কাজের সুযোগ পেয়েছে।

এমন কি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ‘কিন্নর’ মত এমন একজন প্রতিনিধি হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। আর ও এমন উদাহরণ আছে যা থেকে মানবিক শিক্ষা নিয়ে আমাদের ও এগিয়ে আসতে হবে, সুযোগ করে দিতে হবে হিজড়াদের।

সে দিন হয়তো বেশি দূরে নেই আজ যেমন কলম উঠছে হিজড়াদের প্রতি হওয়া সকল অন্যায়,অবিচার,প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত , লাঞ্ছনারর উপর,তেমনি একদিন এই কলম দিয়েই লিখা হবে হিজড়াদের হাজারো সফলতার গল্প।

একসময়ে বাংলাদেশেও হিজড়াদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে,কিন্তু তার আগে আমাদের মানুষ কে মানুষ বলার, মানুষের ইচ্ছেকে সম্মান দেবার সংস্কৃতি প্রয়োজন । পরিশেষে, গড়তে হবে একটি মানবিক উদার সমাজ,যেখানে লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হবে না নারী বা পুরুষ অথবা হিজড়া। সৃষ্টি হবে এমন সামাজিক ব্যবস্থা যেখানে লিঙ্গ পরিচয় ব্যতিরেকেই একজন মানুষ পাবে সমান সুযোগ ও অধিকার।

আগামীনিউজ/এএইচ 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে