Dr. Neem on Daraz
Victory Day

করোনার নতুন ‘স্ট্রেইন’ নিয়ে আতঙ্ক বাংলাদেশে শনাক্তই হয় না!


আগামী নিউজ | প্রভাত আহমেদ প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২১, ০২:১৯ পিএম
করোনার নতুন ‘স্ট্রেইন’ নিয়ে আতঙ্ক  বাংলাদেশে শনাক্তই হয় না!

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ করোনাভাইরাসের একটি বেশি সংক্রামক ধরন বা ‘স্ট্রেইন’ নিয়ে বিশ্বজুড়েই ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন এ ধরনটি প্রথমে শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যে; এরপর তা মেলে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে। পরে পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া, জাপানে ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভারতও গত সপ্তাহে তাদের দেশে নতুন এ ‘স্ট্রেইন’টি পাওয়ার কথা জানিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুক্তরাজ্য থেকে যাওয়া এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের দেহে এ বেশি সংক্রামক ধরনটি পাওয়া গেছে। 

এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তাদের বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। আরও অনেক দেশই একই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এ ধরনটি শনাক্তই করা যায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বেশ ক’জন বিশেষজ্ঞ। 

‘ব্রিটেনে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন আর বাংলাদেশে শনাক্ত নতুন স্ট্রেইনকে কোনোভাবেই এক বলার সুযোগ নেই। তাছাড়া বাংলাদেশে চলমান আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন শনাক্তের সুযোগ বা সক্ষমতাও নেই। নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে আছে কি না, তারচেয়ে বড় বিষয়- চলে আসার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

কোনোভাবে যদি ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেইন বা ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশে চলে আসে তবে তা সংক্রমণের বিস্তার ত্বরাণ্বিত করতে পারে, যেমনটি করছে যুক্তরাজ্যে’, বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে এমনটাই বলেছেন ড. বিজন কুমার শীল ও ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম। অনুজীব বিজ্ঞানী ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. বিজন সিঙ্গাপুরে এবং দ্য ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের সিনিয়র গবেষক ড. আকরাম লন্ডনে অবস্থান করছেন। দু’জনই করোনাভাইরাসের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছেন। 

বাংলাদেশে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন শনাক্তের সুযোগ আছে কি না, সরকারের পরামর্শক কমিটির তিন জন বিশেষজ্ঞ ‘বিষয়টি তাদের জানা নেই’ বলে দায় সেরেছেন। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু জানান, বাংলাদেশে আরটি-পিসিআরে টু-জিন (দুইটি জিন) পরীক্ষা করা হচ্ছে। 

‘বর্তমানে আমরা যে আরটি-পিসিআর ব্যবহার করছি, সেটাতে হয়তো সবগুলো মিউটেশন বা পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারছি না, স্কিপ করে যাচ্ছি। ফলে আমাদের এখানে যেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে, সেভাবে নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। সেটা নিয়েই এখন আমাদের আলোচনা যে, আমাদের এই আরটি-পিসিআর হয়তো পরিবর্তন করতে হবে, নতুন কিট দরকার হবে,’ বলেছেন তিনি। 

অন্যদিকে ড. বিজন ও ড. আকরামের মত, ব্রিটেনে শনাক্ত নতুন স্ট্রেইনের অস্তিত্ব বাংলাদেশে আছে কিনা, তা জানার জন্যে ‘থ্রি-জিন’ (তিনটি জিন এক সঙ্গে) পরীক্ষা করতে হবে। এই থ্রি-জিনের একটি জিন ‘এস-জিন’, যা স্পাইক প্রোটিনকে সনাক্ত করে। বাকি দুটো জিন হচ্ছে ওআরএফ-১এবি এবং এন-জিন। কিন্তু বাংলাদেশের আটি পিসিআরে থ্রি জিন পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত করা যাবে না। 

‘এখন বাংলাদেশেকে জরুরি ভিত্তিতে থ্রি-জিন পরীক্ষার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। প্রতি ১০০টি কোভিড-১৯ পরীক্ষার কমপক্ষে পাঁচটি সিকোয়েন্সিং করতে হবে। এটা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ লন্ডন ও কেন্ট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে। এ অঞ্চলে বহুসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করেন। তারা নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন স্ট্রেইনটি ইতোমধ্যে চলে এসেছে কিনা তাও ভেবে দেখার বিষয়,’ বলেছেন বিজন। 

‘নতুন স্ট্রেইন শনাক্তে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনে প্রথমে থ্রি-জিন আরটি-পিসিআর স্ক্রিনিং ও পরে ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। ‘থ্রি-জিন’ আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় দেখা গেছে ‘যেসব নমুনায় এস-জিন নেগেটিভ আসছে এবং বাকি দুটো জিন পজিটিভ আসছে, সেসব নমুনা সিকোয়েন্সিং করে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই নতুন স্ট্রেইন ভাইরাসটি পাওয়া যাচ্ছে,’ বলেন ড. আকরাম। 

গত ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নতুন স্ট্রেইন শনাক্তের ঘোষণা দেন। সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা এবং রোগাক্রান্ত করার ক্ষমতা বিবেচনায় করোনার এ স্ট্রেইন ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। যদিও এই স্ট্রেইনটি বেশি শক্তিশালী কি না, তা এখনও প্রমাণিত নয়।

আগামীনিউজ/প্রভাত

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে