Dr. Neem on Daraz
Victory Day

ফিরে দেখা: চার নেতা হত্যা মামলা


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২০, ১০:৫৪ এএম
ফিরে দেখা: চার নেতা হত্যা মামলা

ফাইল ছবি

ঢাকাঃ আজ চার নেতা হত্যা তথা জেলা হত্যা দিবস। ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল আজকের দিনে।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়।

পরে দায়ের করা হয় জেলহত্যা মামলা। লালবাগ থানায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায় দেন।

রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদ- দেয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১৫ জনকে। খালাস পান বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর।

বর্তমানে খায়রুজ্জামান কানাডায় অবস্থান করছেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড-প্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে অব্যাহতি দেন। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে হাইকোর্ট বহাল রাখেন আট সেনা কর্মকর্তার সাজা। তারা হলেন, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, আবদুল মাজেদ, মো. কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসর। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করে সরকার।

২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল এ মামলার চূড়ান্ত রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। জেলহত্যা (জাতীয় চার নেতা হত্যা) মামলায় চূড়ান্ত রায়ে পলাতক দুই আসামি এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এ দু’জনের বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের অংশ বাতিল করা হয়েছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত জেলহত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। আপিল বিভাগ রায়ে বলেন, এখানে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই দুই আসামির বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের অংশ বাতিল ও বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখা হলো।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের রায় বহাল তথা দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধার ফাঁসির আরজি জানান। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ওই দু’জনের খালাস প্রার্থনা করেন আসামিপক্ষ।

এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায় নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শুনানিতে বলেছিলেন, যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও দু’জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এই রায় বিকৃত এবং আইনবহির্ভূত ছিল বলে আমরা মনে করি। সেই প্রশ্নেই আমাদের মূল বক্তব্য। এছাড়া চারজন রাজনীতিবিদকে হত্যার ঘটনার পেছনে যে ষড়যন্ত্র ছিল, তাতেও আমরা আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত চাইছি।

বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন রিটা রহমানের স্বামী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা হত্যার আসামি মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন পান রিটা রহমানের স্বামী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন তৎকালীন বিএনপির অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানান রংপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু।

রিটা রহমান বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলেন মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান। তার সঙ্গে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ আরো কয়েকজন খালাস পান’। কারণ, খায়রুজ্জামান ওই সময় দেশে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। শুধু শুধু বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ এ নিয়ে সমালোচনা করছে’।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য ছিল, ‘আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তার নির্দেশেই রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে’। 

ক্ষুব্ধ শহিদুল ইসলাম মিজু হয়ে দেশ রূপান্তর পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘রিটা রহমানের স্বামী বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক আসামি। তা ছাড়া রিটা রহমান কখনো বিএনপি করেননি। এমন বদনাম যার নামে আছে তাকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হলো। অথচ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেনকে মনোনয়ন দিলেও ভালো হতো। তা ছাড়া আমরা এত দিন বিএনপির রাজনীতি করে আসছি। সরকারের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছি। আমাদের মূল্যায়ন না করে দল রিটা রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। এর আগে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হলে প্রথমে দলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করেননি। পরে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে নেতাকর্মীরা মাঠে নামলেও মনেপ্রাণে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি’।

তারপর সেই দিনেই রোববার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় রিটা রহমানকে প্রার্থী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগামীনিউজ/মিথুন 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে